বগুড়ায় ধর্ষণ মামলায় জামিন পেলেন সেই তুফান সরকার
বগুড়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকারকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
রবিবার বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এর বিচারক একে এম ফজলুল হক এই জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
পৌনে চার বছর পর আলোচিত এই মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকার জামিন পেলেন। তুফান সরকার বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ও জেলা শহরের চক সূত্রাপুরের বাসিন্দা।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন আবদুল মোন্নাফ, নুরুস সালাম ও রবিউল ইসলাম।
আইনজীবী আবদুল মোন্নাফ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারাধীন থাকা মামলায় তার মক্কেল তুফান সরকার জামিন পেয়েছেন।
চুল কেটে দেয়া ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের অপর মামলায় তুফান সরকার জামিনে রয়েছেন কি না, জানতে চাইলে আইনজীবী আবদুল মোন্নাফ কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নরেশ মুখার্জি বলেন, রবিবার ধর্ষণ মামলার জামিন শুনানির সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তুফান সরকারের জামিনের ঘোর বিরোধিতা করেছেন। আদালত দুইপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে তাকে জামিন দিয়েছেন।
নরেশ মুখার্জি আরও বলেন, মামলার প্রধান সাক্ষী বাদী নিজেই। এছাড়া ভিকটিম মেয়েটিও মামলার অন্যতম সাক্ষী।
রবিবার প্রধান আসামির জামিন শুনানির আগে মামলার গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
নরেশ চন্দ্র বলেন, তুফান সরকার মামলার পর থেকেই কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মা মেয়েকে নির্যাতনের পর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে আরেকটি মামলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রয়েছে। সেই মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন কি না, তা জানা নেই। তুফান সরকার ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা আগে থেকেই জামিনে রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আলোচিত এই মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকারসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এর বিচারক এ কে এম ফজলুল হক। এই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আসামিপক্ষ আবেদন করলে ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই আদেশ খারিজ করে আদালত ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বহাল রাখেন।
অভিযুক্ত ১০ আসামির মধ্যে প্রধান আসামি তুফান সরকার ছাড়া অন্যরা হলেন- তুফানের স্ত্রী তাছমিন রহমান ওরফে আশা, আশার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান ওরফে রুমকি, তুফানের শাশুড়ি লাভলী রহমান ওরফে রুমি, তুফানের সহযোগী আতিকুর রহমান ওরফে আতিক, মুন্না, আলী আযম, মেহেদী হাসান ওরফে রুপম, সামিউল হক ওরফে শিমুল ও এমারত আলম খান ওরফে জিতু। তুফান সরকার ছাড়া অন্যরা আগে থেকে দুই মামলাতেই জামিনে রয়েছেন।
২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বৈত বেঞ্চ আলোচিত এই ধর্ষণ মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে মা-মেয়েকে নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় করা আরেকটি মামলায় গত বছরের ৭ নভেম্বর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ শাহরিয়ার তারিকের আদালত ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন (চার্জ গঠন) করা হয়।
বগুড়ার জেল সুপার মনির আহম্মেদ জানান, তুফান সরকারের জামিন হয়েছে শুনেছি। কিন্তু আরও মামলা থাকায় আপাতত হাজতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই মেয়েকে (১৭) ভালো কলেজে ভর্তি ও বিয়ের প্রলোভনে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। পরে এই ঘটনায় বিচার চাইতে গেলে বিচারের নামে মেয়ে ও তার মাকে কৌশলে নির্যাতনের এক পর্যায়ে নাপিত ডেকে এনে তাদের দু’জনের মাথার চুল কেটে দেয়। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই বগুড়া সদর থানায় ধর্ষণ এবং মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। এই ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)