অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ার কয়েক মিনিটেই মৃত্যু
খুলনা মেডিকেলে চাঞ্চল্যকর ঘটনা, দুদকের অভিযানে বেরিয়ে এলো দালাল-অব্যবস্থাপনার চিত্র


মেহেদী হাসান, খুলনা: খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-১-এর ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো সাইফুল ইসলামের জীবন। রবিবার ঘটে যাওয়া এ মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও হতবাক করা প্রশ্ন—জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সেবার মাঝপথেই কীভাবে একজন ক্লিনার নির্দ্বিধায় রোগীর অক্সিজেন খুলে নিতে পারে?
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম কিডনি জটিলতা নিয়ে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসকরা অক্সিজেন সাপোর্টে রেখেছিলেন তাকে। রবিবার হঠাৎই ওয়ার্ডে কর্মরত আউটসোর্সিং ক্লিনার আব্দুল জব্বার রোগীর সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়ে আরেকজন রোগীকে দেন। কয়েক মিনিট পরই শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে করতে সাইফুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এই অমানবিক ঘটনাটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে উপস্থিত রোগীর স্বজনরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন। এক স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডাক্তাররা যদি প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেন দেন, তবে একজন ক্লিনারের এত ক্ষমতা কোথা থেকে আসে যে সে রোগীর অক্সিজেন খুলে নেবে? এ মৃত্যু হত্যার চেয়ে কম কিছু নয়।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম হঠাৎ অভিযান চালায় হাসপাতালে। তারা সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে এবং অভিযুক্ত ক্লিনার আব্দুল জব্বারকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়।
একই অভিযানে আরও দুটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে বিভিন্ন রোগীকে ফাঁদে ফেলে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দুই নারী দালালকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাসপাতালের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু অক্সিজেন মৃত্যুই নয়, হাসপাতালের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে দালাল চক্র সক্রিয়। অসহায় রোগীদের টার্গেট করে তাদের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হয়, যেখানে রোগীর পরিবার থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করে এভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অদৃশ্য “মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসা।”
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক পরিচালক ডা. মো. আইনুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, অক্সিজেন মাস্ক খুলে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাটি ভয়াবহ অনিয়ম। তিনি বলেন, একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ বাদ দিয়ে অক্সিজেন খোলা বা পড়ানোর কাজ করা অপরাধ। আমি বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। পাশাপাশি দালালচক্র নিয়ন্ত্রণেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একজন সাধারণ রোগীর মৃত্যু এভাবে অক্সিজেন সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে হলে, তা শুধু চিকিৎসার গাফিলতি নয়, বরং একটি গোটা ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। কেনো একজন ক্লিনার এমন দায়িত্ব নিতে পারলো? হাসপাতালের নজরদারি কোথায় ছিল? আর কতজন রোগী একইভাবে অবহেলার শিকার হচ্ছেন? এই প্রশ্নগুলো এখন ঘুরপাক খাচ্ছে নিহত রোগীর পরিবার, স্বজন এবং হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের মনে।
দুদক জানিয়েছে, হাসপাতালের ভেতরে থাকা বিভিন্ন অনিয়ম, দালালচক্র এবং আউটসোর্সিং ব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে তাদের তদন্ত অব্যাহত থাকবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

মৃত্যুর কাছে হার মানলেন ফায়ার ফাইটার শামীম
মৃত্যুর কাছে হার মেনে চলে গেলেন ফায়ার ফাইটার শামীম ফায়ার ফাইটার শামীমবিস্তারিত পড়ুন

এনসিপির মার্কা শাপলাই হতে হবে: সারজিস
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, তালিকায় না থাকায় শাপলাবিস্তারিত পড়ুন

বিএনপির কাছে কত আসন চেয়েছে জামায়াত, জানালেন মির্জা ফখরুল
বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বর্তমানে দলটির টানাপোড়েন চলছে। নির্বাচন সামনেবিস্তারিত পড়ুন