পায়ে পেরেক পুঁতে দুই যুবককে রাতভর নির্যাতন
রাজশাহীর তানোরে চোর সন্দেহে দুই যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা রেকর্ড করা হয়নি।
আহতরা হলেন- উপজেলার মোহর গ্রামের ইসাহাক আলীর ছেলে সেলুন ব্যবসায়ী ফিরোজ কবির (২৪) ও একই গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে ট্রলিচালক জসিম উদ্দীন (২৮)। এদের মধ্যে ফিরোজের পায়ে হাতুড়ি দিয়ে লোহার পেরেক পুঁতে দেওয়া হয়। আর জসিমকে লোহার রড় ও হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে। এছাড়াও তাদের একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাতে নির্যাতনের শিকার ওই দুই যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের আত্মীয় দেবিপুর গ্রামের জোহরার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। খাবার শেষে ওই বাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্র রহিমসহ গ্রামের কয়েকজন ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা ফিরোজ ও জসিমকে আটক করে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এ সময় তাদের কাছে থাকা একটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে। পরে দুইজনকে চোর সন্দেহে বেঁধে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনের শিকার ফিরোজের মামা কামাল হোসেন জানান, রাতেই স্থানীয় ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশিদ গিয়ে তাদের বেধড়ক মারপিট করে। এ সময় মামুনের পায়ে পেরেক পোতার নির্দেশ দিলে রহিম হাতুড়ি দিয়ে ফিরোজের পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেয়। তারা ফিরোজের পায়ে পেরেক পুঁতে চোর হিসেবে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে।
কামাল বলেন, সোমবার সকাল ১১টার দিকে তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সেখানে আসেন। তিনি ফিরোজের মায়ের জিম্মায় দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই বলে মুচলেখা নিয়ে দুইজনকে ছেড়ে দেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন।
তিনি আরও বলেন, কয়েক মাস আগে দেবিপুর বাজারে ফিরোজের সেলুন ছিল। সেলুনে চুল কাটা নিয়ে ফিরোজের সঙ্গে রহিমের দ্বন্দ্ব হয়েছিল। এ কারণে ফিরোজ সেখান থেকে সেলুন গুটিয়ে নিয়ে তার নিজ গ্রামে গিয়ে সেলুন দেয়। ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে রহিম এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, দুই যুবককে হাসপাতালে ভর্তির পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অস্ত্র প্রচার করে ফিরোজের পা থেকে পেরেক বের করা হয়েছে। তারা ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা দুইজনই আশঙ্কামুক্ত।
তানোর থানার ওসি রাকিবুল হাসান বলেন, দুই যুবককে নির্যাতনের একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ফিরোজের বাবা ইসাহাক আলী বাদী হয়ে থানায় এই অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে স্থানীয় তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন ও দেবিপুর গ্রামের মৃত. বেলাল হোসেনের ছেলে আব্দুর রহিমসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)