এ যেন শুধু সেতু নয় ‘স্বপ্ন ছুঁয়েছে প্রমত্ত পদ্মার এপার-ওপার’
এক মহাকর্মযজ্ঞের সাক্ষী হয়ে অবশেষে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শেষ স্প্যান স্থাপনের মধ্যদিয়ে প্রমত্ত পদ্মা সেতু স্বপ্ন ছুঁয়েছে এপার-ওপার। এই সেতুতে শেষ স্প্যান বসানোর পর প্রমত্ত পদ্মার দুই পাড়ে রচিত হলো সেতুবন্ধ। এ যেন প্রমত্ত পদ্মার বিশ্বজয়। পদ্মা সেতুর ৪১তম অর্থাৎ শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামোর মূল অংশ দৃশ্যমান হলো। এ উপলক্ষে সেতু এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দেশের অন্যত্রও মানুষের মধ্যে দেখা দেয় উদ্দীপনা। এ সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, পদ্মার তীব্র স্রোত, এমনকি চলমান মহামারিও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেতু নির্মাণের পথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী উদ্যোগে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখন শুধু অপেক্ষা দেশের বৃহত্তম এই সেতুর স্প্যানের ওপর গাড়ি ও রেল চলাচলের স্ল্যাব বসানো।এই সেতুর উপর স্লাব বসানো ও রেল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে। সরকারি মহল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। এরই মধ্যে ভায়াডাক্ট, অর্থাৎ মূল নদীর বাইরে পিলার ও স্প্যান বসানো, সংযোগ সড়ক, নদীশাসনের কাজ শেষ হয়েছে। এই সেতু এবং সেতুর উপর রেল সেতু নির্মূাণ কাজ শেষ হলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়েত যেমন সহজ সুগম হতে তেমনি অর্থনৈতিক ভাবে দেশের জিডিপিতে যুক্ত হবে উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
মূলত পদ্মা সেতুর এই অগ্রগতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সরকারের এবং বাংলাদেশের আস্থা, অর্থনৈতিক, কারিগরি, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও সাহসের প্রতীক। বাংলাদেশ ও বীর বাঙ্গালী চাইলে সব কিছু করতে পারে, পারে অসাধ্য সাধন করতে- পদ্মা সেতু তারই বড় প্রমাণ। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত বিজয়ের মাসে সেতুর স্প্যান স্থাপন সম্পন্ন করে প্রমত্ত পদ্মা জয়ের মধ্যদিয়ে বিশ্বে আরেকটি বিজয় নিশান উড়ালো বাঙ্গালী জাতি। বিজয়ের মাসে পদ্মা সেতুর স্প্যান স্থাপন সম্পন্ন করে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাঙ্গালীকে আরেকটি উপহার দিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শুধু পদ্মা সেতু নয়, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা অর্জন, খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে উন্নীত তথা বাঙ্গালীর ক্ষুধা জয়, নারীর ক্ষতায়ন, নারী শিক্ষার হার সস্তোষজনক অবস্থানে উন্নীত, নারীও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, নিন্ম আয়ের দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তর, মানুষের গড় আয়ু, গড় আয় (মাথা পিছু) ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ বৃদ্ধি, রেমিটেন্স বৃদ্ধি, সকলের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দ্বারপ্রান্তে উপনীত,আগামী জুনের মধ্যে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর। অনুরুপ মহাকাশে আমাদের জাতীয় পতাকা খচিত ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপন ও বিচরনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়সহ বাঙ্গালীর সব বড় অর্জন অর্জিত হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই। করোনা কালে দেশের অর্থনীতি সকল সূচকে উর্ধমূখী অবস্থান পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে অনেক গুণ এগিয়েছে মর্মে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। করোনা কালেও মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার চাকা সচল রাখতে পরায় একই ভাবে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের প্রশংসা করছে, প্রশংসা করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
পদ্মা সেতুর নির্মাণে প্রাসঙ্গিক যে, পদ্মা সেতু কেবল দেশের বৃহত্তম যোগাযোগ স্থাপনা নয়; বরং বাংলাদেশের সাহস, দক্ষতা, কূটনৈতিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রমত্ত পদ্মার বুকে সগৌরবে মাথা তুলে এই সেতু বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও সাহসের জয়গান গাইছে। বস্তুত নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী নিয়ে কবিতা রয়েছে অসংখ্য; খোদ পদ্মা নদী নিয়েও কবিতা ও সংগীত কম নেই। সে তুলনায় সেতু নিয়ে কবিতা বিরল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে শত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম,সফল হয়েছেন, তা তাঁর নেতৃত্বের দৃঢ়তা,প্রতিশ্রুতি,একাগ্রতার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম পদ্মার ঢেউকে তার শূন্য হৃদয়-পদ্ম নিয়ে যেতে বলেছিলেন। শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন, পদ্মা নদী বাঙালির শূন্য হৃদয়ের বাহন নয়; বরং বুকভরা গর্ব ও চোখভরা স্বপ্নের এক জীবন্ত সাক্ষী। আমরা দেখতে পাচ্ছি, পদ্মা নদীর সেই উদার নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে পদ্মা সেতুর গৌরবময় কাঠামো। এও যেন এক অনবদ্য কবিতা। আর এই কবিতা রচয়িতার নাম- শেখ হাসিনা।
