‘দেশের হিজড়াদের জন্য ভালো কিছু করাই জোনাকির মূল লক্ষ্য’


দেশের হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছেন ‘জোনাকি জোনাক’ হিজড়া। ময়মনসিংহ সদরের বাসিন্দা। তার ছয় ভাইয়ের মধ্যে জোনাক হিজড়া সবার ছোট। বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। মা গৃহিণী। অপর পাঁচ ভাই সবাই প্রতিষ্ঠিত। তিনি সমাজকল্যাণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর। ২০১৪ সালে মাস্টার্স শেষ করে তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থায় চাকরি করেন। বর্তমানের রাজধানীর একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি হিজড়াদের কল্যাণে ও হিজরাদের জীবন যাত্রার মান উন্নায়ন নিয়ে কাজ করছেন। দেশের হিজড়াদের জন্য একটা কিছু করাই তার মূল লক্ষ্য।
জোনাকি হিজড়া বলেন, পৃথিবীর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও তথা দিনাজপুরেও হিজড়াদের দেখতে পাওয়া যায়। একটি বেসরকারি পরিসংখ্যান মতে, দেশে এখন লাখেরও বেশি হিজড়া রয়েছেন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ এই হিজড়াদের সামাজিক মর্যাদার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। আমাদের সমাজে হিজড়ারা একজন মানুষ হিসেবে মর্যাদাতো দূরের কথা, কুকুর-বিড়ালের অধিকারও পায় না। হিজড়া হয়ে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট পরিবারটি ওই শিশুটিকে আর তাদের সঙ্গে রাখতে চায় না। নানা লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার হয়ে শিশুটি অবশেষে পূর্ণবয়স্ক হতে না হতেই যোগ দেয় ছিন্নমূল কোনো হিজড়াদের দলে। এরপর তার জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ যাতনা। সমাজে এটাই হিজড়াদের স্বাভাবিক পরিণতি। এই সমাজ তাদেরকে কর্মসংস্থানের সুযোগ কিংবা সামাজিক স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নয় বলে হিজড়াদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে যায় মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে ভিক্ষা করা। এভাবে অন্যের অনুকম্পার ওপর বেঁচে থাকার এক অভিশপ্ত সংগ্রামে যুক্ত হয়ে পড়ে এরা। স্বাভাবিক শ্রমজীবীদের মতো উপার্জনের কাজে এদেরকে জড়িত হতে দেখা যায় না। হাটে-বাজারে চাঁদা কিংবা বিনামূল্যে ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করেই এরা জীবিকা নির্বাহ করে।
এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অঙ্গভঙ্গি করে মনোরঞ্জনকারী হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে তারা নাচগানে অংশ নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিকৃত যৌন পেশাসহ নানারকম অপরাধের সাথেও জড়িয়ে পড়ে। দেশে অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সামাজিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার নানারকম উদ্যোগ নিলেও হিজড়াদেও কল্যাণে সামান্যও নেয়া হয় নি এ পর্যন্ত। অথচ মানুষ হিসেবে হিজড়ারাও মানবাধিকারের যোগ্য। জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার আওতায় প্রত্যেক মানুষই কিছু মৌলিক অধিকারের দাবিদার। যেমন- দাসত্ব থেকে মুক্তি, ভোট প্রদান, মত প্রকাশ, কাজ করা, মানসম্মত জীবন-যাপন, আইনের আশ্রয় ও নির্যাতন থেকে মুক্তি এবং বিবাহ ও পরিবার গঠনের মতো অধিকারগুলো। এসব অধিকারপরিপন্থী কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধের জন্যে রয়েছে অনেক আন্তর্জাতিক সনদ ও চুক্তি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, হিজড়াদের জীবনে এসব অধিকারের যৎসামান্য প্রভাবও কখনো পড়তে দেখা যায় না। একারণে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের কাছে প্রশ্ন উঠে, মানবাধিকারবঞ্চিত এই হিজড়ারা কি তাহলে ‘মানুষ’ নয়? বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে স্বীকৃত মানুষ হিসেবে বসবাস করার অধিকার পেলে হিজড়ারাও স্বাভাবিক মানুষের মতো সামাজিক সম্পদে পরিণত হতে পারে। হিজড়াদের রয়েছে পরিশ্রমের ক্ষমতা, যার সদ্ব্যবহার করে তারাও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। তবে দীর্ঘদিনের অবহেলিত এই শ্রেণীটিকে সমাজের মূলস্রোতের অন্তর্ভূক্ত করা খুব সহজ কাজ নয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তার সমন্বয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে হিজড়াদের কল্যাণে কাজ করলে তবেই কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা সম্ভব।
এর দ্বারা বাহিকতায় হিজরাদের জীবন যাত্রার মান উন্নায়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে জোনাকি হিজড়া। তিনি করোনা কালে হিজড়াদের রাজধানীর হিজড়াদের বাসায় বাসায় খাবার নিয়ে যান। এমনকি ভিবিন্ন জেলার হিজড়াদের খোঁজ খবর নেন তিনি। জোনাকির একটাই উদ্দেশ্য দেশের কোন হিজড়া যাতে খারাপ পথে না যায় এবং তাদেরকে ভালো কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা। জোনাকির লক্ষ্য পূরণে সরকারসহ দেশের অন্যান্য সংস্থাগুলো সহযোগীতা প্রয়োজন। সরকারের সহযোগীতা ছাড়া জোনাকির লক্ষ্য পূরণ কোন ভাবেই সম্বভ নয়। তাই সরকারের কাছে হিজড়াদের জন্য জোনাকির সাহায্যের আবেদন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
