ভোট পড়েছে শতকরা ৭৬ ভাগ
কলারোয়া পৌরসভায় মেয়র নৌকার বুলবুল, কাউন্সিলর হলেন যারা
কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৩৪৬৯টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি সাবেক মেয়র আক্তারুল ইসলামের স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী জগ প্রতীকের নার্গিস সুলতানা পেয়েছেন ১৬২৮ ভোট। অপর প্রার্থী বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের শেখ শরীফুজ্জামান তুহিন পেয়েছেন ৫০৫ ভোট। আর আগে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোবাইল ফোন প্রতীকের সাজেদুর রহমান খাঁন চৌধুরী মজনু পেয়েছেন ৮৩ ভোট ও সাবেক মেয়র আক্তারুল ইসলাম পেয়েছেন ৬ ভোট।
শনিবার (৩০ জানুয়ারী) সন্ধ্যার পর থেকে কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন অফিসার নাজমুল কবীর প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন।
এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিপুল সংখ্যক ভোটারদের উপস্থিতিতে কলারোয়া পৌরসভার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রার্থীদের নানান অভিযোগও বাড়তে থাকে। বিভিন্ন অভিযোগে দুপুরের আগেই মেয়র প্রার্থী বিএনপি’র ধানের শীষের শেখ শরীফুজ্জামান তুহিন ও স্বতন্ত্র জগ প্রতীকের নার্গিস সুলতানা পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। একই সময় ২নং ওয়ার্ডের ৩জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩নং ওয়ার্ডের ৩জন কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
তবে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েও ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী উটপাখি প্রতীকের রফিকুল ইসলাম ও ২নং ওয়ার্ডের পাঞ্জাবি প্রতীকের আসাদুজ্জামান তুহিন বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে, দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন হয়। পৌর এলাকার ৯টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিরতীহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। ভোটার ছিলো মোট ২১ হাজার ২৮০জন। মোট ভোট পড়েছে শতকরা ৭৬ ভাগ। বৈধ ভোট ১৫৭০১, বাতিল হয়েছে ৩৮০ ভোট।
সকাল থেকেই পৌর এলাকার গোপিনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, তুলশীডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রসহ প্রায় সকল কেন্দ্রেই নারী-পুরুষদের দীর্ঘ লাইন পরিলক্ষিত হয়। আর সন্ধ্যায় ভোট গনণাকে কেন্দ্র করে ৭নং ওয়ার্ডে মৃদু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
৯টি কেন্দ্রে মেয়র পদে যে যত ভোট পেলো:
মেয়র পদে ভোট পেয়েছেন ১নং ওয়ার্ড কলারোয়া মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রে নৌকা ১৪১৯ ভোট, ধানের শীষ ১৬, মোবাইল ফোন ৮, জগ ৪৬ ভোট। ২নং ওয়ার্ড তুলশীডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ১৮৭৪ ভোট, ধানের শীষ ২১ ও জগ ভোট। ৩নং ওয়ার্ড কলারোয়া সরকারি জিকেএমকে পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্রে নৌকা ১৪৫৩ ভোট, ধানের শীষ ১২, মোবাইল ১১ ও জগ ১৩৯ ভোট। ৪নং ওয়ার্ড কলারোয়া প্রি-ক্যাডেট স্কুল কেন্দ্রে নৌকা ৯১৭ ভোট, ধানের শীষ ৭৬, মোবাইল ফোন ১১ ও জগ ২১৩ ভোট। ৫নং ওয়ার্ড ঝিকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ১৫০৯, ধানের শীষ ৬১, মোবাইল