করোনা মহামারীর প্রথম ঢেউ সফল ভাবে মোকাবিলার পর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে আগাচ্ছে সরকার। এ পর্যায়ে মানুষের জীবনের সুরক্ষা এবং জীবিকার চাকাকে সচল ও গতিশীল রাখতে প্রথম পর্যায়ে একলাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ার পার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। পদ্মা সেতু নিয়ে এই নিবন্ধের সাথে প্রাসঙ্গিক বলেই উপরোক্ত তথ্যগুলো এখানে উল্লেখ করা হলো। প্রসঙ্গতঃ স্বপ্নের এই সেতুতে প্রথম স্প্যান বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। আর ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্ভরপদ্মায় বসল সর্বশেষ স্প্যান। ৪১টি স্প্যান বসাতে তিন বছর দুই মাস ১০ দিন সময় লাগল। এই স্প্যানই সেতুর মূল অবকাঠামো। পিলারের ওপর বসানো হয়েছে এগুলো। এর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন, আর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। যানবাহন ও ট্রেন চলাচলের রাস্তা নির্মাণের জন্য স্প্যানের ওপরে ও নিচে স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। এসব স্প্যান চীনে তৈরি করে জাহাজে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছে।
৪২টি পিলারের সঙ্গে স্প্যানগুলো জোড়া দেওয়ার মাধ্যমে পুরো সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। মূল পদ্মা সেতুর, অর্থাৎ নদীর অংশের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ৯ কিলোমিটারের কিছু বেশি। নদীর দু’পাশের অংশের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে যানবাহন চলাচলের পথটি হবে ২২ মিটার চওড়া, চার লেনের। মাঝখানে থাকবে সড়ক বিভাজক। স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুতে একটিই রেললাইন থাকবে। তবে এর ওপর দিয়ে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ দুই ধরনের ট্রেন চলাচলেরই ব্যবস্থা থাকবে। ভায়াডাক্টে এসে যানবাহন ও ট্রেনের পথ আলাদা হয়ে মাটিতে মিশেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের পেছনের ইতিহাস হচ্ছে, আজ থেকে ২২ বছর আাগে ১৯৯৮ সালে সরকারের তহবিলে প্রথম এই সেতুর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এরপর অর্থায়নে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক; কিন্তু কিছুদিন পরই বিপত্তি দেখা দেয়। এতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সংস্থাটি প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। ফলে সেতুর ভবিষ্যৎ শঙ্কায় পড়ে যায়। এরপর সরকার এই সেতু নির্মাণে বিকল্প অর্থায়নের জন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে। এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক পুনরায় ফিরে আসে অর্থায়নের জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এর বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। প্রসঙ্গত:স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পে কল্পিত ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে’র দুঃস্বপ্নেরও অবসান হয়েছে। ওই অভিযোগ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কানাডার একটি আদালতে খারিজ হয়ে যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্পে মূল অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পর সরকার যদিও নিজস্ব অর্থায়নে এরই মধ্যে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করেছিল, ওই অভিযোগ বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে একটি প্রশ্নচিহ্ন হয়ে থেকে গিয়েছিল। যদিও দুর্নীতি দমন কমিশনও প্রায় দুই বছর অনুসন্ধান, তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযোগটি অমূলক আখ্যাদিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। শেষ পর্যন্ত যখন কানাডার আদালতও অভিযোগটিকে গালগল্প হিসেবে উড়িয়ে দেয়, তখন বাকি থাকে শুধু শাপে বর হওয়া সক্ষমতার রূপকথা। শেখ হাসিনা দুরন্ত পদ্মার এলোচুলে বেণি গেঁথে দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রকৌশলীরা বলেছেন, পদ্মার বুকে সেতু গড়ে তোলার ধারণাটিই ছিল বিস্ময়কর। কেননা, পদ্মার নদীতলের মাটি এতই পরিবর্তনশীল যে, মুহূর্তে যে কোনো স্থান থেকে যে পরিমাণ মাটি সরে যায়, তাতে ২১ তলা উঁচু ভবনের উচ্চতার সমপরিমাণ গভীরতার খাদ তৈরি হয়। এমন একটি স্থানে পাইলিংয়ের মাধ্যমে খুঁটি স্থাপনের মতো বিশাল এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীদের। বিশেষ পদ্ধতিতে শেষ পর্যন্ত পাইলিং করতে হয়েছে। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। প্রকৌশলীরা জানান, নদীর পানি থেকে প্রায় ১৮ মিটার উঁচু পদ্মা সেতুর তলা। পানির উচ্চতা যতই বাড়ূক না কেন, এর নিচ দিয়ে পাঁচতলার সমান উচ্চতার যে কোনো নৌযান সহজেই চলাচল করতে পারবে। মূল সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এই সেতু নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। তাদের সঙ্গে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার চুক্তি হয়। চার বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কাজ শুরুর পরের বছরই মাওয়ায় স্থাপিত নির্মাণ মাঠের বেচিং প্লান্টসহ একাংশ নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়।
