বাংলা ভাষার দুষণ রোধ করতেই হবে
ভাষা মানুষের নিজস্ব সত্তা, অমূল্য সম্পদ। মানুষ জীবনের প্রতি মুহুর্তে স্পন্দন ও প্রবাহের মধ্যদিয়ে তার জীবিত ও জাগ্রত সত্তাকে অস্তিত্বময় ও প্রাণবন্ত করতে ভাষার কোনো বিকল্প খুঁজে না। মানুষ বৈচিত্র্যতার সমাহারে নান্দনিকতার উন্মেষ ঘটাতে অস্তিত্ব, অবস্থান, গতি-প্রকৃতি, শক্তির সমন্বয় ও রচনাকে সমৃদ্ধ করে ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে। ভাষার কারণে দেহে শক্তির সঞ্চার হয়, অঙ্গ-প্রতঙ্গ সঞ্চালিত হয়, মস্তিস্ক কোটর, চেতনা-চৈতন্য, স্মৃতিকোষ, অনুভূতির ক্রিয়া সম্পন্নতায় বোধগম্যের সৃষ্টি হয়।
সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলন ও বাংলা ভাষার দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বাংলা ভাষার প্রচলন ছোট হয়ে আসছে ও দূষণের মাত্রা বাড়ছে। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি ও ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন বিষয়ে এবং বেতার ও টেলিভিশনে বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ ও দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের রুলসহ নির্দেশনা রয়েছে। বেতার ও টেলিভিশনে বিকৃত উচ্চারণ, ভাষা ব্যঙ্গ ও দূষণ করে অনুষ্ঠান প্রচার না করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং একটি রুল জারি করা হয়, কিন্তু রুলের নিষ্পত্তি হয়নি আজও।
দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষাতেই কথা ও কাজ চালিয়ে থাকে। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও বাংলা সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু দাফতরিক যোগাযোগ এবং বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের লৈখিক তৎপরতায় ইংরেজি চলছে প্রধানভাবে। এর একটি অন্যতম কারণ ঔপনিবেশিক আমলের ভিত্তিমূলে গড়ে ওঠা আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠির মানসিকতা। আমরা দেখি, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানীর মতো প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও বুলগেরিয়া, তুরস্কের মতো কম প্রভাবশালী রাষ্ট্র প্রয়োজন ছাড়া ইংরেজি ব্যবহার করে না। তবে ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন ও বিদেশ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রক্ত¯œাত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা প্রয়োজ্য হবে কেন? বাংলা ভাষার নান্দনিক আবেগী শব্দ, গৌরব, বিজ্ঞানসম্মত রচনা শৈলী এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ইতিহাসও এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ও চর্চার বিরোধী নয়। আমাদের উন্নতি করতে হলে ইংরেজি ভাষা চর্চা ও উন্নতভাবে শিখতে হবে। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে অফিসের ভাষা, ইংরেজি ব্যতীত শিক্ষার ভাষা, সাইন বোর্ড, বিল বোর্ডের ভাষা, পত্র যোগাযোগ, সম্প্রচার গণমাধ্যমের ভাষা অবশ্যই বাংলা হতে হবে।
ভাষার জন্য আন্দোলন, সংগ্রামের ফসল হলো বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হয়নি। শিক্ষার ক্ষেত্রে, গবেষণার ক্ষেত্রে, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, গুটিকয়েক গণমাধ্যমে প্রচার করা হয় বাংলিশ (বাংলা মিশ্রিত ইংলিশ)। নাটক, টেলিভিশন, এফএম রেডিও যেন পাল্লা দিয়ে ভাষার বিকৃতি ঘটাচ্ছে। ‘প্যারা’ শব্দটি নাটক- সিনেমায় প্রচলিত হলেও বাংলা শব্দভান্ডারে কোথায় আছে তা কেউ বলতে পারছে না। ফলে আমাদের আগামী প্রজন্ম বিকৃতি শব্দের উচ্চারণ ও ভাষা শিখছে। প্রতিদিনই টেলিভিশন, এফএম রেডিওতে শব্দগুলো বিকৃতিভাবে উপস্থাপন করছে। কোন শব্দের বানান ঠিক আছে কিনা দেখতে পত্রিকা দেখা হয়, বর্তমান উচ্চারণ ঠিক আছে কিনা টেলিভিশন-রেডিওতে শোনা হয়। কিন্তু যে ভাবে শব্দ বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো সম্প্রচার মাধ্যমের বিরুদ্ধে মানুষকে রাজপথে নামতে হবে। ভাষা প্রচলন ও বাংলা ভাষার দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বাংলা ভাষার প্রচলন ছোট হয়ে আসছে ও দূষণের মাত্রা বাড়ছে। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি ও ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রæয়ারি সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন বিষয়ে এবং বেতার ও টেলিভিশনে বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ ও দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের রুলসহ নির্দেশনা রয়েছে। বেতার ও টেলিভিশনে বিকৃত উচ্চারণ, ভাষা ব্যঙ্গ ও দূষণ করে অনুষ্ঠান প্রচার না করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং একটি রুল জারি করা হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে আছে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে ১৯৮৭ সালে পাশ হয় আইন। বাঙালির মা, মাটি ও মানুষের সাথে মিশে আছে বাংলা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি পিচ ঢালা কালো রাজপথ লাল বর্ণ ধারণ করে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য। বিশ্বের ১৯৫টি রাষ্ট্র বাংলাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে। ২১ ফ্রেব্রæয়ারিতে ভাষাপ্রীতি আর পহেলা বৈশাখে একদিনের বাঙালি থেকেই যাচ্ছি আমরা বছরের পর বছর।
ভাষার বিকৃতি রোধে দেশের অভ্যন্তরে অফিসের ভাষা, ইংরেজি ব্যতীত শিক্ষার ভাষা, সাইন বোর্ড, বিল বোর্ডের ভাষা, পত্র যোগাযোগ, গণমাধ্যমের ভাষা অবশ্যই শুদ্ধ বাংলায় হতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের আরো দায়িত্বশীল ও যতœবান হতে হবে। তবে মাতৃভাষা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্য মন্ত্রণালয়কেই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। সমাজের দায়িত্বশীলদের আরো যতœবান ও ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকতে হবে। শুধুমাত্র ২১ ফেব্রæয়ারির ভাষাপ্রীতি ভুলে ৩৬৫ দিনই ভাষাপ্রীতি থাকতে হবে।
লেখক: আহবায়ক, স্বপ্নসিঁড়ি, সাতক্ষীরা। ০১৭৭২-৮৭৬৭৪৪ (গ্রাম- উত্তর কাটিয়া, পোষ্ট, থানা ও জেলা- সাতক্ষীরা)
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)