কলারোয়ায় ছেলে রায়হানের ৪১তম বিসিএসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার গল্প
মানুষ তার সপ্নের সমান বড়ো। মানুষ কখনো কখনো তার সপ্নের চাইতেও বড় হয়।রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখা কোন স্বপ্ন নয়, বরংবাস্তবে যে স্বপ্নের জন্য ঘুমে আসে না সেটায় আসল স্বপ্ন। তাই উদাহরন উপস্থাপনের জন্য কেএফসি, আলীবাবার জীবনী পড়ার দরকার নাই। রায়হান কবির এর লাইফটা পড়তে পারলে এ প্রজন্ম জীবনটাকে নিয়ে ভাবার উপকরণ পেয়ে যাবে।কলারোয়ার গর্ব রায়হান কবির। ৪১ তম বিসিএস এ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী ভুমিকমিশনার হিসাবে সুপারিশ প্রাপ্ত।
রায়হান কবির রাজের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প
গল্পের নাম- জিপিএ A+ কোন বিষয় নয়–
রায়হান কবির রাজ ৪১তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর সদরের তুলসী ডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করে করেন। বাবা আজিজুল রহমান মোড়ল পেশায় কাঠমিস্ত্রি এবং মা বিলকিস খাতুন, গৃহিণী। উপজেলা বেত্রাবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসিA- ও ২০১১সালে এইচএসসি A পেয়ে শেখ আমানউল্লাহ ডিগ্রী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুটিতে প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন করেন। বর্তমানে তিনি বাগেরহাটে স্কুলশিক্ষক হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন বিভিন্ন গনমাধ্যমে কর্মী দের। রায়হান কবির গানগেয়ে শুনিয়ে বলেন জীবনের গল্প এত ছোট নয় যে একদিন ফুরিয়ে যাবে। ছোটবেলায় মোটামুটি পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। ক্রিকেট খেলা পছন্দ করতাম। আমি খুব ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। নদী, নালা আমার ভালো লাগে। দেশের অনেক জায়গায় ঘোরা হয়েছে। মানুষ অনেক কিছু হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়। আমি একেক সময় একেকটা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো; তখন থেকে ভাবতাম আমি গরিব মানুষের ছেলে দারিদ্রতা কে জয় করতে হবে।
তিনি বলেন পড়াশোনায় আমার প্রতিবন্ধকতা ছিল, আমার এইচএসসি পরীক্ষার পর ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। কিন্তু আমি ঢাকা বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাই নাই। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মানবিক শাখায় ইতিহাসে ভর্তি হয়। তিনি অনার্স পাশ করার পর থেকে স্বপ্ন দেখছিলেন।বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে? রায়হান বলেন: অনার্স পরীক্ষার শেষের দিকে বিসিএসের স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। আমার এক বন্ধু ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডার হন। তিনি আমাকে বিসিএস পরীক্ষার জন্য তাগাদা দিতে থাকে। কারণ আমি বিজ্ঞানের ছাত্র না। আমি ইংরেজি নিয়ে অনার্স করি না।তবে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পড়াই। মূলত বন্ধুর অনুপ্রেরণায় বিসিএস দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি।
বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?প্রথমে ৪০তমে প্রিলি দেই। প্রস্তুতি না থাকায় ফলাফল খারাপ আসে। তারপর থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। শিক্ষা ক্যাডারের এক বড় ভাইয়ের থেকে সব সময় অনুপ্রেরণা ও গাইডলাইন পেয়েছি। আমি গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও কম্পিউটার ভালো পারতাম। বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নেবো বুঝতে পারছিলাম না। তখন ওই বড় ভাইয়ের গাইডলাইনে পড়া শুরু করি। সাধারণ জ্ঞান ও বাংলাদেশ বিষয়াবলী ভুলে যেতাম। যেহেতু বিসিএস দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। তাই প্রায়ই আমি হতাশ হয়ে যেতাম, আমি পারবো কিনা। যতক্ষণ আমার চোখ খোলা থাকতো; ততক্ষণ পড়তাম। কোচিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়া দিয়ে আমি নিজে পড়তাম। প্রিলির ক্ষেত্রে অনেক পড়তাম কিন্তু পরে সব ভুলে যেতাম। বুঝতে পারি, এভাবে মনে রাখা সম্ভব নয়। তখন থেকে নির্দিষ্ট কিছু গাইড ও মেইন বই ফলো করতাম। অল্প অল্প পড়তাম কিন্তু ভালো করে পড়া হতো। জিনিসটি প্রিলির ক্ষেত্রে খুব কাজে দিয়েছে। যা হোক, প্রিলিতে পাস করলাম। বিজ্ঞানে পড়ার কারণে বেসিক খুব ভালো পারতাম। বিসিএসের প্রিলি সিরিয়াসলি পড়তে পড়তে রিটেনের জন্য প্রস্তুতি হয়ে যায়। রিটেন পরীক্ষায় দেখলাম গণিত, ইংরেজি, বাংলা সাহিত্য ভালো পারি। তবে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে একটু সমস্যা ছিল। এখানে অনেক ডাটা মনে রাখতে হয়। এসবের জন্য নিজে সাজেশন তৈরি করে পড়েছি। রিটেনে দুই বিষয় ছাড়া বাকিগুলোয় খুব ভালো পরীক্ষা হয়েছে। তারপর রিটেনেও টিকে গেলাম। ভাইবার ক্ষেত্রে মূলত পড়াশোনার বিষয় কম। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারার দক্ষতা থাকতে হয়। স্যাররা আমাকে নানা প্রশ্ন করে যাচাই করার চেষ্টা করেন। আমি সুন্দরভাবে উত্তরগুলো দিয়েছিলাম। আমি তাদের গান গেয়ে শোনাই। কোথায়ও গদবাধা প্রশ্ন করা হয়নি। তারা পরীক্ষা করেছেন, আমি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা ও হ্যান্ডেল করতে পারবো কিনা। বিসিএসে ৩৩ মিনিট ভাইবা হয়েছিল। ভাইবার পর বুঝতে পেরেছিলাম আমার কিছু হবে। কারণ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাইবা ছিল বিসিএস ভাইবা। কেউ অনুপ্রেরণা দিয়েছে? কাকে বেশি মনে পড়ে? তিনি বলেন বাবা-মা সব সময় আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে মায়ের অবদান বেশি।
যারা বিসিএসে আসতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?তিনি বলেন ।।।বিসিএস হচ্ছে প্রতিযোগিতার জায়গা। এখানে দেশের অত্যন্ত মেধাবীরা ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিয়ে থাকে।
সুতরাং ক্যাডার পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে যুদ্ধে টেকা যায়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বেশি না পড়ে অল্প অল্প করে বারবার পড়া উচিত। বিসিএসে এখন গদবাধা প্রশ্ন আসে না। এর জন্য পুরোপুরি টেকনিক্যাল হতে হবে। প্রিলির জন্য ২০০ প্রশ্ন না দাগিয়ে ১৪০-১৫০ প্রশ্ন দাগানো উচিত বলে মনে করি। রিটেনের জন্য পুরো উত্তর করার চেষ্টা করতে হবে। গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি ভালোভাবে জানতে হবে। ভাইবায় পড়ার পাশাপাশি টেকনিক্যাল হতে হবে। অনেক সময় বিব্রতকর প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের কনফিউজড করা হয়। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)