প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি কবিরা গুনাহ
অনেক শাসক বা জনপ্রতিনিধি এমন আছে যারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রজাসাধারণ বা অধীনস্তদের ধোঁকা দেয় কিংবা বোকা বানায়। প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার প্রতারণা করে। ইসলামে এসব ধোঁকা ও প্রতারণামূলক কাজ হারাম ও কবিরা গুনাহ। শুধু শাসকবর্গই নয় বরং যে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্যই তাদের অধীনস্তদের ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণা করা কবিরা গুনাহ।
ইসলামের দৃষ্টিতে দায়িত্বশীল বা শাসকবর্গ কর্তৃক অধীনস্তদের ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণা করা জুলুম বা অত্যাচারের শামিল। আর এটি মারাত্মক হারাম কাজ ও কবিরা গুনাহ। মহান আল্লাহ এ ধরনের ধোঁকা বা প্রতারণামূলক জুলুমের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কোরআনুল কারিমের এ আয়াতে তা সুস্পষ্ট-
اِنَّمَا السَّبِیۡلُ عَلَی الَّذِیۡنَ یَظۡلِمُوۡنَ النَّاسَ وَ یَبۡغُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
‘কেবল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অহেতুক বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। তাদের জন্যই রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’
মানুষের সঙ্গে ধোঁকা বা প্রতারণা অনেক বড় জুলুম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ধোঁকা-প্রতারণার ধরন ও ভয়াবহতার নমুনা তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- النارأيما راع غش رعيته فهو في :‘যে শাসক তার অধীনস্থদের ধোঁকা দেয়, তার ঠিকানা জাহান্নাম।’ (ইবনে আসাকির , আল-জামে)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ وَلَّاهُ اللَّهُ شَيْئًا مِنْ أُمُورِ الْمُسْلِمِينَ فاحْتَجَبَ دُونَ حاجَتِهم وخَلَّتِهِم وفقرهم، احْتَجَبَ الله عنه دون حاجَتِه وخَلَّتِهِ وفقره
‘যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান, এরপর সে তাদের অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের সময় নিজেকে গোপন করে রাখে; আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার অভাব দূরকরণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন না।’ (আবু দাউদ)
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- الظلم ظلمات يومالقيامة : ‘অত্যাচার কেয়ামতের দিন চরম অন্ধকার হবে।’ (বুখারি)
৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-من غشنا فليس منا : ‘যে আমাদের ধোকা দেয়; সে আমাদের অন্তভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)
বর্তমান সময়ে ধোঁকা-প্রতারণামূলক ঘটনাগুলো অহরহ ঘটেই চলেছে। মানুষকে ঠকিয়ে, জুলম করে অবৈধ আয়-রোজগারের প্রতিযোগিতা চলছে। যা হালাল নয়। বরং মানুষের প্রতি এগুলো জুলুম। মানুষকে নানান প্রতারণায় ফেলে অর্থ ও স্বার্থ হাসিল করা হারামখোরের কাজ। সব মানুষের জন্যই অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনায়দায়ক।
প্রতারণার ধরন
একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (কোনো এক) বাজারে স্তুপকৃত খাদ্যের (শস্যের) কাছে গিয়ে তার ভেতরে হাত প্রবেশ করালেন। তিনি আঙুল দ্বারা অনুভব করলেন যে, ভেতরের শস্য ভিজে আছে। বললেন, হে বেপারী! কী ব্যাপার? (ভেতরের শস্য ভেঁজা কেন?)
বেপারি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। তিনি বললেন, ভিজেগুলোকে শস্যের ওপরে রাখলে না কেন, যাতে লোকেরা দেখতে পেত? যে ধোঁকা দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, আবু দাউদ)
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুলুম তথা ধোঁকা-প্রতারণাকে নিজের প্রতি অস্ত্রধারণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাদিসে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয় এবং যে মানুষকে ধোঁকা দেয়, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম)
সুতরাং হাদিসের পরিভাষায় বিশ্বমানবতার প্রতি সতর্কতা হলো-
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধোঁকা দেয় সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। ধোঁকা ও চালবাজ জাহান্নামে যাবে।’ (তাবারানির কাবির ও সাগির, ইবনে হিব্বান)
হাদিসের অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে তার (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য সেই জিনিস পছন্দ করেছে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে হিব্বান)
সুতরাং শাসক, জনপ্রতিনিধি বা যে কোনো পর্যায়ের দায়িত্বশীলের জন্য জরুরি যে, কেউ কারো প্রতি বা তার অধীনস্তদের প্রতি জুলুম, ধোঁকা-প্রতারণা না করা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা। ধোঁকা-প্রতারণার জুলুম থেকে নিজেদের বিরত রাখা। হারাম ও কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ধোঁকা-প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কাউকে বোকা বানানোর মতো; আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর মিথ্যা আরোপ করার মতো ভয়াবহ গুনাহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। সব কবিরা গুনাহ থেকে নিজেদের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)