শ্যামনগরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর: দ্রুত বিচার আইনে মামলা হলেও আসামিরা প্রকাশ্যে!


গাজী হাবিব, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কাশিমাড়ী গ্রামে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হলেও আইনের শাসন কার্যকর হচ্ছে না—এমন অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে। মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ পুলিশ কোনো গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে না। এ নিয়ে গ্রামে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়- গত ১২ আগস্ট রাতে কাশিমাড়ী গ্রামে সংঘটিত হামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রতিপক্ষরা একযোগে বাড়িঘরে ঢুকে সশস্ত্র অবস্থায় তাণ্ডব চালায়। তারা পরিবারের সদস্যদের মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এরপর ঘরের মালামাল ভাঙচুর করে, আলমারি ও খাট চুরি করে নিয়ে যায়। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, হামলাকারীরা নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের পাশাপাশি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করে। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ আছে- অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে প্রায় ১২ লাখ টাকার সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। এছাড়া স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ মিলে প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে দ্রুত বিচার আইন ২০০২ (সংশোধনী ২০২৪)-এর ৪/৫ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রথমে সাতক্ষীরার বিজ্ঞ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা নং-৪৭/২৫ দায়ের করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে শ্যামনগর থানায় মামলা নং-৩০ রুজু করা হয়। মামলায় হাবিবুল্লাহ সরদার, শওকাত হোসেন, মোহাম্মদ আলী, শফিউল্লাহ, আবুল মোল্লাসহ নামীয় ১৫ জন এবং অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, মামলার পরও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
অভিযোগকারীদের দাবি, আসামিরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় শ্যামনগর থানার কিছু কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করেছে। তারা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে- ‘ওসির মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে মামলাটি ফাইনাল করে নেওয়া হবে। এ ধরনের বক্তব্য গ্রামে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আইনের সমান প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মামলাকারী দাউদ আলী সরদার বলেন, আমরা গরীব। আসামীরা প্রভাবশালী। তাই আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি, কিন্তু ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। আসামিরা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। পুলিশের ভূমিকায় আমরা হতাশ।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, মামলার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।
তবে এ পর্যন্ত কোনো আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাতক্ষীরার সিনিয়র একজন আইনজীবী বলেন -দ্রুত বিচার আইন অনুযায়ী, এই ধরনের মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা। কিন্তু এখানে মামলা রুজুর পরও গ্রেপ্তার না হওয়া আইনি শৃঙ্খলার বড় প্রশ্ন। এর আগে ২০২৩ সালে শ্যামনগরের একই এলাকায় একটি জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ গ্রেপ্তার না করায় আসামিরা প্রভাব বিস্তার করে। তখনও স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।
স্থানীয় সচেতন মহলের প্রশ্ন- আইন কি শুধু গরিবের জন্য? প্রভাবশালীদের জন্য কি আলাদা আইন আছে? এমন স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা শুধু আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং এলাকায় অপরাধীদের উৎসাহিত করছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

ফরম ফিলাপের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
হাফিজুল ইসলাম, সাতক্ষীরা : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) ফরম ফিলাপের ফি বৃদ্ধিরবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরায় নেক্সাস ফেস্টের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক সংহতি এবং তরুণ নেতৃত্ব বিকাশের বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে সাতক্ষীরায়বিস্তারিত পড়ুন

নবারুণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কর্মশালা
সেভ দ্য চিলড্রেন’ এবং ‘উত্তরণ’ এর সহযোগিতায় ‘ইয়ুথ অ্যাডাপটেশন ফোরাম’-এর উদ্যোগে সাতক্ষীরাবিস্তারিত পড়ুন