কোটাবিরোধী ও শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে ‘কঠোর’ প্রধানমন্ত্রী
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। এ দুই ইস্যুতে দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
চীন সফর নিয়ে রোববার (১৪ জুলাই) গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত দুই ইস্যুতে সরকারপ্রধানের অবস্থান কী, তা শোনার অপেক্ষায় ছিলেন আন্দোলনকারীসহ দেশবাসী। তবে সেখান থেকে কোটা সংস্কার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো আরও ‘কঠোর’ অবস্থানের বিষয়টি উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের কিছুই করার নেই বলে আবারও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলানোয় আন্দোলনকারীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। পাশাপাশি এ আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার সম্পর্কে নেতিবাচক যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তা সহ্য করার মতো নয় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে তারা একবার আন্দোলন করেছিল। সেটা আন্দোলন তো নয়, সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম ঠিক আছে, সব কোটাই বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলাম দেখেন কী অবস্থাটা হয়। সেটা এখন তো দেখতে পারছেন, কী অবস্থার তৈরি হয়েছে?’
সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে? এমন প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবনপণ লড়েছেন, তাদের পরিবার এ কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস এরা পায় কীভাবে? মুক্তিযুদ্ধ তাদের এখন ভালো লাগে না। তাহলে তো তাদের পাকিস্তান চলে যেতে হবে।’
আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও সরকার কীভাবে চলে, বিচার বিভাগ কীভাবে চলে; তা নিয়ে ধারণা নেই বলেও ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবেই হোক কোটা বাতিল করেছিলাম। এখন সেটা যখন আদালতে গেলো। তখন তো সেটা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন আবার আন্দোলন করছে, তারা তো আইন-আদালত মানবে না। সংবিধান কী, সেটা তারা চেনে না। সরকার কীভাবে চলছে, সেই জ্ঞানও নেই। হ্যাঁ, পড়াশোনাটা করছে, ভালো রেজাল্ট হয়তো করছে। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়েও তাদের জানা উচিত, শেখা উচিত।’
ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা
সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিল করার দাবিতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে আন্দোলন করছেন, সেটা ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে চলছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের) মধ্যে ভ্রান্ত কিছু ধারণা আছে। সেগুলো আমি নোট করে রেখেছি। তাদের অবশ্য জানানোও হয়েছে। তারপরও তারা আন্দোলন চালাচ্ছেন, চালাতে থাকেন। টায়ার্ড (ক্লান্ত) হোক, তখন কিছু বলবো।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘শিক্ষকদের যে দাবি ছিল, সেটা আমাদের পাঠিয়েছেন। তাদের বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। আমি সেগুলো নোট নিয়েছি। তাদের ভুল ধারণা যে পেনশন ফান্ড আছে, আসলে ফান্ড নেই। তাদের টাকা থেকেই পেনশন দেয়া হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম করে দিয়েছি সবার জন্য। এই যে সাংবাদিকরা, আজকে তাদের চাকরি না থাকলে কিছুই করার নেই। কীভাবে চলবে?’
তিনি বলেন, ‘বেতন নিয়েও তাদের ধারণা এতই বিভ্রান্তিকর যে বলার মতো না। আরেকটা হলো- কোন বছর থেকে প্রত্যয় স্কিম চালু হবে? ২০২৪ নাকি ২০২৫ সালের জুলাইয়ে। সেটাও আমরা ক্লিয়ার (স্পষ্ট) করে দিয়ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)