ফোন ১৩ ও জগ ৩১৭ ভোট। ৬নং ওয়ার্ড গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ১৬১৫ ভোট, ধানের শীষ ৬৭, জগ ২৭৮ ভোট। ৭নং ওয়ার্ড মুরারীকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ১৭৪৬ ভোট, ধানের শীষ ১৪৯, মোবাইল ফোন ২৭ ও জগ প্রতীক পেয়েছে ৪৮০ ভোট। ৮নং ওয়ার্ড শ্রীপতিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ১৮২৯ ভোট, ধানের শীষ ৬৭, মোবাইল ফোন ৫ ও জগ ২৮ ভোট। ৯নং ওয়ার্ড মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ১১০৭ ভোট, ধানের শীষ ৩৬, মোবাইল ফোন ৮ ও জগ ৯৬ ভোট।
কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন যারা:
১নং ওয়ার্ডে (তুলশীডাঙ্গা পশ্চিম) বিজয়ী হয়েছেন ডালিম প্রতীকের জিএম শফিউল আলম শফি। তিনি ভোট পেয়েছেন ৫৩২। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি উটপাখি প্রতীকের মফিজুল ইসলাম পেয়েছেন ৪১১ ভোট। অপর প্রার্থী টিবিল ল্যাম্প প্রতীকের মেহিদী হাসান পেয়েছেন ২৩৯ ভোট ও পানির বোতল প্রতীকের আসাদুজ্জামান পেয়েছেন ১৮৩ভোট।
২নং ওয়ার্ডে (তুলশীডাঙ্গা পূর্ব ও বাজার) বিজয়ী হয়েছেন পাঞ্জাবি প্রতীকের আসাদুজ্জামান তুহিন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৮৩৯। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি পানির বোতল প্রতীকের সাঈদুজ্জামান পেয়েছেন ৬১৮ ভোট। অপর প্রার্থী ডালিম প্রতীকের শেখ বদরুজ্জামান বদি ২৫৩ ভোট, গাজর প্রতীকের আব্দুল হাকিম ৫৪ ভোট, ব্লাক বোর্ড প্রতীকের এসএম কামরুজ্জামান বাবু ২৭ ভোট ও উটপাখি প্রতীকের শেখ রবিউল ইসলাম ৩৭ ভোট পেয়েছেন।
৩নং ওয়ার্ডে (গদখালী) ৬০৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর উটপাখি প্রতীকের রফিকুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ডালিম প্রতীকের এএসএম এনায়েত খান টুন্টু পেয়েছেন ৫৯৫ ভোট। অপর প্রার্থী পাঞ্জাবি প্রতীকের আসাদ খান ১০৯ ভোট, পানির বোতল প্রতীকের মুজাহিদুল ইসলাম ১৬৮ ভোট পেয়েছেন।
৪নং ওয়ার্ডে (ঝিকরা উত্তর) ৪৯৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের মেজবাহ উদ্দীন খান লিলু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি পাঞ্জাবি প্রতীকের মাগফুর রহমান রাজু পেয়েছেন ৪২৭ ভোট। অপর প্রার্থী ডালিম প্রতীকের শরীফুজ্জামান উজ্জ্বল ১০১ ভোট, উটপাখি প্রতীকের আমানুল্লাহ আমান ১২৬ ভোট পেয়েছেন।
৫নং ওয়ার্ডে (ঝিকরা দক্ষিণ) ৯৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন উটপাখি প্রতীকের শেখ জামিল হোসেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি ডালিম প্রতীকের সঞ্জয় সাহা পেয়েছেন ৮৯২ ভোট।
৬নং ওয়ার্ডে (গোপিনাথপুর) ৮৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন উটপাখি প্রতীকের আলফাজ উদ্দীন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ডালিম প্রতীকের আবু জাফর সরদার পেয়েছেন ৮১৯ ভোট। অপর প্রার্থী পানির বোতল প্রতীকের আজহারুল ইসলাম ৩০ ভোট, পাঞ্জাবি প্রতীকের শফিউদ্দীন বিশ্বাস ২৩ ভোট।
৭নং ওয়ার্ডে (মুরারীকাটি দক্ষিণ) ১১৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ডালিম প্রতীকের জাহাঙ্গীর হোসেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি উটপাখি প্রতীকের আজিজুর রহমান পেয়েছেন ১০৬১ ভোট। সেখানে পাঞ্জাবি প্রতীকের আরিজুল মোড়ল ৩৪ ভোট, পানির বোতল প্রতীকের সাইদুর রহমান মল্লিক ৫১ ভোট পেয়েছেন।
