প্রধানমন্ত্রীর সফলতা ও জাতীয় উন্নয়ন
— বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম
কতদিন পেরিয়ে এলামতেমন বুঝতেই পারলামনা মহান স্রষ্টা রাব্বুল আল আমিনের সৃষ্টি কৌশল।যাকে কোলে নিয়েছি, কাঁখে নিয়েছি তারা দাদা-দাদি, নানা-নানি, তাঐ-মাঐ। অথচ কখনো মনেই হয় নাএই তো সেদিন আমি গ্রামের ধুলো পথে ছুটোছুটি করছি।কিন্তু কীভাবে সময় বয়ে চলেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন হাসিনা২ সেপ্টেম্বর শের-ই-বাংলানগর, পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেছেন। সব কিছুই বেশ ভালো হয়েছে।
ঢাকারদিক থেকে এক্সপ্রেসওয়ে প্রথম ব্যবহার করেছি ৫সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল। গিয়েছিলাম গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটির সভায়। সময় লেগেছিল সাড়ে ৭ মিনিট। আবার৯ সেপ্টেম্বর একই জায়গায় গিয়েছিলাম। আগেরদিন ধীরে গেছি। কিন্তু৯ তারিখ চালককেবলেছিলাম, তুমি ৯০ কিলোমিটারে যাও। দরকারপড়লে আরও বেশি। এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে দেখলাম প্রায়সবাই আমাদের পিছেফেলে যাচ্ছে।গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার। কিন্তুমুখ্য প্রস্তাবে ৮০ কিলোমিটার ছিল। ৬০ কিলোমিটার হলে আমিএকজন মুক্তিযোদ্ধা তাতে নিশ্চয়ই ১০ কিলোমিটার পেতে পারি।বীরউত্তম খেতাব পেয়েছি তাতেও
১০ কিলোমিটার।সবার আগে একমাত্র কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান হিসেবে দেশের পিতার পায়ের কাছে লাখ লাখ অস্ত্রবিছিয়ে দিয়েছি। তারজন্যেও তো ২-৪-১০কিলোমিটার রেয়াত হতে পারে। তাইগতি বাড়াতে কোনো আপত্তি ছিল না। রাস্তাটা ভালো থাকলে ৬০তো দূরের কথা১২০ কিলোমিটারেও ছোটগাড়ি চললে সমস্যা হবে না। এর আগে গত বছর ২৫জুন পদ্মা সেতুরশুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।
খুবগুরুত্বপূর্ণ দাওয়াতপত্র দেওয়া হয়ঠিকই কিন্তু কোনো রাষ্ট্রাচার নেই।ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্যরা ওসামনের সিট দখলকরে বসে থাকে। কে একজন একেবারেই পশ্চিমেরশেষ আসনে আমাকেবসিয়ে ছিলেন। বামে হুইলচেয়ারে ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহচৌধুরী, পেছনেই ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রমকুমার দোরাইস্বামী, এরপর ডানদিকে কয়েকমন্ত্রী, হুইপ, ৫ বা৬ জনের পরবহুদিন পর পুতুলকে দেখেছিলাম। কিন্তুও যেমন ওঠেএসে বলেনি, মামা কেমন আছ? আমিও কেন যেন ওঠে যাইনি। পরেমনে হয়েছে ভুলটা আমারই হয়েছে। আমি কখনো অমন করিনা।
সেই অনুষ্ঠানে পদ্মার উল্টা পাড়ে১০ লাখ লোকের জমায়েত করতে চেয়েছিল আওয়ামীলীগ। কিন্তুতা হয়নি।তবে সম্মানজনক উপস্থিতি ছিল। আমারযা চোখে বাধেতা বলি। আমার বন্ধু যেমন আছে, শত্রুও আছেঅনেক। কারণএখনো বহু লোক পাকিস্তানের জন্য কাঁদে।কারণ পশ্চিমাদের গলগ্রহ ই তাদের সম্বল। আমরাপরাজিত হলে বঙ্গবন্ধুর যেমন ফাঁসি হতো, যেভাবে অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম আমাকেও চুমা খেতনা। ফাঁসির কড়কড়ে দড়িতে ঝুলাত।তাই রক্ত দিয়ে অর্জন করা দেশের জন্য বড় বেশিলাগে। বহু জায়গায় বহুবার বলেছি, আজও বলছি রাজনীতিতে নাএলে বঙ্গবন্ধুকে না পেলে দেশকে চিনতামনা, ‘জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপি গরীয়সী’ শুধু শুনতামহৃদয়ে লালন করতে পারতামনা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ প্রেম। ‘জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’ এসবইহতো কথার কথা, হৃদয়ের কথা হতোনা। