৩৫ উর্দ্ধ বয়সী শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ‘ডান’ হওয়া আবেদন তুলে নেয়া হয়েছে
এনটিআরসিএ’র সুপারিশকৃত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৫ বছর উর্দ্ধ বয়সী শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ‘ডান’ হওয়া আবেদন তুলে নেয়া হয়েছে।
মহামান্য হাইকোর্টের একটি রিট পিটিশনের রায়কে কেন্দ্র করে কিছুসংখ্যক ৩৫ বছর উর্দ্ধ বয়সী শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিভ্রান্ত ও জটিলতা দেখা দিয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৫ বছর উর্দ্ধ বয়সী শিক্ষকদের তথ্যমতে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুসারে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রথম চাকুরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালের ১২ জুন জারিকৃত উক্ত এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুসারে চাকুরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হলে এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন সনদধারী ৩৫ বছর উর্দ্ধ বয়সী চাকুরি প্রার্থীদের চাকুরিতে প্রবেশের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এনটিআরসিএ-এর ৯ মার্চ ২০২৩-এর জরুরী বিজ্ঞপ্তির সূত্র জানায়, উক্ত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮-এর প্রথম চাকুরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়সসীমার বিরুদ্ধে নিবন্ধন সনদধারী প্রার্থীরা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নম্বর: ১৩৯/২০১৯। উক্ত মামলার রায় হয় ২২/০৫/২০১৯ তারিখে। এই রায়ে বলা হয়, ‘সরকার যে তারিখে বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করেছে তার পূর্বে যারা নিবন্ধন সনদ অর্জন করেছে তাঁদের জন্য বয়সসীমা প্রযোজ্য হবে না’।
সূত্র জানায়, এনটিআরসিএ উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টে একটি সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপীল মামলা দায়ের করে। আপীল মামলা নম্বর: ৩৯০০/২০১৯। এই মামলার রায় হয় ১১/১০/২০২০ তারিখে। এই ৩৯০০/২০১৯ নম্বর আপীল মামলা রায়ে ‘নিবন্ধন সনদধারী প্রার্থীদের দায়ের করা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের ১৩৯/২০১৯ নম্বর রিট পিটিশনের ২২/০৫/২০১৯ তারিখের রায় রদ-রহিত (ঊীঢ়ঁহমবফ) করা হয়।’
এনটিআরসিএ মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপীল ৩৯০০/২০১৯ নম্বর মামলার ১১/১০/২০২০ তারিখের রায়ের বিষয় অধিকতর স্পষ্ট হওয়ার জন্য আইন ও বিচার বিভাগে মতামত চাওয়া হয় এবং মহামান্য সুপ্রীমকোর্টে একটি রিভিউ মামলা দায়ের করে। মামলা নম্বর: ৫৪/২০২২। সূত্র জানায়, আইন ও বিচার বিভাগের মতামতে জানানো হয়, মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের ১৩৯/২০১৯ নম্বর রিট পিটিশনের ঙঢ়বৎধঃরাব ঢ়ধৎঃ কর্তন করে রায় প্রদান করে। কাজেই, আপীল বিভাগের রায়ের প্রেক্ষিতে নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের দায়ের করা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে ১৩৯/২০১৯ নম্বর রিট পিটিশনের ২২/০৫/২০১৯ তারিখের রায়ের সামগ্রীক কার্যকারিতা রদ-রহিত করা হয়েছে।
উক্ত মতামতে আরও বলা হয়েছে, “মাননীয় আপীল বিভাগের রায়ে হাইকোর্ট বিভাগের প্রদত্ত নির্দেশনা বহাল নেই এবং বর্তমানে বিদ্যমান নীতিমালার আলোকে ৩৫ বছর উর্দ্ধ বয়সীদের চাকুরিতে প্রবেশের সুযোগ না থাকায় ৩৫ উর্দ্ধ বয়সসীমার নিয়োগ প্রত্যাশীদের আবেদন ও নিয়োগ সুপারিশ বিবেচনার সুযোগ নেই।”
এনটিআরসিএ-এর ৯ মার্চ ২০২৩-এর জরুরী বিজ্ঞপ্তির সূত্র থেকেই প্রশ্ন এসে যায়, ৩৫ উর্দ্ধ নিবন্ধন সনদধারীদের দায়ের করা মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের ১৩৯/২০১৯ নম্বর রিট পিটিশনের ২২/০৫/২০১৯ তারিখের রায়-এর বিরুদ্ধে এনটিআরসিএ লিভ টু আপীল (৩৯০০/২০১৯ নম্বর) মামলা করায় ১১/১০/২০২০ তারিখের রায় হয় এবং উক্ত রায়ে ‘৩৫ উর্দ্ধ নিবন্ধন সনদধারীদের দায়ের করা মামলার রায় রদ-রহিত করা হলে এনটিআরসিএ এত দেরি করে কেন ৯ মার্চ ২০২৩ তারিখে জরুরী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উল্লেখিত তথ্য প্রকাশ করলো।
অথচ এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পূর্বেই এনটিআরসিএ ২০২১ সালের ৩০ মার্চ ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ,মাদরাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) সমূহের ৫৪ হাজার ৩ শত ৪টি শূন্যপদ পূরণের জন্য নিবন্ধন সনদধারীদের নিকট অনলাইনে আবেদন আহŸান করে এবং উক্ত ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের দ্বিতীয় লাইনে বলা হয়, “মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগের ৩৯০০/২০১৯ নং মামলার রায় অনুযায়ী ১২.০৬.২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ তারিখের পূর্বে যারা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ লাভ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য।” মহামান্য হাইকোর্টের ১৩৯/২০১৯ নম্বর রিট পিটিশনের সামগ্রীক কার্যকারিতা রদ-রহিত করেছে, সেক্ষেত্রে এনটিআরসিএ ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩৫ উর্দ্ধ বয়সী নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগ প্রদান করে কিভাবে?
