‘কারাগারে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগও মারধর করত’


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেয়ায় আটক করে প্রথমে থানায় নেয়া হতো। সেখান থেকে কারাগারে। এরপর চলত শারীরিক-মানসিক নির্যাতন। দিনের পর দিন উলঙ্গ অবস্থায় থাকতেও বাধ্য করা হতো।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘জুলাই কারাবন্দিদের স্মৃতি’ অনুষ্ঠানে এভাবেই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতনের স্মৃতি তুলে ধরেন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতাসহ অন্যরা।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় কারাগারে তাদের ওপর চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন, যা শুধু তাদের শরীরই ক্ষতবিক্ষত করেনি— ভেঙে দেয় মনোবল, গুঁড়িয়ে দেয় আত্মবিশ্বাস।
জুলাইয়ের স্মৃতি স্মরণ করে মাদ্রাসাশিক্ষার্থী মাহাদি হাসান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই মতিঝিল থানা-পুলিশ তাকে ‘জঙ্গি’ হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে উলঙ্গ করে সাত দিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন করার পর চিকিৎসা দেওয়া হতো না। এতে বন্দি অনেকের হাত-পা পচে যায়।
কারাগারে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগও মারধরে অংশ নিত বলে অভিযোগ করে মাহাদি। নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুকুট মিয়ার অভিজ্ঞতাও একই রকম।
মুকুট জানান, উত্তরা থেকে তুলে নিয়ে বিমানবন্দর থানায় তাকে অনেক মারধর করা হয়। এত বেশি মারধর করা হয় যে, একবার বসলে আর উঠতে পারতেন না। সেই যন্ত্রণা আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম নীরব বলেন, লালবাগ থানায় তিন দিন আটকে রেখে শুধু পানি চাওয়ার অপরাধে তাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়।
বিক্রমপুরের ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী অনন্যা রহমান অর্পা জানান, জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে ২১ জন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং তার নামে সাতটি মামলা দেওয়া হয়।
অভ্যুত্থানের সময় নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রিকশাচালক রাজু বলেন, পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হাতে তুলে দেয়। তারা মারধর করত, ভয় দেখাত। কারাগারে নিয়ে আমাকে কনডেম সেলে রাখা হয়। সেখানে উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানো হতো।
ছাত্রদল নেতা ইব্রাহিম কার্দি জানান, নিউমার্কেট থানায় ওসি নিজে দুই দিন ধরে তাকে বেদম মারধর করেন। রিমান্ডে নিয়ে আরও নির্যাতন চালানো হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, গ্রেপ্তারের চার ঘণ্টা পর তার নামে ককটেল বিস্ফোরণের মামলা দেওয়া হয়। একটি কনডেম সেলে সাত-আটজনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টা আলো-বাতাসহীন ঘরে বন্দি করে রাখা হতো। খাবার শুধু একটা শুকনো রুটি।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, হাসিনার সময় পুরো দেশটাই ছিল কারাগার। প্রতিটি জেলখানায় বানানো হয়েছিল আয়নাঘর। এখন সময় এসেছে, এসব নির্যাতনের তালিকা তৈরি করে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করার।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই দেশ কেউ একা উদ্ধার করেনি। আমরা সবাই একসঙ্গে মাঠে নেমে লড়াই করেছি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা
যতই চ্যালেঞ্জিং হোক, সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানবিস্তারিত পড়ুন

সেই তন্বীর সম্মানে ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে দিলো ছাত্রদল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদকবিস্তারিত পড়ুন

ডাকসুর পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা ছাত্রদলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের চূড়ান্ত প্যানেলবিস্তারিত পড়ুন