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর কারণে রাজনীতিতে এসেছিলাম। রাজনীতিতে এসেই বঙ্গবন্ধুর আস্থাও বিশ্বাস অর্জন করেছিলাম। তার ভালোবাসা ¯ন্ডেœহ মমতায় দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছিলাম। আজ আমার কাছে আমার মায়ের সান্নিধ্য সন্তান-সন্ততিরউত্তাপ, সহধর্মিণীর আগলে রাখার মতো আমার মাতৃভূমি। গাছপালা, তরুলতা, কীটপতঙ্গ, পশুপাখি সবকিছুকে আল্লাহর দান হিসেবে বুকের মধ্যে আপনা-আপনিস্থান করে নিয়েছেন। ৩-৪ বছরআগে আমার কুশি১০০ টাকা দিয়ে কারও কাছ থেকেএকটা বিড়াল এনেছিল। বাইরের বিড়ালরা প্রায় সব সময় মারপিট করে।ছোট বলে মার খেয়ে ঘরে ফিরত। আস্তে আস্তে বড় হয়েছে। আমি খেতে বসলেই আমার চেয়ার অথবা পায়ের ওপর সামনের দুপা উঁচু করে তাকিমাকি করে।সে আজ কদিন হাসপাতালে। আমি অবাক হয়েছি আমাদের বাড়ির পাশের এক মহিলা জাফরিন জান্নাত পশু ডাক্তার। তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তিকরেছে, অপারেশন করেছে।
প্রায় ১৫ দিনবিড়ালটি বাড়ি নেই। মাঝেমধ্যেই দেখতে ইচ্ছাকরে। কেন বিড়ালকে দেখতে ইচ্ছা করেআমি তার জবাব দিতে পারব না, কিন্তু করে।পরিবারের সমাজের একেবারে অপদার্থ সন্তান আমি।আল্লাহর দয়ায় এতদূর এসেছি। কত মানুষ হাত চেপেধরে, কত মানুষ দোয়া কামনা করে, কত মানুষ দোয়া করে। তাই মনের ভিতরের কোনো কান্না চেপে রাখি না, চেপে রাখতে পারিনা। অন্তরাত্মা হৃদয় যখন যাবলে তার বাইরেযাই না। ইদানীং আমাকে গুলিকরে মেরে ফেলাযত সহজ, মতেরবাইরে কথা বলানো তত সহজ নয়। খুবই সত্য দুই যুগ আওয়ামী লীগ ছেড়েছি। আওয়ামীলীগ সরকারের অনেককর্মকান্ডের সঙ্গে আমার দ্বিমত আছে। কিন্তুএক মুহূর্তের জন্য পিতাকে ছাড়িনি, বঙ্গবন্ধুকে ছাড়িনি, আমৃত্যু ছাড়বও না। বঙ্গবন্ধুই আমার আদর্শ, আমার দলের আদর্শ, আমাদের নেতা, দলের নেতা। এটা কেউ যদি না বুঝে বা বুঝতেনা চায় তাহলে আমার কিছু করারনেই।
ভবিষ্যতে কোনো দিন বোন হাসিনার সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে যখন চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে ইতিহাসের পাতায়ঠাঁই নেবেন তখনপদ্মা সেতু নির্মাণ বোন শেখ হাসিনার জন্যঅন্যতম প্রধান কীর্তি হিসেবেপরিগণিত হবে।সম্রাট শাজাহান যেমন তাজমহলের জন্য অমর হয়ে আছেন, ঠিক তেমনিপদ্মা সেতু নির্মাণের জন্যআমার বোন বাংলাদেশতথা বিশ্বের ইতিহাসে
একজন প্রধানতম ব্যক্তি হিসেবে আলোচিত হবেন অথবা প্রতিষ্ঠা পাবেন। পদ্মাসেতু শুভ উদ্বোধনে যাকে নিয়ে এতকথাবার্তা উলোটপালট সেই সৈয়দ আবুল হোসেনকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন হাসিনা পাশে নিয়েছিলেন।এটা শুধু সৈয়দ আবুল হোসেনকে সম্মান নয়, এটা তার কর্মকে সম্মান, সমগ্র জাতিকে সম্মান। এক্সপ্রেসওয়েরও শুরুর দিকে সৈয়দ আবুল হোসেন ছিলেন। সূচনার সময় প্রস্তর ফলক উন্মোচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশে যেহেতু তিনি ছিলেন সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও তাকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হলে মঞ্চে ডেকে নিলে দেশবাসীর সামনে দুকথা বলবার সুযোগ দিলে যারা অনুষ্ঠান করেছেন তারা লাভবান হতেন। এসম্মান শুধু সৈয়দ আবুল হোসেনের হতো না, এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ আমাদের সবার হতো। ওই দিনের অনুষ্ঠানে মাননীয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক মমোজাম্মেল হক আসন পাচ্ছিলেন না।আমার খুব খারাপ লেগেছে। তিনি এখন এক নম্বর মন্ত্রী। বোনের পরেই তার স্থান। একটি সরকারি অনুষ্ঠানে যদি মর্যাদানা পান তাহলে রাষ্ট্রাচার কোথায় গিয়ে ঠেকেছে একটু তো ভাবতেই হবে।
