কেশবপরে সাগরদাঁড়িতে পদক প্রদান ছাড়াই শেষ হলো সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা
সোহেল পারভেজ, কেশবপুর প্রতিনিধি: মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ও শাসক কর্তৃক আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা লাখো মানুষের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে মহাকবির জন্মস্থান যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। শীত উপেক্ষা করে জমজমাট এই মেলা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখো মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবে রূপ নেয়।
কবির জন্মভূমির স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ পাড়, জমিদার বাড়ির আম্রকানন, বুড়ো কাঠবাদাম গাছ তলা, বিদায় ঘাট, মধুপল্লীসহ মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। এবারের মধুমেলার ভেতর কৃষি মেলা মন কেড়েছে সকলের। মেলা ঘিরে এ এলাকার মানুষের বাড়িতে মেয়ে-জামাই, বন্ধু-বান্ধবসহ অতিথিদের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
গত ২৪ জানুয়ারি থেকে যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা শুরু হয়, শেষ হয় ৩০ জানুয়ারি। সমাপনী অনুষ্ঠানে মহাকবি মধুসুদন পদক প্রদান ছিলো বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু অনিবার্য কারণ বসতো এবারের মধুমেলায় মধুসুদন পদক প্রদান করা হয়নি।
মহাকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এবছর সাগরদাঁড়ীতে জমকালো আয়োজন করা হয়। মধুমেলা ঘিরে এক ধরনের উৎসবের আমেজ সেজেছে বর্ণিল সাজে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দুই ধার দর্শকদের মনোরঞ্জন আকর্ষণে টাঙ্গানো হয়েছে মধুমেলার ব্যানার ফেস্টুন। মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্যান্ডেলসহ শিশু বিনোদনের সরঞ্জামদী, জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিস্টল বসানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মধুমেলার সমাপনী দিনে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকারের সভাপতিত্বে মধুমঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।
মেলা উপলক্ষে মধুমঞ্চে সপ্তাহব্যাপী কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনাসহ, সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, ভূতের বাড়ি ও মৃত্যুকূপ মুগ্ধ করে তোলে দর্শকদের। শিশুদের জন্য মেলার মাঠে ছিল নাগরদোলা, ড্রাগন ট্রেনসহ বিভিন্ন আয়োজন। মেলার মাঠে কুটির শিল্পসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছিল। এবারের মধুমেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল কৃষি মেলা। সেখানে কৃষকদের আনা বিশাল আকৃতির মেটে আলুসহ বড় বড় মিষ্টি কুমড়া, মান কচু, স্কোয়াশ, হাজারী কলার কাঁদি, লাউ, মুলা, ওলকপি, রঙিন বাঁধাকপি, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, বারোমাসি কাঁঠাল, পেঁপেসহ শতাধিক কৃষি পণ্য দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এ ছাড়া বিভিন্ন বীজ দিয়ে তৈরি উপজেলার মানচিত্রসহ ফসল উৎপাদনের দৃশ্য সব বয়সী মানুষ ঘুরে ঘুরে উপভোগ করেন। এছাড়া মেলার মাঠে বসানো বাহারি আকারের মিষ্টির ভেতর বালিশ মিষ্টি, ধোয়া বিস্কুট, মটকা চা ও আগুন পান নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাগরদাঁড়ীর মধুপল্লীতে নিয়োজিত কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, মধুকবির টানে তার জন্মভূমি সাগরদাঁড়ীতে লাখো দর্শনার্থী ছুটে আসে। দর্শনার্থীরা মধুপল্লিতে কবির ভাস্কর্য, পুকুর ঘাট, প্রসূতিস্থল, কাছারিবাড়ি, স্মৃতিবিজড়িত আসবাবপত্র ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দেখে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কবির জীবনী জানতে পেরেছেন।
মেলার মাঠের ইজারাদার আকরাম হোসেন খান জানান, মেলার মাঠে আসা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বিনোদনের জন্য সব ধরনের পর্যাপ্ত আয়োজন ছিল । বিশেষ করে কৃষি মেলা ও শিশুদের বিনোদনের সবরকম আইটেম। বিগত বছরগুলোর চেয়ে মধুমেলায় মানুষের ভিড় ছিল বেশি। এবারের মেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে আশা করেলেও তেমনটি হয়নি।
কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব এবং কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন লাখো মধুভক্তসহ দর্শনার্থী এসেছেন। কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিপি, আর্মিসহ সকল বাহিনী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিল। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। মেলা জোরে ছিল সিসি ক্যামোররা আওয়াতায়। লাখ লাখ দর্শনার্থীর আগমনে কোন আবৃত্তিকার ঘটনা ছাড়াই মধুমেলা সম্পন্ন হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)