‘সরকার কৃষিজমি রক্ষায় নিজের অঙ্গীকার রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে’
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় আশংকাজনক হারে কমছে কৃষি জমি। নতুন নতুন বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত, শিল্প-কলকারখানা নির্মাণ, ইটভাটা স্থাপন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে কমছে কৃষি জমি। এর সাথে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলার কৃষি জমিতে লবণ পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষের কারণে কৃষি প্রাণ বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা জেলার প্রায় ৩৮ দশমিক ১৩ ভাগ কৃষি জমি মাছ চাষের আওতাভুক্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা কবলিত হয়ে পড়েছে মোট কৃষি জমির ১১ দশমিক ৫৪ ভাগ। এসব কারণে কমছে কৃষি জমি ও কৃষি ভিত্তিক খানার সংখ্যা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উজানের পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়া ও অপরিকল্পিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত হাজার হাজার প্রকল্প। যা কৃষি জমি কমে যাওয়ার বিষয়টিকে আশংকাজনক পর্যায়ে উন্নীত করেছে। সেই সাথে সরকার কৃষিজমি রক্ষায় নানা অঙ্গীকার করে নিজেই কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করে। যা আরও কৃষি জমি বিনষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায়।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সাতক্ষীরা শহরের ম্যানগ্রোভ সভাঘরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক আয়োজিত ‘কৃষি জমি সুরক্ষায় জনসংগ্রাম’ শীর্ষক এক জনমতামত সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভায় সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অ্যাড. আজাদ হোসেন বেলালের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও বিশিষ্ট সাংবাদিক অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ।
বক্তব্য রাখেন দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সনাক-সাতক্ষীরার সভাপতি হেনরী সরদার, সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, জেলা গণফোরামের সভাপতি আলী নুর খান বাবুল, জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি আল মাহমুদ পলাশ।
বক্তারা আরও বলেন, কৃষিজমি রক্ষায় সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সময়ে তুখোড় আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম করে তাৎক্ষণিক কিছুটা সফলতা পেলেও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের অভাবে কৃষি জমি রক্ষায় প্রশাসন কখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে সাতক্ষীরা জেলার হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে লবণ পানি ঢুকিয়ে সর্বনাশ করা হয়েছে। যা পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি প্রাণ বৈচিত্র্য। এজন্য কৃষি জমি রক্ষায় রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হতে হবে।
সাতক্ষীরায় কৃষি জমি বিনষ্টের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সরাসরি দোষারোপ করে জেলা গণফোরামের সভাপতি আলী নুর খান বাবুল বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিনামদর্শী কর্মকান্ডের কারণে সাতক্ষীরার ৫০ ভাগ কৃষি জমি কমে গেছে। এটা যেন দেখার কেউ নেই। এটা নিয়ে প্রচুর আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু পলিসি মেকাররা ঘুমিয়ে থাকে।
মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, সরকার কৃষি জমি রক্ষার অঙ্গীকার করে। বলা হয় কৃষি জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। আবার সরকারই তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আগে নিজে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করে। এই নীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, বাংলাদেশে কৃষকদের মর্যাদা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কৃষকদের কোনো সংগঠন না থাকাই ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি তারা তাদের কৃষি জমি রক্ষায়ও ব্যর্থ হচ্ছে।
সিনিয়র সাংবাদিক মিজানুর রহমান বলেন, কৃষি জমিতে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। এ ব্যাপারে জনমত গড়ে তুলতে হবে।
জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি আল মাহমুদ পলাশ বলেন, জলাবদ্ধতা কৃষি জমি কমে যাওয়ার বড় একটি কারণ। জলবদ্ধতার জন্য দায়ী পাউবো কর্তৃক নদী ও খালগুলো মেরে ফেলা। তাই জলবদ্ধতা নিরসনে নদী মেরে না ফেলে নদীর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে হবে। একই সাথে লবণ পানির চিংড়ি চাষ কৃষি জমিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যেখানে লবণ পানির চিংড়ি চাষ হয় তার চারপাশের কোনো জমিতে ফসল হয় না। এজন্য যত্রতত্র লবণ পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ বন্ধ করতে হবে। কৃষি জমির সুরক্ষায় সরকারের কৃষি বিভাগের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তাদেরকে উদ্যোগী করতে হবে।
সনাক-সাতক্ষীরার সভাপতি হেনরী সরদার বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষায় কৃষিজমি চিহ্নিতকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষি ভিত্তিক সমবায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষকদের সংগঠিত করতে হবে।
দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, কৃষি জমি কোনোভাবেই অকৃতি কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। সরকারও যেন এ বিষয়টি মাথায় রাখে। এক্ষেত্রে সরকার আইন করে আবার সরকারই আইন ভঙ্গ করে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অ্যাড. আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, কোনোভাবেই কৃষি জমিতে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ করতে দেওয়া যাবে না। এটা ধ্বংস ডেকে আনছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)