নড়াইলের ‘মধুমতি সেতু’ হয়ে ‘পদ্মা সেতু’ : ঢাকা-বেনাপোলের দূরত্ব কমলো ১০০ কি.মি.
# খুলছে বাণিজ্যের সম্ভাবনার দ্বার
# ঢাকা-বেনাপোলের দূরত্ব কমবে ১০০ কিমি
# দুর্ভোগ কমবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের
নড়াইলে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টের এ সেতু রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গেও দূরত্ব ঘোচাবে। যোগাযোগ সহজ করার পাশাপাশি খুলে দেবে বাণিজ্যে সম্ভাবনার দ্বার।
মধুমতি সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ; যা রাজধানীকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। ২৭ দশমিক ১ মিটার চওড়া সেতুটিতে চারটি উচ্চগতির লেন ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয়টি লেন রয়েছে।
এবার চলবে যানবাহন। ইতোমধ্যে সেতুর পুরো কাজ শেষ। হয়ে গেছে রোড মার্কিংও। সূর্য অস্তমিত যাওয়ার পর সৌর বিদ্যুৎচালিত এই সেতুতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জ্বলে উঠেছে বাতি। ধনুক আকৃতির ১৫০ মিটারের দৃষ্টিনন্দন স্প্যান ছড়াচ্ছে আলোর ঝলক। দৃষ্টিসীমা থেকে সেতু যত দূর যায়, ততই মুগ্ধতা ছড়ায়।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মধুমতি উদ্বোধনের পর উন্মুক্ত হয় যানবাহন চলাচল।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ ‘মধুমতি সেতু’ নির্মিত হয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত। এটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে। সেতুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবে। কারণ সেতুটি কালনাঘাট থেকে রাজধানী পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব কমিয়ে দেবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কমসময়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও কমিয়ে দেবে। এ সেতু হয়ে ঢাকা থেকে বেনাপোলের দূরত্ব হবে মাত্র ১৩৯ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা ও নড়াইল জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া উপজেলার মধ্যে মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ অঞ্চলের মানুষ এখন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ব্যবহার করে। যার অর্থ তারা যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে আরও ১০০ কিলোমিটার বেশি ভ্রমণ করেন। সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ, যা রাজধানীকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
যেভাবে সেতুর নাম ‘কালনা’ থেকে ‘মধুমতি’:
কালনা পয়েন্টে হওয়া সেতুটি ‘কালনা সেতু’ নামে পরিচিত। পরে এটি মধুমতী নদীর নামেই নামকরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস রানা জানিয়েছেন, কালনা সেতু নামেই এটি পরিচিতি পেয়েছে। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই সেতুর নাম ‘মধুমতি সেতু’ রেখেছেন।
সহজ হবে যোগাযোগ, চাঙা হবে অর্থনীতি :
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্পের পরিচালক শ্যামল ভট্টচার্য বলেন, আপনারা এরইমধ্যে দেখেছেন, সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের পর রাত ১২টায় জনসাধারণের চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এর মধ্যদিয়ে ঢাকা থেকে নড়াইলের দূরত্ব কমে আসবে ৮৬ কিলোমিটার।
তিনি বলেন, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্কে ১৭টি সেতু নেওয়া হয়েছিল। এ সেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সুফল এরইমধ্যে পেয়েছি। কিন্তু সেই সুফল পুরোপুরি পেতে নড়াইল, যশোরসহ এ অঞ্চলের যেসব স্থলবন্দর রয়েছে বা অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের জন্য এ মধুমতি সেতুর কানেকশন জরুরি ছিল। সোমবার সেই স্বপ্নপূরণ হচ্ছে।
ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এ অঞ্চলের সাব-রিজিনিওয়াল কানেকটিভিটি মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে।’
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙা করবে এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যাপকভাবে সহজ করবে।
বেনাপোল স্থলবন্দর, মোংলা সমুদ্রবন্দর ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বাড়বে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘এ অঞ্চলের বাসিন্দারা একদিনের মধ্যে ঢাকায় তাদের কাজ শেষ করে ঘরে ফিরতে পারবেন। সেতুটি চালু হলে কালনা ফেরিঘাট হয়ে যেতে তাদের দীর্ঘদিনের যে ভোগান্তি, তার অবসান হলো।
নড়াইল জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে নড়াইলের সুলতান মঞ্চে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কালনা পয়েন্টে একটি সেতু হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সোমবার পূরণ হলো। সেজন্য নড়াইলবাসী তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব জেলার মানুষ শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃত ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হবে। এ এলাকার সব স্টেকহোল্ডার, নদীর দুপাড়ের অগণিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, যারা ছোট-খাটো ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাসহ সকলেই মধুমতি সেতু দিয়ে তাদের জীবনমান পরিবর্তন হবে। ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে নড়াইল হাব হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনবিশিষ্ট সেতু বাংলাদেশে এটিই প্রথম।
প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে এটি উপহার হিসেবে দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)