সাতক্ষীরায় থমকে গেছে সেই ভয়াল বোমা হামলা মামলার কার্যক্রম!


থমকে গেছে দেশব্যাপী বোমা হামলার অংশ হিসেবে সাতক্ষীরারও পাঁচটি স্থানে বোমা হামলা চালানো ৬ মামলার কার্যক্রম।
আসামীরা একাধিক মামলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলখানায় অবস্থান করছে। ধার্য্য দিনে তাদেরকে আদালতে হাজির না করাতে পারায় সাক্ষীরা বার বার ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে স্পর্শকাতর এসব মামলার বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর থানা সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী ৬৩টি জেলায় প্রায় একইসময়ে বোমা হামলার অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা শহরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বারান্দায়, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে, বাস টার্মিনালে, খুলনা রোড়ের মোড়ে ও জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় (পাঁচটি স্থানে) বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা শহরতলী ইসলামপুর চরের পকেটমার রওশন আলীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ একই এলাকার জেএমবি জঙ্গি নাসিরউদ্দিন দফাদারকে ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর পুকুরে গোসল করার সময় গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছার মনিরুজ্জামান মুন্না, আনিসুর রহমান খোকন, মনোয়ার হোসেন উজ্জল, কাসেমপুুররের গিয়াসউদ্দিন, খড়িয়াবিলের মোঃ বেলাল হোসেন, মোঃ আসাদুল হক, খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতরখালি গ্রামের মাহবুবুর রহমান লিটনসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আশাশুনি উপজেলার কুল্যা গ্রামের নূর আলী মেম্বারসহ আরও তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এসব ঘটনায় পরদিন ১৮ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানায় যথাক্রমে সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন উপপরিদর্শক একে নজিবুল্লাহ, জসিমউদ্দিন, আবু তাহের, হযরত আলী ও সফিকুল ইসলাম পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করেন।
ওই সালের পহেলা অক্টোবর সাতক্ষীরা সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম হোসেন বাদি হয়ে নাসিরউদ্দিন দফাদারসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার পুলিশের হাত ঘুরে সিআইডি‘র কাছে ন্যস্ত হয়। সাত মাস পর সিআইডি‘র সহকারি পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুল ইসলাম ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ প্রতিটি মামলায় ১৯ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদালত সুত্র জানা যায়, ২০০৬ সালের ৬ জুন সাতক্ষীরা থেকে এ ছয়টি মামলা খুলনার দ্রুত বিচার টাইব্যুনাল আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত ২০০৭ সালের ২৫ জুন বিচারের জন্য পাঁচটি মামলা ফেরত পাঠানো হয়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে এ পাঁচটি মামলার সাক্ষী শুরু হয়। এ পর্যন্ত সাতক্ষীরা শহরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বারান্দায় বোমা হামলা মামলায় ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের, শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের বোমা হামলা মামলায় ৩৬ জনের মধ্যে ১১ জনের, বাস টার্মিনালের বোমা হামলা মামলায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতোমধ্যে ১২ জনের, খুলনা রোড মোড়ের বোমা হামলা মামলায় ৩৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতোমধ্যে ১১ জনের ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বোমা হামলা মামলায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতোমধ্যে ১১ জনের ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলায় (জিআর- ৮৮৭/০৫) ১১জনের সাক্ষী শেষ হয়েছে।
সাতক্ষীরার ছয়টি মামলার আসামি জেএমবি জঙ্গী সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা গ্রামের নূর আলী মেম্বার, শহরের ইটেগাছা গ্রামের মনিরুজ্জামান মুন্না, খড়িবিলা গ্রামের মোঃ বেলাল হোসেন, ইসমাইল হোসেন, মোঃ আসাদুল হক, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাসেমপুর গ্রামের গিয়াসউদ্দিন, আখড়াখোলা গ্রামের সাইফউদ্দিন, খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার সুতারখালি গ্রামের মাহবুবুর রহমান লিটন ও মৃতদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হোসেন ওরফে রাসেল বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাকাল ইসলামপুর চর এলাকার মোঃ নাসিরউদ্দিন গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল পৌনে চারটায় মস্তিকে রক্তক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে মারা যান।
ছয়টি মামলার অভিযোগপত্রভূক্ত ১৯ জন আসামির মধ্যে উপরোক্ত নয়জন আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ তলুইগাছা গ্রামের মমতাজউদ্দিন, সাতানি গ্রামের মোঃ আবুল খায়ের, পাথরঘাটা গ্রামের ফকরউ্দ্দিন আল রাজী ও কলারোয়া উপজেলার পুটুনি গ্রামের নাঈমউদ্দিন (চারজন) পালাতক রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও আনিসুর রহমান খোকন ২০১১ সালের জুনে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়। এর কিছুদিন পর তারা আবারও গ্রেফতার হলেও ফের জামিন লাভ করে।
এছাড়া, জেএমবি শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুর ইসলাম ওরফে বাংলাভাই ও সামরিক প্রধান আতাউর রহমান সানির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু করা হয়েছে।
এদিকে, দেশ জুড়ে জেএমবি’র বোমা হামলা মামলায় গ্রেফতারকৃত কয়েকজন আসামীর পরিবারের সদস্যরা জানান, ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তাদের স্বজনরা জেলে রয়েছেন। দেশের বিভিন্ন থানায় এ ধরণের মামলা থাকায় কোন মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এমনকি তাদের জামিনও মিলছে না। উপরন্তু তারা দেশের কোন কারাগারে অবস্থান করছে তা জানতে না পেরে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে।
জেএমবি মামলা সংক্রান্ত সরকারি দায়িত্বে থাকা সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ সাংবাদিকদের জানান, সাতক্ষীরায় জেএমবি’র বোমা হামলা মামলার আসামীরা বিভিন্ন মামলায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করছে। আদালত ও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের ধার্য দিনে হাজির করালেও সকল কারাগারে থাকা আসামীদের আদালতে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সাক্ষী গ্রহণ না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
বর্তমানে সাতক্ষীরার অতিরিক্তি জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক শরিফুল ইসলামের আদালতে এসব মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