এনটিআরসিএ-এর এই ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির দেখে ৩৫ বছর উর্দ্ধ বয়সী নিবন্ধনধারী প্রার্থীরা আবেদন করেন এবং এনটিআরসিএ অন্তত: সারে ৪ হাজার ৩৫ উর্দ্ধ প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করায় তারা নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্ত হন এবং ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কতিপয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক চাহিদা প্রদানকালে সেই সময় ওই পদসমূহ ননএমপিও থাকায় কিছু সংখ্যক ৩৫ উর্দ্ধ নিয়োগ সুপারিশ প্রাপ্ত শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক-৩ এর ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখের পত্রের আলোকে ৩৫ উর্দ্ধ বয়সী শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর এই শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আটকে থাকা আবেদন সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক উপপরিচালকের কার্যালয় হতে চলতি মে মাসের মাঝামঝি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন ই.এম.আই.এস-সেলে পাঠানো হয়। যাতে এই মে মাসেই ৩৫ উর্দ্ধ শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারেন।
কিন্তু দীর্ঘদিন ‘ননএমপিও’ শব্দটি থাকায় তাদের হতাশা বিরাজ করার মধ্যে এমপিও জটিলতা কাটিয়ে আলোর মূখ দেখলেও এনটিআরসিএ-এর ৯ মার্চ ২০২৩-এর জরুরী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় বাদ পড়ে থাকা কিছু সংখ্যক ৩৫ উর্দ্ধ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে আবারও এক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত ভুক্তভুগি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ‘ডান’ হওয়া আবেদন ২৪ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন ই.এম.আই.এস-সেল তুলে নিয়েছে।
এতদিন এনটিআরসিএ এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি কেন। তারা চুপ করে ছিলেন কেন। এই প্রশ্ন এখন বাদ পড়া ৩৫ উর্দ্ধ শিক্ষকদের। তারা বলছেন, “প্রায় সারে ৪ হাজার ৩৫ উর্দ্ধ প্রার্থী নিয়োগ পেয়ে চাকুরি করছেন এবং এতদিন যখন রদ-রহিতের কথা উল্লেখ করা হয়নি, তখন চলতি মে মাসে হাতে গোণা কয়েক জনের এমপিওভুক্তির ডান হওয়া আবেদন তুলে নেওয়া হলো কেন।”
সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক(ইংরেজী) মোঃ মোমিনুর রহমান বলেন, আমি এনটিআরসিএ’র ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির দেখে ৩৫ বছর উর্দ্ধ বয়সী নিবন্ধনধারী প্রার্থী হয়েই আবেদন করেছি। এমপিওভুক্তির জটিলতার কারণে আমি প্রায় দেড় বছর পর এমপিওভুক্তি হতে পারিনি। এখন সুযোগ পেলেও এনটিআরসিএ’র ৯ মার্চ ২০২৩ তারিখের জরুরী বিজ্ঞপ্তি দেখে চরম হতাশার মধ্যে পড়েছি। ফরিদপুর জেলার বেয়ালমারী এয়াকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক(ভৌত বিজ্ঞান) খোন্দকার সাফায়েত হোসেন বলেন, এনটিআরসিএ-এর ৯ মার্চ ২০২৩-এর জরুরী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় বিভ্রান্ত হয়ে এমপিওভুক্তির জন্য আমার ‘ডান’ হওয়া আবেদন ২৪ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন ই.এম.আই.এস-সেল তুলে নিয়েছে।
তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এনটিআরসিএ-এর ৯ মার্চ ২০২৩-এর প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি নিয়ে শিঘ্রই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)