২০১৭ সালে প্রতিটি খুঁটির নিচে মাটি পরীক্ষায় ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া যায়। তখন নকশা সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফেরিঘাট স্থানান্তরেও সময় লেগে যায়। শুরুতে প্রতিটি খুঁটির নিচে ছয়টি পাইল
(মাটির গভীরে স্টিলের ভিত্তি বসানো) বসানোর পরিকল্পনা ছিল। যুক্তরাজ্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা সংশোধন করে একটি করে পাইল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। এ জন্য খুঁটি নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হতে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত লেগে যায়। সব মিলিয়ে এই কাজে প্রায় এক বছর বাড়তি লাগে। এ জন্য মাঝে কাজে কিছুটা গতি হারায়। ঠিকাদারকে দুই বছর আট মাস বাড়তি সময় দেয়া হয়। প্রথম দফায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যায় ধরা হয়। পরে ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ফের সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এরপর প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন না করে ২০১৮ সালের জুনে আবারও ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। গত ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি। এই সেতু নির্মাণের ফলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি বাড়বে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। আর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু অর্থনীতিতে যেমন প্রভাব ফেলবে, তেমনি সহজ হবে মানুষের চলাচলও।
পদ্মা নদী এবং পদ্মা সেতু এখন আমাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সহযাত্রী। ইতোমধ্যে পদ্মার দু’তীরে মাওয়া প্রান্তে এবং জাজিরা প্রন্তে সেতু দেখার জন্য প্রতিদিন দেশের দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে হাজারো ভ্রমন ও সৌন্দর্য্য পিপাসুনানান বয়সী মানুষ। এখন রীতিমতো পদ্মার দুই পাড়ে দিনের বেশীর ভাগ সময়ে জমে মানুষের মিলন মেলা। অনেকটা পিকনিক স্পটে, পর্যটন কেন্দ্র পরিণত হয়েছে মাওয়া ও জাজিরার বিশাল এলাকা জুড়ে। বিকেলে পদ্মার বুকে সূর্যাস্ত দেখার মনোরম দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব, অনন্য এক অনুভূতি জাগায় মানুষের মনে। পাশাপাশি ইলিশ প্রিয় বাঙ্গালীর ইলিশ, ভর্তা, বেগুন ভাজি দিয়ে চলে মধ্যাহ্ন ভোজ। আছে পিঠে, পুলি, ফুচকা, ডালপুরি, ছোলা, পিঁয়াজু, মুড়ির মিশ্রণে বিকেলের নাস্তা। এসব কাজে জড়িত পদ্মার দুতীরের মানুষের ভাগ্যের চাকা খুলে গেছে। এসব ব্যবসায় জড়িত হাজারো মানুষের দৈনন্দিন রুট রুজির ব্যবস্থা হয়েছে এই সেতুর বদৌলতে। কাজেই এই সেতু পূণাঙ্গ চালুর আগেই এই অঞ্চলের পর্যটন, বিনোদন, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প, কলকারখানা, হোটেল, মোটেল, পিকনিক স্পট, অবকাশ যাপন, ভ্রমনে অন্যমত স্থানে পরিণত হবে পদ্মার দুই প্রান্তের মাওয়া-জাজিরা এবং এর সংযোগ সড়কের দুপাশের দৃষ্টিনন্দন অপরুপ দৃশ্যের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ প্রশান্তি এনেদেবে কর্মব্যস্ত মানুষের মনে। পাশাপাশি পদ্মার মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে পর্যটন, ভ্রমন, অবকাশ যাপন, শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা ও অর্থনীতর হাব হিসেবে গড়ে ওঠবে। তা এখন থেকেই সেই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একই সাথে এই সেতুর অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ইতিহাস, ঐতিহ্যগত তাৎপর্যও দিন দিন গুরুত্ববহ হয়ে ওঠছে। এই পদ্মাবুকে দাঁড়িয়ে থাকা সেতু সেই সম্ভাবনার বার্তা জানান দিচ্ছে। বাস্তবে সেইসমূহ সম্ভাবনার প্রতিফলনের প্রত্যাশায় প্রতিক্ষায় বাংলাদেশ এবং বাঙ্গালীর প্রহর গোনা। এই সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় ভাবে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক ভাবে সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে সব হিসাব-নিকাশ ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা বাংলাদেশ চাইলে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বড় বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে, ভবিষ্যতেও পারবে। এই সেতু সেই সত্যের বার্তা দিচ্ছে বিশ্বকে। পিআইডি ফিচার
লেখক :
সাংবাদিক,
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জা জার্নালিস্ট ফোরাম।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)