তালায় মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবীদের অভারণ্য পরিণত


নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার তালা ও পাইকগাছা উপজেলার সীমান্তে কানাইদিয়া এখন মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবীদের অভারণ্য পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলে মাদকের সম্রাজ্য গড়ে তুলেছে কানাইদিয়া গ্রামের শেখ আলি আহম্মদ (চাঁন মাষ্টার) এর ছেলে শেখ আমিরুল ইসলাম।
স্থানীয় ভাড়ায় মটরসাইকেল চালক, দরিদ্র নারী মাদক পাঁচারে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাতক্ষীরার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে উপজেলার পাটকেলঘাটা, মাগুরা হয়ে সরাসরি চলে আসে তালা-পাইকগাছা সীমান্তে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী গ্রাম কানাইদিয়ায়।
এছাড়াও কক্সবাজার ও টেকনাফে রয়েছে আমিরুলের মাদক সম্রাজ্য। সেখানে থেকেও নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ইয়াবা সহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য আনা হয় এই মাদককের আখড়ায়। এখান থেকে ভাড়ায় মটরসাইকেল চালক, নারী ও শিশুদের মাধ্যমে তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর, মাছিয়াড়া, রায়পুর, তালা ব্রিজের মোড়, মোবারাকপুর ও পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি, শ্রীরামপুর।
মালত সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে এই মাদক সম্রাট শেখ আমিরুল। এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম না বলার শর্তে বলেন, আমিরুল শেখ ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে কানাইদিয়ার কপোতাক্ষ নদের ধারে বাবলা বাগান, তার ব্যবসার সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে সংরক্ষণ করে।
পরে সুযোগ বুঝে ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল চালক, নারীদের মাধ্যমে কপিলমুনি-কানাইদিয়া খেয়া, কপিলমুনি ব্রিজের মাথা খেয়া দিয়ে পার হয়ে পাইকগাছা ও তালা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যায়। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাদক পাঁচার হয়ে এই দুই খেয়াঘাট দিয়ে।
কয়েকবার মাদক সহ আটক হলেও জেল থেকে বেরিয়ে আবাও পুরোদমে শুরু করে তার সাম্রাজ্য। তারা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা আওয়ামী লীগ সেজে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় এই সাম্রাজ্য পরিচালিত হতো। রাজনৈতিক পাট পরিবর্তন হলেও তাদের ব্যবসার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই আওয়ামী লীগ নেতার নিকট আত্মীয়রাও এই মাদক ব্যবসার সাথে সরাসড়ি জড়িত।
নাম না বলার শর্তে তারা আরও বলেন, সন্ধ্যা হলেই এলাকায় নেমে আসে মাদকের ছোবল। কপিলমুনি খেয়াঘাট থেকে রথখোলা বাজার পর্যন্ত মাদকের গন্ধ্যে রাস্তায় চলাফেরা করা যায় না। কপিলমুনি খেয়াঘাটের পাশে বাবলা বন, বলাই’র মোড় সহ রথখোলা বাজারের আশপাশ এলাকায় বসে এই মাদকের আসর। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার যুব সমাজ আজ ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে।
লেখাপড়া খেলাধুলা ছেড়ে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। সরকার পরিবর্তনের পরে স্থানীয় দুই একজন এলাকা ছাড়লেও আমিরুল শেখ বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে তার ব্যবসা। নাম না বলার শর্তে এক ভাড়ায় মটরসাইকেল চালক বলেন, সারাদিন মটরসাইকের ভাড়া চালিয়ে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকার বেশী আয় করা যায় না।
অথচ কিছু কিছু মটরসাইকেল চালক সারাদিন গাড়ি না চালিয়ে সন্ধ্যায় বড় বড় পাতাড়ি মাছ সহ হাজার হাজার টাকার বাজার করে বাড়ি যায়। এই টাকার উৎস কি আমার জানা নেই। আমরা গরীব মানুষ। সত্য কথা বললে আমাদের গাড়িতে ইয়াবা রেখে ধরিয়ে দিতে পারে, সে ভয়ে কিছুই বলিনা।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, সে দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। সে বিভিন্ন বাহিনীর হাতে কয়েকবার আটক হয়েছে। জামিন নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও ব্যবসা শুরু করে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট সকল বাহিনীর সহযোগীতা কামনা করছি। অভিযুক্ত আমিরুল ইসলামের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার ব্যবহৃত মুঠোফোনের ২ টি নম্বর হাতে আসে। কথা বলার চেষ্টা করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
তালা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, আমি থানায় যোগদান করার পরে এ বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবজেল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি এমন হয় তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
