কেশবপুরে মাচা পদ্ধতিতে পটোল চাষে বাম্পার ফলন
সোহেল পারভেজ, কেশবপুর প্রতিনিধি: যশোরের কেশবপুরে মাচা পদ্ধতিতে পটোল চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা। পটল একটি প্রধান গ্রীষ্মকালীন সবজি। উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু ও উর্বর মাটি পটল চাষের জন্য উত্তম। পটোল র্দীর্ঘ মেয়াদী ফসল এবং দাম ও ভাল পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন এ চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মাঠের চারিদিকে শুধু সবুজ পটোল খেত। মাচার উপরে একটির গায়ের উপর আর একটি পটোল যেন পদ্ম ফুলের মত দাঁড়িয়ে আছে। মাটি থেকে দুই-তিন ফুট উঁচুতে তার-বাঁশের তৈরি সারি সারি মাচার উপরে নিচে ঝুলছে অসংখ্য পটোল। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে এসব পটোল খেত পরিচর্যায় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার ভোর হলেই চাষীরা খেত থেকে সপ্তাহে একদিন পটোল তুলে বস্তায় ভরে ভ্যান বা অটোযোগে নিয়ে যাচ্ছেন আঠার মাইল বাজার, কেশবপুর বাজারসহ যশোর, খুলনার মোকামে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পটোলের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি দামও বেশি হওয়ায় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ খুঁজে পেয়ে কৃষকরা দারুন খুশি। উপজেলার আলতাপোল চারের মাথার বিস্তৃর্ণ মাঠ জুড়ে বিরাজ করছে। প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর মাসে পটোল চাষ শুরু হয়। একবার চাষ করলে একাধারে ২/৩ বছর পর্যন্ত রাখা যায়। জীবন কাল বেশি ও রোগ বালাই কম থাকায় কৃষকরা এ চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে আার্থিক ভাবে লাভবান হন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে পটোলের বিভিন্ন জাত রয়েছে। লম্বা ও চিকন, খাটো ও মোটা, গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ। ডোরা কাটা ও ডোরা কাটা বিহীন, পুরু ত্বক থেকে হালকা ত্বক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পটলের দুটি জাত আবিষ্কার করেছে। জাত দুটো উচ্চ ফলনশীল ও রোগবালাই সহ্য করতে পারে সেগুলো হলো ‘বারি পটল-১’ ও ‘বারি পটল-২’। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০ থেকে ৩৮ টন। বারি পটল-১ পটোল আকারে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা, বেড় প্রায় ১.৫ ইঞ্চি। ফলের ওজন প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ গ্রাম। প্রতি গাছের সর্বোচ্চ ২৪০ টি ফল ধরে, যার মোট ওজন প্রায় ১০ কেজি। একর প্রতি ফলন: ১২১৪৫ কেজি বা প্রতি শতাংশে ১২০ কেজি। এ ছাড়া বারি পটল-২ এর আকার ও বৈশিষ্ট্য ৩.৫ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা, বেড় ১.৫ থেকে ১.৭৫ ইঞ্চি হয়। প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ৫০ গ্রাম। প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ৩৮০ টি ফল ধরে, যার মোট ওজন ১৪ কেজি। একর প্রতি জমিতে ১৫,৩৮৫ কেজি বা প্রতি শতাংশে ১৫০ কেজি ফলন হয়।
প্রতিদিন সকালে সূর্য্য উঠার আগে পুরুষ ফুল দিয়ে মায়া ফুলকে (ছোঁয়াতে হয়) পরাগায়ন করাতে হয়। পরাগায়ন না করাতে পারলে পটোলে গ্রোথ ভাল আসে না। ফুল দিয়ে পরাগায়ন করানোর ১৫ দিন পরে পটোল বাজারজাত করার উপযোগী হয়। এ সময় পটোলে মাছি পোকায় আক্রন করে পটোলে ফল-ফুল ও কাণ্ড নষ্ট করে দেয়। এ সময় সপ্তাহে এক থেকে দু’বার কীটনাশক স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
চলতি খরিপ মৌসুমে কেশবপুর উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে ৭৮৬৪ হেক্টর জমির অধিকাংশ বেগুন, পটোল, লাউসহ সবজি খেত নষ্ট হয়ে যায়। উপজেলার আলতাপোল চারের মাথা এলাকা অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় বন্যার পানিতে পটোলের কোনো ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়াও ছিল অনুকুলে। যে কারণে কৃষকরা লাভের আশায় দিন গুনছেন। এলাকার চাকরীজীবী জি. এম. মনিরুজ্জামান জানান, তিনি এ মৌসুমে ১২ শতক জমিতে পটোলের আবাদ করেছেন। পটোল একটি দীর্ঘমেয়াদী ফসল। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। একারণে তার এলাকার কৃষকরা পটোল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ভালো ফলন হওয়ায় তিনি এপর্যন্ত এক লাখ টাকার পটোল বিক্রি করেছেন। তারমত এলাকার কৃষক জি.এম মনিরুজ্জামান ১২ শতক, হাবিবুর রহমান ১০ শতক, তুহিন ২২ শতক, আমিনুর রহমান ১০ শতক, আতিয়ার মোড়ল ১০ শতক ও আবুল মোড়ল ৮ শতকজমিসহ এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির কৃষকরা মাঠে পটোল আবাদ করেছেন। এবছর বৃষ্টির পরিমান বেশি হলেও পটোলের কোনো ক্ষতি না হওয়ায় গাছ যেমন সবুজ ও সতেজ তেমন ফলনও বাম্পার হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে শতকে ২০ থেকে ২৫ কেজী পটোল তোলা যাচ্ছে। বন্যার কারণে এবার পটোলের বাজার দরও বেশি। তাদের এলাকার অনেক ছাত্র এখন পটোল আবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
স্বাস্থ্য কর্মী হাবিবুর রহমান বলেন, পটোলের জন্য উত্তম বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ মাটি যা আমাদের এখানে আছে। এ ছাড়া উঁচু ও মাঝারি উঁচু, বন্যা মুক্ত এবং সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনযুক্ত হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বেলে মাটিতেও পটোল জন্মে, তবে ফলন কম হয়। বর্তমান স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজী পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজী দরে বিক্রি হচ্ছে। এদাম অব্যাহত থাকলে তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। এলাকার অনেক কৃষক পটোল ছাড়াও অন্যান্য সবজি আবাদ করে অর্থনৈকিভাবে স্বাবলম্বী।
সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাস বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি জমিতে পটোল আবাদ হয়েছে। ওই এলাকার মাটি সবজি চাষের উপযোগী। কৃষকদের লাভবান করতে দিক নির্দেশনাসহ সর্বাত্নকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। পটোল আবাদে খরচ কম লাভ বেশি হয়ে থাকে। যে কারণে দিন দিন পটোলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)