বেনাপোল বন্দরে ১৮ কোটি টাকা মূল্যের ক্যামিকেল চালান জব্দ
মোঃ ওসমান গনি, বেনাপোল (যশোর): জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে বেনাপোল স্থলবন্দরে ১৮ কোটি টাকা মূল্যের কেমিকেল চালান জব্দ কাস্টমস। যার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিফ লেদার লিমিটেড। বিপুল পরিমাণে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে পণ্য চালানটি বন্দর থেকে খালাসের চেষ্টা করছিল সিএন্ডএফ এজেন্ট মোশারফ ট্রেডিং। আমদানিকারকের ঘোষণা দেওয়া ফরমিক এসিড কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে সালফিউরিক এসিড শনাক্ত হয়।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেলে কাস্টমসের একটি প্রতিনিধি দল বন্দরের ৩৮ নাম্বার শেডে রক্ষিত এসিডের চালানটি জব্দ করা হয়।
এর আগে কাস্টমসের সহকারী কেমিকেল পরীক্ষক তপন কুমার দেবনাথ স্বাক্ষরিত পত্রে সালফিউরিক এসিড শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত ২২ জুন বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১৬ হাজার ৪২৫ কেজি ফরমিক এসিড নামে পণ্য আমদানি করে আমদানিকারক রিফ লেদার লিমিটেড। যার আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছে ৯ হাজার ৬০৭ ইউএস ডলার।
পরে বন্দরের ৩৮ নাম্বার কেমিকেল শেডে আনলোড করে। পণ্য চালানটি বন্দর থেকে খালাসের দায়িত্ব নেয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মোশারফ ট্রেডিং। এসময় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) সদস্যদের কাছে গোপন খবর আসে আমদানি কারক ফরমিক এসিডের পরিবর্তে সালফিউরিক এসিড আমদানি করেছে। বিষয়টি এনএসআই বেনাপোল ইউনিটের সদস্যরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। পরে কাস্টমস তাদের নিজস্ব ল্যাবে ফরমিক এসিড টেস্ট করে সালফিউরিক এসিড শনাক্ত করে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি মোশারেফ হোসেন জানান, তিনি পণ্য চালানটি ছাড় করানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির অভিযোগে কাস্টমস কেমিকেল চালানটি প্রাথমিক পরীক্ষা করে সালফিউরিক এসিড পেয়েছেন। বিষয়টি তিনি আমদানিকারককে জানিয়েছেন। তবে আমদানিকারক কাস্টমসের এ অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে পুনরায় পরীক্ষার দাবি জানিয়েছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কাস্টমস কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আমদানিকৃত পণ্য চালানটি তদারকি ও করণীয় বিষয়ে দেখছেন।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার সাফায়েত হোসেনকে একাধিকবার ফোন এবং ম্যাসেজ দিলেও তিনি উত্তর দেননি। কোনো অনিয়মের বিষয়ে তথ্য প্রদানে বরাবরই বেনাপোল কাস্টমস কর্মকর্তাদের অনীহা দেখা যায়।
উল্লেখ্য, সালফিউরিক এসিড আমদানির ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমোদন প্রয়োজন। আমদানি কারক অনুমোদনবিহীনভাবে উক্ত সালফিউরিক এসিড রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে আমদানি করে।বর্তমানে এ চালানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উক্ত সালফিউরিক এসিডের বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ১৮ কোটি টাকা বলে জানানো হয়।
বাণিজ্য সংশিষ্টরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্য তরারকি করে থাকে কাস্টমস, বন্দর। আর শূন্যরেখায় বিজিবি সদস্যরা আমদানি বাণিজ্যে চোরাচালান প্রতিরোধে তদারকি করে। তবে সম্প্রতি শুল্ককর ফাঁকি রোধে তদারকি শুরু করেছে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থ্যা এনএসআই। একাজে বেশ সফলতা তাদের দেখা গেছে। যে সব অনিয়ম কাস্টমস শনাক্ত করতে ব্যর্থ হতে দেখা গেছে সেসব ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখে কাস্টমসকে সহযোগিতা করছে এনএসআই। সম্প্রতি তারা বন্দরে আমদানি পণ্য প্রবেশ দ্বারে বিজিবি, বন্দর ও কাস্টমসের পাশাপাশি স্থাপন করেছে সিসি ক্যামেরা।
এদিকে সাধারণ সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে পরিমান পণ্য আমদানি হয় তাতে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসার কথা। কথা দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের যোগসাজোগে কাস্টমসের এক শ্রেণির কর্মকর্তারা শুল্ককর ফাঁকিতে সহযোগিতা করে থাকে। এতে কাঙ্খিত রাজস্ব হারায় সরকার। আর কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়ে এসব দুর্নীতিবাজরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)