নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের দূর্নীতিতে একাডেমীর শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ
নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের দূর্নীতিতে একাডেমীর শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের স্বাক্ষ্য, দীর্ঘ এক মাস শিল্পকলা একাডেমীর ক্লাস বন্ধ, নড়াইলের সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার দাবি। নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি একাডেমীর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাংস্কৃতিক কর্মী ও ব্যবসায়ীদের স্বাক্ষ্য নিলেন।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বিকেলে নড়াইল সার্কিট হাউসে জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদসহ তিন জন কর্মকর্তা এ স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উপ-পরিচালক এ.এম মুস্তাক আহম্মেদ এবং সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) হাসান মাহমুদ।
জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাস থেকে নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমানের একের পর এক স্বেচ্ছাচারিতা,দূর্বব্যহার, অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক-কর্মচারি,শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রতিবাদ ও আন্দোলন করে আসছিল। গত ১৩ ডিসেম্বর নড়াইল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির লিখিত অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ৫২জন সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্বাক্ষ্য গ্রহন করে এবং আনিত অভিযোগের সত্যতা পায়। গত ৬ ফেব্রæয়ারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। এসবের প্রতিবাদে গত ৫ মার্চ থেকে শিল্পকলা একাডেমীর বিভিন্ন বিভাগের ৯জন শিক্ষক তার অপসারণের দাবিতে ক্লাস বর্জন শরু করেন এবং তা অব্যাহত রয়েছে। এরই সূত্র ধরে পূনরায় জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত দল তদন্ত করতে নড়াইলে আসেন।
তদন্তে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ, অর্ধ শতাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ১০জন শিক্ষক, ৪০-৫০জন একাডেমীর শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং ২জন সাউন্ড ও ডেকোরেটরের স্বত্ত্বাধিকারী কালচারাল অফিসারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন।
অভিযোগে জানা গেছে, মোঃ হামিদুর রহমান ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক স্বেচ্ছাচারিতা, শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের বেতন দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠে। এই অফিসারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, কলাকুশলী, উপস্থাপক, বিচারক ও উৎসব সমন্বয়কারীর সম্মানী ও যাতায়াতভাড়া না দেওয়া, ব্যানার, সাজসজ্জা, ডকুমেন্টেশন ও প্রচার, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা থেকে অর্থ আতœসাৎ, জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার দূর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত বিভাগের শিক্ষক আশিষ কুমার স্বপন, নৃত্য বিভাগের শিক্ষক মোঃ মহিউদ্দিনসহ একাধিক শিক্ষক বলেন, জেলা কালচারাল অফিসার কোন অনুষ্ঠানে সরকার নির্ধারিত সম্মানী ও শিল্পীদের যাতায়াত ভাড়া প্রদান করেনা। সম্মানি দেবার কথা বলে শিক্ষকদের কাছ থেকে ফাঁকা স্বাক্ষর রেখে সেখানে শিক্ষকদের নামে ভূয়া বিল-ভাউচার করেছেন। এভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
অংকন লাইট হাউসের মালিক পলাশ দেবনাথ ও পাওয়ার ভয়েস সাউন্ডের মালিক রুবেল মোল্যা বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে বর্তমান কালচারাল অফিসার অনেক ফাঁকা বিল নিলেও তাদের কোনো অর্থ প্রদান করেনি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু বলেন, যতদিন এই দূর্নীতিবাজ কালচারাল অফিসার নড়াইলে থাকবে ততদিন নড়াইলের সাংস্কৃতিক কর্মীরা শিল্পকলা একাডেমীর কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন না। তিনি নড়াইলের সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে স্বেচ্ছাচারী ও দূর্নীতিপরায়ণ জেলা কালচারাল অফিসারের দ্রæত অপসারণ ও বিভাগীয় শাস্তির দাবি জানান।
তদন্ত কমিটির সদস্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) হাসান মাহমুদ বুধবার এ প্রতিবেদককে বলেন,আগামি ৩-৫ কার্য দিবসের মধ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক বরাবর এ প্রতিবেদন দেয়া হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)