ননএমপিও শিক্ষকদের ঈদের আনন্দ ও অপূর্ণতা
পবিত্র ঈদ উল আজহা হলো ত্যাগের উৎসব। যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও ত্যাগের আনন্দে উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়।ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদে মুসলিম জনগণ যার যার সাধ্যমতো পশু কোরবানি দেন। অতি পরিতাপের বিষয়, করোনা সংক্রমন প্রাকৃতিক মহামারী আর ননএমপিও নামক প্রলয়ংকারী মনুষ্যকৃত এ দুর্ভোগে কোরবানির ঈদের উৎসবের ঔজ্জ্বল্যকে যেন ফিকে করে ফেলেছে। সব মিলিয়ে ননএমপিও শিক্ষক সমাজ যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাকে সন্তোষজনক বলা যায় না। সারা দেশের বেতনহীন ননএমপিও শিক্ষকদের দুরবস্থার কারণে ঈদের আনন্দঘন অভিজ্ঞতাবাদ স্বাভাবিকভাবেই ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জমান।
শিক্ষকতা শুধুই পেশা নয়, একটি মহান ব্রত। শিক্ষক শব্দটির সঙ্গে জ্ঞান, দক্ষতা, সততা, আদর্শ, মূল্যবোধ শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন শিক্ষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখেন। কথাগুলো সর্বজনস্বীকৃত ও বহুল ব্যবহৃত। একজন শিক্ষক কখন শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, এর উত্তরে অনেক ভিন্নতা আসাই স্বাভাবিক; কিন্তু শিক্ষক হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরণে তিনি কার্পণ্য করেননি, এটি সদা সত্য।
বেতনহীন হলেও নন এমপিও শিক্ষকরাও এ সমাজেরই মানুষ, সুতরাং কিছু সীমাবদ্ধতা থাকাটাই স্বাভাবিক। যেখানে ননএমপিও শিক্ষক সমাজ মানবেতর জীবন যাপন করে দিনাতিপাত করছে সেখানে ঈদূল আযহার এ ত্যাগের মহিমা উৎসব এ অংশগ্রহণ কতটা যৌক্তিক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ যেন সাধ আছে সাধ্যি নেই। যাদের দু বেলা দু মুঠো খাবার জোগাড় নিমিত্তে হিমশিম খেতে হয়, তাদের আবার পশু কোরবানি কিভাবে সম্ভব হয়; তবুও শিক্ষক বলে কথা!!
সমাজে সম্মান নিয়ে বসবাস করতে হলে, মর্যাদা রক্ষা করতে হলে, পশু কোরবানী তে অংশগ্রহনের চেষ্টা করতে হয় এই বেতনহীন নন এমপিও শিক্ষক সমাজ কে। লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা ভেতরের পশুত্ব ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জনের প্রয়াসের মধ্যে কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য নিহিত। “নন এমপিও” নামক এ অভিশাপ আচ্ছন্ন ব্যক্তিবর্গের এহেন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গ কতটুকু আত্মশুদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে আসন্ন ঈদুল আযহায় তা প্রশ্নাতীত!!
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিবছর এমপিওভুক্তির আওতায় এনে অধিকাংশ শিক্ষক- কর্মচারীবৃন্দকে স্বচ্ছল জীবনযাপনের সুগমপথ দেখানোর ব্যবস্থা করতে চাইলেও অদ্যবধি এমপিও আবেদন গৃহীত হয় নি।
যতদিন করবে না এমপিওভুক্তি প্রদান,
ততদিন সম্ভব না; নন’দের দুঃখ মোচন!
ঈদের অনেক আগে থেকেই বেতন হীন নন এমপিও শিক্ষক সমাজের এ দুর্ভোগ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে লেখালেখি হয়েছে, কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ হয়নি। নানা উদ্যোগ ও তৎপরতা নেয়ার কথা থাকলেও তা বিলম্বিত হওয়ায় নন এমপিওদের অসম্মান ও বিড়ম্বনার শেষ নেই ।
এমপিও নীতিমালা সংশোধনী অবশ্যম্ভাবী নতুবা এই কষ্টের ভোগান্তির সীমা থাকবে না। ভোগান্তি লাঘবের জন্য গ্রাম – শহরের এবং নারী শিক্ষার অনুপাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা চাওয়া বাঞ্ছনীয় এবং শূণ্য মার্কিং বাতিল করে নূন্যতম নম্বর প্রদানের সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত। এ জন্য দ্বায়িত্বরতদের বাড়তি মনোযোগ ও দায়িত্বশীলতা বাড়ানো উচিত। শিক্ষা ব্যবস্থার এ বিশৃঙ্খলা ও অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টির আশঙ্কা কমানোর লক্ষ্যে এসব ব্যাপারে সতর্কতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।
সর্বোপরি,আমরা বেতনহীন নন এমপিও শিক্ষক সমাজ কামনা করি, ঈদুল আজহার এই আনন্দময় উৎসবে সকল শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল শুভেচ্ছা। পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দ অমলিন থাকুক। সবাইকে ঈদ মোবারক।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)