যুদ্ধে যাওয়ার গল্প শোনালেন কলারোয়ার জয়নগরের দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। এই যুদ্ধের মধ্যদিয়েই আমরা লাভ করেছি স্বাধীন দেশ, নিজস্ব পতাকা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলার ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণ বর্বর হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারই পরিণতিতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে খোদিত হয় একটি নাম- ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রুপকার বীর যোদ্ধাদের যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন, দেশের প্রতি মমত্ববোধ। এমনি যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণার কথা জানিয়েছেন কলারোয়ার জয়নগরের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।
কলারোয়ার ধানদিয়া মিশনের মুক্তিযোদ্ধা মৃনাল কান্তি জোসেফ জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের সময়টা ছাত্র হিসেবে অধ্যায়ন করছিলেন যশোরে। ছাত্র অবস্থায় তিনি তাগড়া জোয়ান শরীর ও মনে ছিলো অদম্য সাহস। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ তার কর্নকুহরে পৌঁছানো মাত্রই তিনি যুদ্ধে যাবেন বলে ঠিক করলেন। এলাকার কয়েকজন মিলে মৃনাল কান্তি জোসেফ রওনা হলেন ভারতে ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যো। তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুনে ট্রেনিং করেন। তিনি এবং অন্যদের ট্রেনিং করান জেনারেল উভান ও মেজর মালহুত্রা। দীর্ঘ ১ মাস৭ দিন গেরিলা ট্রেনিং করেন। তিনি অস্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন, এল এম জি,রাইফেল, লাইট মেশিনগান, গ্রেনেট সহ অন্যান্য অস্ত্র। সেখান থেকে ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি যুদ্ধ করেন ৮ ও ৯ নং সেক্টরের। যশোরের চিংড়া, কলারোয়ার রায়পুর, কুশোডাংগা, নগরঘাটা, পাইকগাছা, কপিলমুনি। তিনি এবং তার সঙ্গীরা সর্বপ্রথম যশোরের চিংড়া মেলেটারি ক্যাম্প ধ্বংস করেন।
অন্যদিকে, ধানদিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া ছিলো তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির বহি:প্রকাশ। রেডিওতে তিনি যুদ্ধকালীন দেশের নানা খবরা-খবর শুনতেন, দেশের পরিস্থিতি দিনকে-দিন খারাপ হচ্ছে হঠাৎ বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চে ভাষণ শুনতে পেলেন রেডিওতে, তখনও তিনি ভাবতেই পারেননি যে, কেউ তাকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুরোধ করবে। তার সহপাঠি জব্বার মোড়ল তার বলা কথায় সাতপাচ না ভেবেই ২১ বছরের আনোয়ার হোসেন গেরিরা ট্রেনিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেন। তবে আনোয়ার হোসেন যুদ্ধে যাওয়ার সম্মতি বাড়ি থেকে না দেওয়ায় তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে ট্রেনিং এ চলে যান। নিজের সিদ্ধান্ত সহপাঠির অনুরোধ ও দেশের প্রতি মমত্ববোধ তার যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। তিনি ট্রেনিং করেন ভারতের হাকিমপুর, বিথারি।
ট্রেনিং শেষে জব্বার মোড়ল, মেজর জলির, ক্যাপ্টেন শফিউল্লাহ, শুভাষ, রফিক, মাহাবুবুর রহমান তারা এক সাথে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র চালনায় পারদর্শী ছিলেন থ্রিনট, এস এল অর,রাইফেল, গ্রেনেট। সেক্টর নং ৮-এ তারা যুদ্ধকরেন। কাকডাংগা, বালিয়াডাংগা সীমান্তবর্তী এলাকাসহ যশোর চিংড়া এলাকায় তারা দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করেন।
এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে এখানে ক্লিক করুন
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)