ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত নিয়ে বিস্তারিত জানালেন অন্য হেলিকপ্টারে থাকা কর্মকর্তা
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল তা নিয়ে মুখ খুলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি।
ঘটনার দিন রাইসি ও আবদোল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাশেই আরেকটি হেলিকপ্টারে ছিলেন ইসমাইলি।
সেদিনের ঘটনা নিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার সঙ্গে খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় গত রোববার দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ অন্য কর্মকর্তারা। পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।
প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর গত সোমবার ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজের খবরে বলা হয়, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশটির জনগণের জন্য তার দায়িত্ব পালন করার সময় একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তিনি শহীদ হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ অন্য ব্যক্তিরাও নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনা নিয়ে ইরনাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসমাইলি বলেন, ১৯ মে স্থানীয় সময় বেলা একটা নাগাদ হেলিকপ্টার তিনটি যাত্রা শুরু করে। ওই সময় আবহাওয়া চমৎকার ও স্বাভাবিক ছিল। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি মাঝখানে ছিল। সামনে একটি ও পেছনে আরেকটি হেলিকপ্টার ছিল।
পুরো বহরের দায়িত্বভার ছিল প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির পাইলটের ওপর। ইসমাইলি বলেন, যাত্রা শুরুর ৪৫ মিনিট পর রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে আরও উঁচুতে উঠে ভ্রমণ করার নির্দেশ দেন। মূলত তিনি কাছাকাছি থাকা ঘন মেঘ এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
ইসমাইল বলেন, ‘ওই সময় হঠাৎ রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি উধাও হয়ে যায়। ঘন মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ৩০ সেকেন্ড পর আমাদের পাইলট প্রথম খেয়াল করেন, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দেখা যাচ্ছে না। এরপর আমাদের পাইলট বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকেন। হেলিকপ্টারটি খুঁজতে থাকেন।’
‘রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার রেডিও ডিভাইসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা সফল হয়নি। এরপর তাদের হেলিকপ্টারটি উচ্চতা কমিয়ে আনে এবং পাশের একটি তামার খনিতে অবতরণ করে’- এমনটাই জানান গোলাম হোসেইন ইসমাইলি।
ইসমাইলি আরও বলেন, ওই সময় ‘অদৃশ্য হয়ে যাওয়া’ হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদোল্লাহিয়ান ও প্রেসিডেন্ট রাইসির নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধানকে বারবার কল করা হয়। কিন্তু তাদের কারোরই সাড়া পাওয়া যায়নি।
অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটরা প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভিকে কল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও জানান ইসমাইলি।
ইসমাইলি বলেন, জটিল ওই পরিস্থিতিতে শুধু রাইসির হেলিকপ্টারে থাকা মোহাম্মদ আলী আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তার (আল-হাশেম) অবস্থা ভালো ছিল না। কিন্তু শুধু জানান, একটি উপত্যকায় তাঁদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে।
এরপর ইসমাইল আরেকবার আল-হাশেমকে কল করতে সক্ষম হন। তখনো একই কথা জানান। মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির মুখপাত্র।
গোলাম হোসেইন ইসমাইলি, ‘আমরা যখন বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাই, সেখানে সবার মরদেহ দেখি। বুঝতে পারি, প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ অন্য ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিকভাবে শহীদ হয়েছেন। তবে একমাত্র আলে-হাশেম হয়তো ঘণ্টাখানেক বেঁচে ছিলেন।’
ইরানের রাজধানী তেহরানে বুধবার রাইসির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির অংশ নেন। রাজধানীতে রাইসির প্রতি শেষশ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ।
এরপর ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদে কাল বৃহস্পতিবার রাইসিকে দাফন করা হবে। এ শহরে রাইসির জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)