দফায় দফায় দাম বেড়েই চলেছে ভোজ্য তেলের
দফায় দফায় দাম বেড়েই চলেছে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামে। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা ভোজ্য তেলের দামে এখন নাকানি-চুবানি খাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। তেলের দাম নিয়ে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসে অন্তত তিনদফায় বোতল ও খোলা উভয় ধরনের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পাম অয়েলের দামও। তবে বোতলের তেলের তুলনায় খোলা তেলের দাম বৃদ্ধির হার বেশি। এ কারণে কোনো কোনো ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিন তেলের সঙ্গে বোতলের তেল মিশিয়ে বিক্রি করছেন।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। ৫ লিটার মাপের বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৬০-৬০০ টাকায়। আর ১ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
বোতলের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি হারে বৃদ্ধির তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। লুজ পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ এবং সুপার পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, মাসের ব্যবধানে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম মাসের ব্যবধানে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। লুজ পাম অয়েলের দাম মাসের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।
তেলের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে কোনোকিছুর নিয়ন্ত্রণ নেই। যার যা খুশি তাই করছে। ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেন কারও কোনো নজরদারি নেই। মাঝখান দিয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা সাধারণ ভোক্তারা। দাম যতই বাড়ুক আমরা বাধ্য হয়ে কিনছি।’
মালিবাগ বাজারের ক্রেতা আজগর আলী বলেন, ‘এক কেজি সয়াবিন তেলের দাম ১৩০ টাকা নিয়েছে। কেজি ৫০০ টাকা হলেও আমাদের কিছু করার নেই। কারণ তেল ছাড়া তো রান্না করা সম্ভব না। তাই দাম যতই হোক তেল কিনতেই হবে। বাসায় রান্নার ক্ষেত্রে আগের থেকে অনেক তেল কম খরচ করছে। এভাবে আর কতোটুকু সেভ করা যায়? আসল কথা হল সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না। সবাই মুনাফা লুটে নিতে ব্যস্ত।’
ভোজ্য তেলের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজী পাড়ার ব্যবসায়ী আশিক বলেন, ‘তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমরাও অবাক। যে খোলা সয়াবিন তেল আমরা ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছিলাম, তা দেখতে দেখতে ১৩০ টাকা হয়ে গেছে। ৪৬০ টাকা বিক্রি করা বোতলের ৫ লিটার সয়াবিন তেল এখন কোম্পানি ভেদে ৫৬০-৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হিসেব করে দেখেছি এখন খোলা সয়াবিন তেলের থেকে ৫ লিটারের বোতল কিনলে ক্রেতাদের খরচ কম পড়ে। কারণ ৫ লিটারের বোতলে সয়াবিল তেলে থাকে ৪ কেজি ৭০০ গ্রামের মতো। এতে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা করে ধরলে ৫ লিটারের দাম আসে ৬১০ টাকা। কিছু কিছু কোম্পানির বোতলের সয়াবিন তেল এখন ৫৬০ থেকে ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
আশিক বলেন, ‘দাম বেশি হলেও বোতলের থেকে খোলা সোয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি। কারণ দাম বেশি হওয়ায় এখন বেশিরভাগ ক্রেতা আধাকেজি, এককেজি করে সয়াবিন তেল কিনছেন। ক্রেতাদের চাহির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরাও প্রতিদিন ১০-১২টি ৫ লিটারের বোতল কেটে খোলা সয়বিন হিসেবে বিক্রি করছি। এতে আমাদেরও লাভ বেশি হচ্ছে।’
সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে প্রায় একই কথা জানান রামপুরার ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ‘সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম এখন অনেক বেশি। এক মাসের বেশি সময় ধরে দফায় দফায় তেলের দাম বাড়ছে। এতে আমাদের বিক্রি কিছুটা কমেছে। আগে যারা ৫ কেজি করে সয়াবিন তেল কিনতেন, সামনে দাম কমবে এমন আশায় তাদের অনেকে এখন এককেজি, আধাকেজি তেল কিনছেন। কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে দাম কমার লক্ষণ আমরা দেখছি না।’
যোগাযোগ করা হলে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে আমাদের বাজারেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। তাছাড়া আমাদের তেলের বাজার ৫-৭টি প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি। তারা দাম বাড়ালে আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারিতে এখন সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা ১০২ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এই দামে তেল কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করলে তা কিছুতেই স্বাভাবিক না। খুচরা ব্যবসায়ীর সমস্ত খরচ ও লাভ যোগ করেওল সয়াবিন তেলের কেজি ১১৫ টাকার মধ্যে থাকা উচিত।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)