বিক্রির জন্য ছেলেকে বাজারে তুললেন মা, দাম চাইলেন ১২ হাজার
স্বামীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ নেই। নিজেও নানা রোগে আক্রান্ত। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই থাকেন বাবার সংসারে। সেখানেও নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এ অবস্থায় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মা সোনালী চাকমা। অভাবের তাড়নায় নাড়িচেরা ধন সন্তানকে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসেন। দাম হাঁকেন মাত্র ১২ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) খাগড়াছড়ি বাজারে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। পরে অবশ্য স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বিক্রির হাত থেকে বাঁচান ওই শিশুকে। তার হস্তক্ষেপেই মায়ের সঙ্গে ঘরে ফেরে ৬ বছরের রামকৃষ্ণ চাকমা।
সোনালী চাকমা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়ার পাকোজ্জ্যাছড়ি এলাকার কালাবো চাকমার মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর সন্তান নিয়ে পৈত্রিক ভিটায় গোয়াল ঘরের পাশে থাকেন। তার বড় দুই ছেলের একজন বিয়ে করে আলাদা আর মেঝো ছেলে খাগড়াছড়ি সদরে দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি হাটে নিজের ৬ বছরের সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমাকে বিক্রি করতে আনেন মা সোনালী চাকমা। সন্তানের বিনিময় তিনি ১২ হাজার টাকা দাবি করেন। বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা একজন তার ছেলেকে ৫ হাজার টাকায় কিনতেও চান। কিন্তু সোনালী চাকমা কম দামে বিক্রি করতে রাজি হননি।
একপর্যায়ে বিষয়টি কয়েকজনের নজরে এলে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান। পরে কমলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুনীল জীবন চাকমার হস্তক্ষেপে মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।
সোনালী চাকমার ভাই ভারতব চাকমা বলেন, দিদি মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন। মৃগী রোগী। এ জন্য মাঝেমাঝে এলোমেলো কথা বলেন। বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি বাজার থেকে এক চেয়ারম্যান ফোন করে ছেলেকে বিক্রি চেষ্টার কথা জানালে বাবা গিয়ে দিদি ও ভাগিনাকে নিয়ে আসেন।
বিষয়টিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে ভাইবোন ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ানম্যান সুজন চাকমা জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই মা-ছেলের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি শিশুটিকে একটি সদনে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
ছেলেকে বিক্রির চেষ্টার কথা স্বীকার করে সোনালী জানান, অভাবের সংসার। স্বামী ছেড়ে চলে গেছে অনেকদিন। ঘরে কোনো খাবার নাই। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ওষুধ কেনার টাকা নাই। কিভাবে বাঁচবো ছেলেকে নিয়ে। তাই ছেলেকে ভালো পরিবারে দিতে চেয়েছিলাম।
ছেলেকে বিক্রি করতে আনার খবরে শুক্রবার (১২ আগস্ট) সোনালী চাকমা ও তার ছেলের খোঁজ নিতে তাদের বাড়িতে ছুটে যান সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। পরিবারটির জন্য ৬ মাসের খাদ্য সহায়তা ও নগদ কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও আশ্বাস দেন। তিনি শিশুটিকে কোনো সরকারি শিশু সদনে পাঠানো যায় কিনা তা দেখবেন বলেও জানান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)