৮নং ওয়ার্ডে (মুরারীকাটি উত্তর) ১০১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন পানির বোতল প্রতীকের শেখ ইমাদুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ৪৬৭ভোট। অপর প্রার্থী ব্রিজ প্রতীকের গোস্ট চন্দ্র পাল ১২৫ভোট, পাঞ্জাবি প্রতীকের শেখ আব্দুস সাত্তার ৯০ভোট, উটপাখি প্রতীকের মাহফুজুর রহমান ৫৭ ভোট, ডালিম প্রতীকের আফজাল হোসেন ১৬ ভোট পেয়েছেন।
৯নং ওয়ার্ডে (মির্জাপুর) ৫৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ডালিম প্রতীকের আকিমুদ্দিন দফাদার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি উটপাখি প্রতীকের আব্দুল লতিফ সরদার পেয়েছেন ৪৩৪ ভোট। অপর প্রার্থী পানির বোতল প্রতীকের রুহুল কুদ্দুস ১০৯ ভোট, টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের শওকত হোসেন ৪১ ভোট ও পাঞ্জাবি প্রতীকের মোস্তাফিজুর রহমান ২১ ভোট পেয়েছেন।
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন যারা:
সংরক্ষিত-১নং (১নং, ২নং ও ৩নং) ওয়ার্ডে ২৩৮৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন টেলিফোন প্রতীকের ফারহানা হোসেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বলপেন প্রতীকের রেজওয়ানা আক্তার লিলি পেয়েছেন ৯১৫ ভোট। অপর প্রার্থী আনারস প্রতীকের নাজমা বেগম দোস্তি ৫৯৪ ভোট, চশমা প্রতীকের সালমা আক্তার পান্না ৭৮৯ ভোট পেয়েছেন।
সংরক্ষিত-২নং (৪নং, ৫নং ও ৬নং) ওয়ার্ডে ১৬২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন জবা ফুল প্রতীকের সন্ধ্যা রাণী বর্মণ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আনারস প্রতীকের রেশমা খাতুন পেয়েছেন ১৫৬৭ ভোট। অপর প্রার্থী টেলিফোন প্রতীকের সেলিনা পারভীন ভোট ৫৪৮, চশমা প্রতীকের খালেদা আক্তার ১২১৯ ভোট পেয়েছেন।
সংরক্ষিত-৩নং (৭নং, ৮নং ও ৯নং) ওয়ার্ডে ২০৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের আংটি প্রতীকের দিথী খাতুন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জবা ফুল প্রতীকের হাসিনা আক্তার পেয়েছেন ১১৮৩ ভোট। অপর প্রার্থী টেলিফোন প্রতীকের জাহানারা খাতুন ৭৬৪ ভোট, আনারস প্রতীকের শাহানাজ খাতুন ৮৬৪ ভোট, চশমা প্রতীকের রুপা খাতুন ৫৮২ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে, মেয়র পদে পাঁচজন প্রতীক পেলেও ইতোমধ্যে সাবেক মেয়র গাজী আক্তারুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মজনু চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকে নৌকা প্রতীকের মনিরুজ্জামান বুলবুল, ধানের শীষের শেখ শরিফুজ্জামান তুহিন ও সাবেক মেয়র গাজী আক্তারুল ইসলামের স্ত্রী জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নার্গিস সুলতানা৷
এছাড়া ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন ও তিনটি সংরক্ষিত আসনে ১৩ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
পৌরসভাজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে জানান এই নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনোরঞ্জন বিশ্বাস।
তিনি জানান, পৌর এলাকায় ৯জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৯টি ভ্রাম্যমাণ টিম, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার, স্ট্রাইকিং ফোর্স নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)