২৮ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৪ হাজার কোটি টাকা
ছাত্র জনতার আন্দোলন কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছিল রেমিট্যান্স ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রেমিট্যান্স সাটডাউন ঘোষণা করেছিল প্রবাসীরা। ফলে কমেছিল রেমিট্যান্সপ্রবাহ। তবে আন্দোলন সফল হলে তথা সরকার পতনের পরে বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স প্রবাহ। আগস্ট মাসের প্রথম ২৮ দিনে দেশে বৈধপথে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসছে ২০৭ কোটি ডলার। টাকার হিসেবে যা ২৪ হাজার কোটি। গত বছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ডলার। সে হিসেবে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। গত জুলাই মাসে ১৯১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস (২০২৩ সালের) জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বর ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে এসেছে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার, জুলাই মাসে আসে ১৯১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
এদিকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ায় বাড়ছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯ কোটি বা ২০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাই মাসের একই সময়ে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে সামান্য কিছু বেড়েছে রিজার্ভ।
তবে বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব আছে, যা শুধু আইএমএফকে (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে নিট বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নেমেছে ১৫ বিলিয়নের ঘরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী- চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছায়। ওই বছর ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে। এরপর তা বেড়ে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট। ওইদিন রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে উঠে যায়। এরপর ডলার সংকটে গত বছর থেকে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।
সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। প্রকৃত রিজার্ভে সেই মানদণ্ড হিমসিম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ। মূলত প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়ে থাকে, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যুক্ত হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।
সূত্র:কালবেলা
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)