ট্রেন থেকে পড়ে এক শিশু হাসপাতালে ৯ মাস, পরিবারের খোঁজ মেলেনি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের এক কোনায় একটি বিছানায় গত ৯ মাস ধরে শুয়ে আছে অজ্ঞাত পরিচয় এক শিশু। তার আনুমানিক বয়স ১১ বছর। এখন পর্যন্ত তার কেউ খোঁজ করেনি। শিশুটি হাটতে ও কথা বলতে পারে না। নাম না জানা এই শিশুকে নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করছেন হাসপাতালের পরিছন্নতাকর্মী উজ্জ্বল মিয়া। শিশুটির নাম দিয়েছেন শরিফ মিয়া।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি জেলার আশুগঞ্জে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় শিশুটি। পরে সদর ইউনিয়নের বৈকণ্ঠপুর এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ২৫ দিন শিশুটি কোমায় ছিল। তারপর ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করে সে। গত ৯ মাস ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে শিশুটি। এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি শিশুটির পরিবারের।
জানা যায়, হাসপাতালে আনার পর থেকে শিশুটির সেবাযত্ন করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী উজ্জ্বল মিয়া। প্রথম দিকে শিশুটি খাবার খেতে পারতো না। এসময় তাকে বিভিন্ন ফলের রস সিরিঞ্জ দিয়ে খাওয়াতেন তিনি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে শিশুটি। বিছানা থেকে উঠে বসতে না পারলেও, মুখে কথা বলার চেষ্টা করে। খেতে পারে ভাত ও ফলমূল।
পরিছন্নতা কর্মী উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘শিশুটিকে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশি সেবাযত্ন করছি। প্রতিদিন তার মলমূত্র পরিষ্কার, গোসল করানো, তেল মালিশ করাসহ সব ধরনের সেবাযত্ন করতে হয়। নাম না জানায় শরিফ মিয়া বলে ডাকি। মাঝে মাঝে মানুষ আসে শিশুটিকে দেখতে। তখন অনেকেই কিছু টাকা দিয়ে যান। না হলে নিজের টাকা দিয়ে শিশুটির তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজেরও তো সন্তান আছে। তাদের পাশাপাশি এই শিশুটিকে লালন পালন করছি। জানি না এই ভাবে কতদিন চালিয়ে যেতে পারবো। সে কার সন্তান তা আমি জানি না। তার প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এর মাঝে লাভক্ষতি খুঁজি না। কিন্তু এখন যখন সে হাসি দেয় আমার বুক আনন্দে ভরে উঠে।’
শিশুটির চিকিৎসায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হাসপাতালের সার্জারি চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন জানান, শিশুটির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। দিনে দিনে তার শারীরিক অবস্থা আরও উন্নতির দিকে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, তিনি সম্প্রতি এই থানায় যোগদান করেছেন। তিনি যোগদানের পর কেউ ছেলেটির খোঁজ করেনি। ছেলেটির পরিবারের সন্ধান পেতে তিনি চেষ্টা করবেন বলে জানান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)