‘দৌড়াও হাসিনা দৌড়াও’ গেমে মেতেছেন নেটিজেনরা


ফোনে কোনো কারণে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন হয়ে গেলে বিরক্ত হয়ে কিংবা শখের বশে গুগল ক্রোমের বিখ্যাত ডাইনোসর গেম খেলেননি এমন মানুষ সম্ভবত খুব কমই আছেন।
এবার গুগল ক্রোমের সেই অফলাইন ডাইনোসর গেমের আদলে এক রাজনৈতিক স্যাটায়ার গেম বানিয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী তাসরিফ বিন মিজান।
গেমটির নাম—‘দৌড়াও হাসিনা দৌড়াও’। প্রকাশের পর মাত্র এক রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে গেমটি। খেলেছেন কয়েক লাখ ব্যবহারকারী।
নতুন এই স্যাটায়ার গেমে ডায়নোসরের স্থলে এবার দৌড়াচ্ছেন গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দৌড়াচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পেছনে। আর তাকে আটকাতে প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি (ড. ইউনূস) হাতে বাঁশ নিয়ে অপেক্ষায়—যেন সুযোগ পেলেই আঘাত করতে পারেন!
গেমে খেলোয়াড়দের কাজ হলো শেখ হাসিনার চরিত্রকে দৌড় করিয়ে বাঁশ হাতে থাকা প্রতিপক্ষের আক্রমণ এড়িয়ে যাওয়া। খেলাটি শুরু হতেই বাজতে থাকে শেখ হাসিনার কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা—‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি, দেবার কিছু নেই; আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই’।
পথে সংগ্রহ করতে হয় তার বাবা শেখ মুজিবের ছবি দেওয়া বিশেষ কয়েন। পেছনে উড়তে থাকে ভারতের জাতীয় পতাকা, হাসিনা প্রাণপণে ছুটে চলেন নরেন্দ্র মোদির পেছনে আর তার সম্মুখে বাঁশ হাতে বাধা হয়ে দাড়িয়ে থাকেন প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকা ইউনূস।
তবে গেমের আসল মজা খেলায় হেরে যাওয়ার পর। দৌড়াতে গিয়ে বা কয়েন সংগ্রহ করতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেই শোনা যাবে এক পরিচিত সংলাপ— ‘কী অপরাধটা করেছি আমি?’
এখানেই শোনা যাবে এক পরিচিত সংলাপ— ‘কী অপরাধটা করেছি আমি?’
তাসরিফ গণমাধ্যমকে জানান, নতুন একটি গেম ইঞ্জিন নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করছিলেন। মিমের ধারণা মাথায় ছিলই, তখনই ভাবলেন—কেন না জনপ্রিয় ডাইনোসর গেমের আদলে একটি রাজনৈতিক স্যাটায়ার গেম বানানো যায়! এরপর মাত্র ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় ‘দৌড়াও হাসিনা দৌড়াও’।
তবে তাসরিফ এটিকে গেম বলতে নারাজ। বরং তিনি এটিকে ‘ভাইরাল মিম’ হিসেবেই দেখছেন। তার ভাষায়, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গেম বানালে সেটি কখনোই বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে না। এটি মূলত মজা করার জন্য বানিয়েছিলাম, তবে জানতাম—সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে এতে।’
এই গেমটি শুধু হাসি-তামাশার খোরাক জুগিয়েছে এমন নয়, বরং শুরু হয়েছে বিতর্কও। কারও কাছে এটি নিছক ব্যঙ্গাত্মক বিনোদন, আবার অনেকেই একে অসম্মানজনক বলে মনে করছেন।
তাসরিফ জানান, গেম প্রকাশের পর থেকেই তিনি প্রচুর হুমকি পাচ্ছেন—কেউ বলছেন তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে, কেউবা গেমের সাইট হ্যাক করার হুমকি দিচ্ছেন। তবে এ নিয়ে তিনি খুব একটা বিচলিত নন, কারণ এমন কিছু যে ভাইরাল হবেই, তা তিনি আগেই জানতেন।
গেমের ওয়েবসাইটে তাসরিফ জানান, এই গেমের প্লে স্টোর ভার্সন আসবে।
তবে এত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও তাসরিফ ভাবছেন আরেকটি নতুন গেম বানানোর কথা। যেখানে খেলোয়াড়ের ভূমিকায় থাকবে বিপ্লবী ছাত্র, জনতা, তৌহিদি জনতা, কর্মজীবী। তারা লড়াই করবেন ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে।
তাসরিফ আরও জানিয়েছেন, সেখানে খেলোয়াড় চরিত্রের বিপরীতে শত্রু চরিত্রে শুরুর ধাপে পর্যায়ক্রমে থাকবে- হেলমেট লীগ, দুর্নীতিবাজ পুলিশ এবং ফ্যাসিস্ট পাতি নেতা। পরের ধাপে এলিট শত্রু চরিত্রে থাকবেন- ‘শাহবাগী’ এবং ‘কাউয়া কাদের’। চূড়ান্ত ধাপে থাকবেন ‘লেজার মুজিব’ ও ‘শেখ হাসিনা’।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
