নির্বাচনের আগে ভিসা নিষেধাজ্ঞা: পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে বাংলাদেশের
আসছে নতুন বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আসন্ন এ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে চাপ দেওয়ার অংশ হিসেবেই মার্কিন প্রশাসন এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়ায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিনানশিয়াল টাইমস রোববার (১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন পত্রিকাটির প্রতিনিধি বেঞ্জামিন পারকিন। তিনি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে লিখে থাকেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি তার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়েছেন, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে খর্ব করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এগুলো (সম্ভাব্য) জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করারই প্রচেষ্টা।
‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য’ অনির্দিষ্ট সংখ্যক বাংলাদেশিদের ওপর গত মাসে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন বলে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
ব্রিটেনও শেখ হাসিনার সরকারকে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য চাপ দিয়েছে।
পশ্চিমাদের (এমন) তীব্র সমালোচনার বিরোধিতা করছে বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভিসানীতি ওয়াশিংটনের ‘বিশেষ ক্ষমতা’। যদিও গত মাসে ঢাকায় ফিনানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচনী ‘বিল্ড আপ’ এর সমালোচনাকে ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি একে ইরাক এবং অন্য জায়গায় পশ্চিমা হস্তক্ষেপের সাথে তুলনা করে বলেছিলেন, ‘ইরাকের দিকে দেখুন, মিথ্যা প্রচারণার নামে (সেখানে) কি করলেন?’ তিনি বলেন, পশ্চিমাদের কেউ কেউ বাংলাদেশে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ করতে চায়।
ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পর মোমেন ফিনানশিয়াল টাইমসকে বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ব নেতাদের ‘ফ্যাক্টস সঠিকভাবে চেক করার জন্য’ তিনি তাদের অনুরোধ করছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে তিনি বলেছিলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, এখন মানুষের হাতে অতো সময় নেই। মানুষের পড়ার অভ্যাসটাও নেই’।
এতদসত্ত্বেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সম্পর্ক ‘খুব ভালো’ ছিল বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
(এভাবে) সম্পর্কের যে কোনো ধরনের উত্তেজনা আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শেখ হাসিনা ১৭ কোটি মানুষের দেশটিকে উন্নয়নের সাফল্য হিসেবে প্রচার করতে চেয়েছেন, মূলত দেশটির বিশাল পোশাক খাতকে নিয়ে যা কিনা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে রপ্তানির উপর নির্ভর করে। ভারত এবং চীনের সাথেও তিনি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
দশকের পর দশক ধরে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রায়শই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মধ্যে রক্তক্ষয়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ কম ছিল, সেগুলোর বিরুদ্ধে নির্বাচনি কারচুপির অভিযোগ ছিল।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, ‘যেখানেই আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে ক্ষুণ্ন করে এমন কর্মকাণ্ড দেখি, সেখানেই উদ্বেগ’কে প্রতিফলিত করে এই ভিসা পেনাল্টি।
‘বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে নিজেদের নেতৃত্ব নির্বাচন করার আকাঙ্ক্ষাকে’ তারা সমর্থন করেন বলেও জানান।
এর আগে ২০২১ সালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পুলিশের এই ইউনিট গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের সিনিয়র এসোসিয়েট মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটনের চাপ স্বৈরাচারী সরকারগুলোর বিকল্প হিসেবে গণতন্ত্রকে প্রচার করে চীনের প্রভাবকে সীমিত করার আঞ্চলিক কৌশলেরই অংশ।
তিনি বলছিলেন, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশকে তার মূল্যবোধ-ভিত্তিক বৈদেশিক নীতির জন্য এক পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এটা একটা বড় ধরনের জুয়া… যদি ঢাকা অনুভব করতে থাকে যে, সে ক্রমবর্ধমানভাবে ওয়াশিংটন দ্বারা বাক্সবন্দী হচ্ছে, তবে সে চীনের কাছাকাছি যেতে প্রলুব্ধ হতে পারে।
কুগেলম্যান বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখাটা শেখ হাসিনার জন্য অস্তিত্বের বিষয় হতে পারে, যিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্তও বাংলাদেশ শাসন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আইনি মামলার শিকার হয়েছেন, দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলছিলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে, ‘তারা সম্ভবত প্রতিশোধমূলক রাজনীতির উগ্র প্রচারণার শিকার হবে . . .অনেকটা এই শাসক দল বিরোধীদের সাথে যা করেছে তার মতো। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকলে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি (সেক্ষেত্রে) তাদের জন্য বাধা হবে না।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)