ভারতে ছিলাম ১৬ বছর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, এমনকি অনেক জাতীয় অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অতিথি হিসেবে গেছি। সেখানে প্রবীণদের যে অসাধারণ সম্মান দেখেছি গুরুত্ব দেখেছি তা ভাবা যায়না। আজ যিনি মন্ত্রী, কালনাও থাকতে পারেন। নতুন এমপি হতে পারেন, নতুন মন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু তিনি যদি যথার্থ নেতা হন, তার জায়গা মন্ত্রী থাকতে যা, মন্ত্রিত্ব না থাকতে ও তাই থাকা দরকার। আজথেকে বেশ কয়েক বছর আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে লক্ষ্য করেছিলাম, জননেতা তোফায়েল আহমেদ বাঁশের বেড়ারবাইরে দর্শকের আসনে বসেছিলেন আর মঞ্চে ছিলেননূহ-উল আলম লেনিন। তিনিতখন খুব সম্ভবত প্রেসিডিয়ামের সদস্য। ’৬৯-এর ২২ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকেবেরিয়ে ছিলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতির পক্ষথেকে ’৬৯-এরগণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদের মাধ্যমে শেখ মুজিব কে বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি আর ২৪মার্চ মাত্র এক মাসেরমধ্যে কোনো দিন ঢাকা পল্টন ময়দানে কোনো একজনসভায় এই নূহ-উল আলম লেনিন তারস্বরে বলেছিলেন, ‘এই তোফায়েল, তগোর বঙ্গবন্ধু নাচঙ্গবন্ধু এই তাকেটুকরো টুকরো করলাম।’ বলেই তার হাতে থাকা বঙ্গবন্ধুর নামেরবেশ কয়েকটি লিফলেট ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে উড়িয়ে দেওয়ার ছবি আজওআমার চোখে ভাসে, কানের ভিতর অনুরণন সৃষ্টিকরে। তাইনা বলে থাকতেপারি না। আমি ইন্টারনেটের কিছু বুঝি না। মোবাইলের তেমন কোনো সুবিধানিতে পারি না। কিন্তুতবু হঠাৎ হঠাৎ চোখের সামনে কিছু ভেসেউঠলে তা এড়িয়ে যেতে পারি না। মনেহয় অল্পবয়সী কারওস্ট্যাটাস দেখলাম। তিনিবলেছেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীবীরউত্তম মাঝেসাজে বলেন ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী মতিয়া চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর পিঠের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছেন, জুতাবানাতে চেয়েছেন। অন্যকোনো কোনো নেতানাকি বলেছেন, তোমাদেরজাতির পিতা আমাদের জুতারফিতা। কিন্তুঅনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেগুগল, ইউটিউবে কোনো প্রমাণবের করতে পারলাম না। ছোট্টবন্ধুটিকে কী বলব? এর আবার প্রমাণ! আপনি এখনই পাকিস্তান হোম মিনিস্ট্রিতে চিঠিলিখুন। আইবি, ডিআইবি রিপোর্টে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কর্মকান্ড সবপেয়ে যাবেন।বোন মতিয়া চৌধুরীআমার থেকে ৫-৬ বছরেরবড়। উনি আওয়ামী লীগে এসেছেন ’৮৩সালে। আমাদেরপিতাকে হত্যা করা হয়েছে ’৭৫ সালে।খুব সম্ভবত ’৭৬থেকে ’৭৮-’৭৯সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে স্বেচ্ছাশ্রমে ব্রহ্মপুত্র নদ খননকরার কাজ হয়েছে। সেখানেমতিয়া চৌধুরী তার দলনিয়ে সাধারণ অংশগ্রহণকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে না হলেও১০-১২ বার গেছেন। আমরা তখন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধে সীমান্তে ছিলাম।সেখানে তার বক্তৃতারস্বকণ্ঠ রেকর্ড এখনো আছে। আরশুধু রেকর্ড লাগবেকেন, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা নালিতা বাড়ীর বাদশা, যদিও সে মারাগেছে।
মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীতে প্রচুর ভূমিকা রেখেছে। যুদ্ধআরও দীর্ঘস্থায়ী হলেনিশ্চয়ই আরও অনেকভালো কাজ করত, বিরাট নাম করত। বর্তমানকৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক তখনো ময়মনসিংহ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। মনেহয় তাকে জিজ্ঞেস করলেও তিনি কিছু নাকিছু অবশ্যই বলতেপারবেন। এছাড়া ছাত্রনেতা প্রদীপ আমেরিকায় আছে।খোঁজ নিয়ে দেখা যেতেপারে। তা যাক।এসব নিয়ে আজতেমন আলোচনা করতেচাইনি। তবুএসে গেল তাইদুকথা লিখলাম। স্বাধীনতারপর পল্টনে চারজননারী হরণকারী লুটেরাকে সভায় উপস্থিত দুই-আড়াই লাখ জনগণেরনির্দেশে কাদেরিয়া বাহিনী মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। সেনিয়ে কত তোলপাড়। স্বাধীনবাংলাদেশে প্রথম গ্রেফতারি পরোয়ানাজারি করা হয়েছিল কাদের সিদ্দিকীর নামে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)