ইউএসএআইডির অর্থায়নে সব প্রকল্প বন্ধের নির্দেশনা
মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির ব্যয় অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইউএসএআইডির বাংলাদেশ কার্যালয়ের পরিচালক রিচার্ড বি অ্যারন শনিবার সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সব স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠনের জন্য এ নির্দেশনা জারি করে চিঠি দেন।
এতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তির আওতাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির মার্কিন অংশের ব্যয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
এ নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস গত ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে জারি করা এক নির্দেশের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে ইউএসএআইডির অধিগ্রহণ ও সহায়তা বিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক ব্রায়ান অ্যারনের পাঠানো চিঠিটির শিরোনাম, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ: যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তার পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্সামঞ্জস্যকরণ।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই চিঠিটি ইউএসএআইডি-বাংলাদেশের সব বাস্তবায়ন অংশীদারদের প্রতি একটি নির্দেশিকা হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। যাতে আপনার সংশ্লিষ্ট ইউএসএআইডি-বাংলাদেশ চুক্তি, কার্যাদেশ, অনুদান, সমন্বিত চুক্তি বা অন্যান্য অধিগ্রহণ বা সহায়তা সরঞ্জাম অধীনে করা কোনো কাজ অবিলম্বে বন্ধ, থামানো বা স্থগিত করা হয়।
এতে অংশীদারদের সঙ্গে যেসব কাজ চলছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচনের জন্য সব যুক্তিসংগত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান সব প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছে নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য অধস্তনদের নির্দেশ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে মার্কিন দূতাবাস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্যনিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আরও অনেক কিছু মোকাবিলায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ফরেইন অ্যাসিস্ট্যান্স ডট গভ’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে ২০২১ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালের ৪৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে দেশটি। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে ওয়াশিংটন বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে মার্কিন সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০—এর মধ্যেই ছিল।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল ও মিসরের জন্য সামরিক সহায়তাকে মার্কো রুবিও নির্দেশনার বাইরে রাখা হয়েছে। গাজা যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে আরও বড় সামরিক প্যাকেজ দিচ্ছে। মিসর ১৯৭৯ সালে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় অঙ্কের প্রতিরক্ষা তহবিল পেয়ে আসছে। বাংলাদেশে খুব বেশি না হলেও সামান্য পরিমাণে সহযোগিতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই আদেশ অনুসারে, বাংলাদেশে সামরিক সহযোগিতার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
একই সঙ্গে এই নির্দেশনা অন্তত কয়েক মাসের জন্য মার্কিন সহায়তায় পরিচালিত পিইপিএফএআর কর্মসূচি বন্ধ রাখারও ইঙ্গিত দেয়। পিইপিএফএআর হলো এইচআইভি/এইডসবিরোধী কর্মসূচি, যা উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশেষ করে, আফ্রিকার দেশগুলোর রোগীদের জন্য অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল ওষুধ সরবরাহ করে।
২০০৩ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে চালু হওয়া এই কর্মসূচি প্রায় ২৬ মিলিয়ন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য খাতে যে সহায়তা দেওয়া হতো বাংলাদেশে তাও বন্ধ হতে পারে।
ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরেই বৈদেশিক সাহায্যকে তার পররাষ্ট্রনীতির একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তারা উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়, যা চীনের থেকে আলাদা। কারণ, চীন সাধারণত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের দিকে বেশি মনোযোগী। ৮৫ দিনের মধ্যে সব বৈদেশিক সাহায্য পুনর্মূল্যায়নের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ডলারের হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ দাতা দেশ। তবে ইউরোপের কিছু দেশ, বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো, তাদের অর্থনীতির আকারের আনুপাতিক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি দেয়। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৬৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক সাহায্য দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ৯০ দিনের জন্য বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত করেন। তবে এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা তখনই স্পষ্ট ছিল না। দারিদ্র্যবিরোধী সংগঠন অক্সফাম বলেছে, ট্রাম্প বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ঐকমত্য থেকে সরে আসছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)