স্বর্ণের দুলের জন্য সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় শ্রেণীর স্কুলছাত্রী রাহিকে হত্যা
গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্ল্যা ইউনিয়নের আগরদাড়ি গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী নুসরাত জাহান রাহি হত্যা মামলার প্রধান আসামী রেজাউল কবীর জনি ও প্রধান সাক্ষী অজয় পাইন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সোমবার বিকেলে তারা সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোঃ মহিদুল হাসানের কাছে এ জবানবন্দি দেয়।
১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকারি আসামী রেজাউল কবীর জনি (২২) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আগরদাড়ি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকারি সাক্ষী অজয় পাইন একই উপজেলার বুধহাটা গ্রামের সুকুমার পাইনের ছেলে ও বুধহাটা বাজারের পলাশ জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী।
নিহত নুসরাত জাহান রাহি (০৯) একই গ্রামের রবিউল ইসলাম রুবেল এর মেয়ে ও আগরদাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।সম্পর্কে জনি রাহির প্রতিবেশী চাচা।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক মোঃ ফয়সাল আহম্মেদ জানান, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোঃ মহিদুল হাসানের কাছে নিজেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে কানের দুল কেড়ে নেওয়ার কথা বাবা ও মাকে জানিয়ে দেওয়ার কথা বলায় রাহিকে তার সোয়েটার ছিঁড়ে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করেছে। সে ওই দুল বুধহাটার অজয় পাইনের কাছে নয় হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল বলে স্বীকার করেছে। জবানবন্দি শেষে জনিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অজয় বাইনকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে অজয় পাইন তার জবানবন্দিতে জানিয়েছে ৫ মাস আগে জনি তার মায়ের সাড়ে চার ভরি সোনার দুল তার কাছে ২০ জাজার টাকায় বিক্রি করেছিল। সেকারণে গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে দুই আনা ওজনের এক জোড়া ছোট দুল বিক্রি করতে এলে তার কাছে জানতে চাইলে সে বলে যে, মায়ের বিক্রি করে দুল পরে সে ছোট আকারে তৈরি করে দিয়েছিল। সেই দুল সে বিত্রি করতে এসেছে। একপর্যায়ে ওই দুলজোড়া বাবদ জনি নয় হাজার টাকা নিয়ে যায়।
সোমবার বিকেলে আদালত চত্বরে রেজাউল কবীর জনি জানায়, রাহিকে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে প্রভাত বসুর বাড়ির সামনে থেকে ডেকে নিয়ে কলেজ শিক্ষক লুৎফর রহমানের পরিত্যক্ত বাড়ির নির্জন হলুদ খেতে নিয়ে যায়। সেখানে কানের দুল ছিঁড়ে নিলে রাহি চিৎকার শুরু করে। বিষয়টি তার বাবা ও মাকে জানাবে বলে। একপর্যায়ে রাহির সোয়েটার ছিঁড়ে তার হাত ও পা বেঁধে গলায় সোয়েটার পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। ওই দিন বিকেল চারটার দিকে পুলিশ তাকে আটক করে।
আদালত চত্বরে অজয় পাইন জানায়, শনিবার বিকেল ৫ টার দিকে পুলিশ তার দোকানে এসে জনির কাছ থেকে একজোড়া দুল কেনার বিষয়টি জানতে চায়। সে নয় হাজর টাকায় দুল কেনার কথা স্বীকার করে। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সোমবার সকাল ৮টায় তাকে আবারো ডাকা হলে থানায় চলে যায় সে। বিকেলে পুলিশের গাড়িতে করে তাকে আদালতে আনা হয়। বিকেল ৫ দিকে বিচারকের কাছে জবানবন্দি শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং এ রাহি হত্যার ঘটনায় রেজাউল কবীর জনিকে রবিবার বিকেলে তার গ্রাম থেকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে বলেন, জনি ঢাকায় একটি কোম্পানীতে চাকরী করতো। নয় মাস আগে সে বিয়ে করে।বিয়ের পরে মাস চারেক আগে সে চাকরি হারায়। এতে ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে জনি। গ্রামের বাড়িতে এসে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।মাদকের টাকা জোগাড় করতে সে রাহির কানে থাকা সোনার দুল ছিনিয়ে নেওয়ার চিন্তা করে। শনিবার সকালে রাহি তার বান্ধবী মিতা বসুর সাথে খেলা করছিল। জনি রাহিকে খাবার কিনে দেওয়ার কথা বলে বান্ধবীর বাড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী হলুদ খেতে নিয়ে যায়। সেখানে জোরপূর্বক তার কানের সোনার দুল খুলে নেয়। বাবা ও মাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে তার গায়ের সোয়েটার ছিঁড়ে হাত ও পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে তার লাশ পুকুরে ফেলে দেয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)