আহা, কবে আবার রিকশায় চড়ব
আমার বিয়ে হয়েছে ১৬ বছর। ভীষণ ব্যস্ততায় কীভাবে যে সময়গুলো হারিয়ে গিয়েছে বুঝতে পারছি না। সময়ে প্রয়োজনে হলেও এ ব্যস্ততা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। বেশ উপভোগ করেছি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। করোনায় হঠাৎ বদলে যাওয়াটা এই সময়টাকে করে নিয়েছি নিজের মতো। রবিঠাকুরের লেখা দুটি লাইন মনে পড়ছে, ‘আপনারে দীপ করি জ্বালো, আপনার যাত্রাপথে আপনিই দিতে হবে আলো।’
সময়ে সঙ্গে বদলে যাওয়া জীবনের চলার পথ হয়ে গিয়েছে অন্য রকম। নিজেকে নিয়ে ভাবনার সময় এখন কিছুটা পাওয়া যায়। দিনের বেশির ভাগ সময় রান্না ঘরে কাটলেও বারান্দায় সবজি-ফল গাছের পরিচর্যায় সময় দিতে পারছি। বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করে, বই পড়ে, সিনেমা দেখে বেশ ভালোই কাটছে। কখনো হারিয়ে যাই পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থনে। একেক ধাপে জীবনের সৌন্দর্য হয় একেক রকম। ছোটবেলায় মানুষ কত রকম স্বপ্ন দেখে, আমিও দেখতাম। ছোট মনে ছিল ছোট স্বপ্ন, বড় হয়ে রিকশায় চড়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে হতো।
বাবার চাকরিসূত্রে জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায়, যেখানে রিকশা ছিল না। যখন ২০ বছর বয়স, তখন আমরা চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি। বাসা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে আমাকে রিকশায় উঠতে হবে। আজও মনে আছে, সেই দিনের কথা, তখন সেকি উত্তেজনা! রিকশায় চড়ার স্বপ্ন বুঝি এবার পূরণ হতে যাচ্ছে! সারা রাত ঘুম হয়নি। আমার বড় বোন বারবার বুঝিয়ে, শিখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে তিন চাকার এই বাহনে বসতে হবে। কীভাবে রিকশায় বসে চালককে জায়গা চিনিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একা একা কীভাবে চলতে হবে, বোন সেটাও বুঝিয়ে দেন। সেই দিন আমার মনে হয়েছিল আমি বড় হয়েছি। এরপর রিকশা নিয়ে কত ঘুরে বেড়িয়েছি! কখনো ক্যাম্পাসে, কখনো সমুদ্রের ধারে, কখনো আমার প্রিয় শহরে।
আমি আর ছোট বোন কত দিন বৃষ্টিতে ভিজে রিকশায় ঘুরেছি হিসাব নেই। অনেক মজার কাণ্ডও করেছি। দুই বোনের মতের মিল না হওয়ায় মাঝপথে রিকশা থেকে নেমে দুই রিকশা নিয়ে এক গন্তব্যে পৌঁছেছি। সেকি ছেলেমানুষি, মনে পড়লেই এখন হাসি পায়। রিকশা নিয়ে এমনই কত গল্প এই বদলে যাওয়া সময়ে আমাকে রাঙিয়ে দেয়। সময়টা মেনে নিলেও রিকশা ঘুরে বেড়ানো খুব বেশি মিস করেছি। মার্চে করোনা হানা দেওয়ার পর রিকশায় আর চড়া হয়নি। স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে আপাতত রিকশা থেকে দূরে আছি। আবার কবে পঙ্খিরাজ রিকশায় ঘুরে বেড়াতে পারব, সেই অপেক্ষায় যেন দিন গুনছি।
সুত্র প্রথম আলো
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)