ধানের অপ্রতিরোধ্য বিপিবি রোগে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা
আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে নিত্য নতুন রোগ ব্যধিতে জর্জরিত কৃষকের নানান ফসল। অনেকটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাচ্ছে এসব রোগ ও পোকা মাকড় গুলো।
বিগত কয়েকবছরে নতুন নতুন এসব রোগ ও পোকার আক্রমণ রোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
এরই মাঝে বিগত কয়েকবছর ধরে ধানের নতুন আতংক হয়ে সামনে এসেছে ব্যাকটেরিয়াল পেনিক্যাল ব্লাইট (বিপিবি)। বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির কোন ব্যাক্টেরিয়ানাশক দিয়ে সঠিক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছেনা বলে দাবী স্থানীয় কৃষকদের।
লক্ষণ গুলো কি ?
সরেজমিনে মাঠ পরিদর্শনে ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় , ধানের শীষ বের হওয়ার সময় ও দানা গঠনের সময় কোন পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়। শিষের ছোট ছোট ধান গুলো সঠিকভাবে দানা বাধতে পারে না এবং চিটা হয়ে যায় তবে শিষের সকল দানা গুলো চিটা হয় না। আক্রান্ত ধানের দানা গুলো ধূসর/কাল/গোলাপী রং ধারণ করে।
ধানের শীষ দুধ আসার আগেই আংশিক বা অধিকাংশ চিটা হয়, কিন্তু মাজরায় আক্রান্তের মতো সাদা শীষ হয় না, এমনকি টান দিলে মাজরায় কাটা সাদা শীষের মত সহজে উঠেও আসে না। গান্ধি পোকায় ধানের দুধ অবস্থায় আক্রমণ করলে ধানে যেমন কালচে দাগ পড়ে, ক্ষতির লক্ষণ কিছুটা তেমনই তবে এতে ছিদ্র থাকে না। ঝড়ো বা ঠান্ডা ও গরম আবহাওয়ায় এই রোগ ছড়ায়।
ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট কিভাবে ছড়ায়?
কৃষি বিভাগ বলছে, ব্যাকটেরিয়াগুলো ধান গাছের পাতা এবং খোলে অবস্থান করে এবং তারা প্রতিকুল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। ধানগাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে ব্যকটেরিয়াগুলো গাছের উপরের দিকে উঠতে থাকে। ব্যাকটেরিয়াটি ধানের শিষ বের হওয়ার সাথে সাথে সেখানে আক্রমন করে। ফুলের রেনূ গুলো নষ্ট করে ফলে ধানের দানা গুলো চিটাতে পরিনত হয়। ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট সাধারণত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়াতে বেশি ছড়ায়। যখন দিনের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপরে এবং রাতের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে এরকম আবহাওয়া এই রোগ ছড়ানোর জন্য উপযুক্ত। এছাড়া অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ব্যবহার এই রোগের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
এ রোগ আসে কোথা থেকে ?
কৃষি বিভাগ বলছে, ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট একটি বীজ বাহিত রোগ। রোগ আক্রান্ত বীজ হতে চারা উৎপাদন করে আবাদ করলে তা নিয়ন্ত্রনের বাস্তবিক কোন উপায় নেই।তাই রোগ আক্রান্ত বীজ হতে চারা উৎপাদন করা যাবে না।
তাহলে সমাধান কিসে?
ব্যাকটেরিয়াল পেনিকেল ব্লাইট রোগের দমন ব্যবস্থাপনা:
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, বীজ বপনের পূর্বে ৫ থেকে ৬ দিন কড়া রোদে বীজ শুকিয়ে নেওয়া।আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি যেমন বীজ বপনের পূর্বে তা শোধন করা,আদর্শ বীজতলায় বীজ বপন করে সঠিক বয়সের চারা রোপন ও রোপনের সময় লাইন ও লোগো পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করা।রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষাবাদ করা। অক্সালিনিক এসিড দিয়ে বীজ শোধন করা। (বাংলাদেশে এ জাতীয় বালাইনাশক বাজারে নেই। জমিতে জৈব সার(যেমন-ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট, কুইক কম্পোস্ট, খামারজাত সার, মুরগির লিটার ইত্যাদি) ব্যবহার করা।
অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা।এ সারের প্রয়োগ কমিয়ে সুষম সার ব্যবহার করা।জমিতে পর্যাপ্ত পটাশ সার এর প্রয়োগ করতে হবে যা এ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে।
রাসায়নিক দমনের মধ্য আছে :
৬০ গ্রাম এমওপি + ২.৫ গ্রাম চিলেটেড দস্তা + ৬০ গ্রাম থিওভিট/কুমুলাস ডি এফ বা ৮০% সালফার আছে এমন কোনো সালফার পণ্য ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে কাইচ থোড় অবস্থায় শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
ব্যাকটেরিসাইড- কাসুগামাইসিন + বিসমারথিওজল (কিমিয়া, ব্যাকটোবান, ব্যাকট্রল, টিমসেন, সানপোমা, ব্যাকটাফ ইত্যাদি) অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে।
কপারঅক্সিক্লোরাইড (কপার ব্লু) , কাসুগামাইসিন (কাসুমিন ২%) , বিসমার্থিওজল (ব্যকট্রোবান), ক্লোরোআইসোব্রমাইন সায়ানুরিক এসিড (ব্যকটাফ) (বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়) এ জাতীয় বালাইনাশক প্রয়োগ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।
রেজাল্ট কতটুকু?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগের পরে ওষুধ দিয়ে খুব বেশি ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে দাবী স্থানীয় কৃষকদের। সেক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ই উত্তম বলেও দাবী তাদের।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)