সাতক্ষীরায় পৃথক দুই খুনের রহস্য উন্মোচন: এসপি’র সংবাদ সম্মেলন


সাতক্ষীরার কলারোয়ার দেয়াড়ায় বৃদ্ধ কৃষক মোসলেম উদ্দীন (৬৫) কে গলাকেটে হত্যা ও সদর উপজেলার হাওয়ালখালিতে ১৫দিন বয়সী শিশু সোহান হোসেনকে হত্যার পর মরদেহ সেফটি ট্যাঙ্কিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার)।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে তার দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ কথা জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, দুটি পৃথক হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করতে ও ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশের সময় লেগেছে ৪০-৪৮ঘন্টা। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশ ঘাতকদের শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২৪ নভেম্বর রাতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে শ্বশুর মোসলেম উদ্দীন (৬৫)কে গলাকেটে হত্যা করে জামাই মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ (৩৯)। হত্যার পর ঘাতক জামাই আবুল কালাম ও তার সহযোগি হাবিব ইসলাম (১৯) চোরাই পথে প্রতিবেশি দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২৭ নভেম্বর বিকেলে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি সীমান্ত থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ ৪৮ঘন্টার মধ্যে খুনের রহস্য উদঘাটন, জড়িতদের গ্রেপ্তার ও হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, হ্যান্ডগ্লাভস, জ্যাকেট ও কাদামাখা প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। হত্যাকারী আবুল কালাম নিহত মোসলেম উদ্দীন বিশ্বাসের ছোট জামাতা। তিনি দেয়াড়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং একই গ্রামের মৃত রওশন আলীর ছেলে। তার দেওয়া তথ্য মতে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকালে নিহত মোসলেম উদ্দিনের বাড়ির ৫০০ গজ দূরের একটি পুকুর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও হ্যান্ড গ্লোভস উদ্ধার করা হয়।
পরে দেয়াড়া খানপাড়া থেকে আবুল কালাম আজাদের ভাইপো হাবিবুরের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত জ্যাকেট ও কাদামাখা প্যান্ট।
পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ২৬ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাওয়ালখালি গ্রামের সোহাগ হোসেন ও তার স্ত্রী ফতেমা খাতুন পরিকল্পিতভাবে হত্যা ১৫দিন আগে জন্ম নেওয়া তাদেরই সন্তান শিশু সোহানকে।
জন্মের পর শিশুটি হার্ট, ব্রেন ও অ্যাজমা সমস্যায় ভুগতে থাকায় তাকে পরিকল্পিতভাবে স্বামী-স্ত্রী মিলে হত্যা করে লাশ বাড়ির সামনে সেফটি ট্যাঙ্কিতে ফেলে মায়ের পাশ থেকে শিশু চুরি হয়েছে বলে প্রচার দেয়। শিশু সোহান চুরি হয়েছে বলে শুক্রবার দুপুরে সোহাগ হোসেন সাতক্ষীরা সদর থানায় ডায়েরি করেন।
পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দীনের নেতৃত্বে সদর থানার পুলিশ যৌথভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে ৪০ঘন্টার মধ্যে শিশু হত্যার রহস্য উন্মোচন পূর্বক ঘাতকদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
দারিদ্র্য ও শিশুটির অসুস্থতাকে হত্যার কারণ বলে আটক সোহাগ ও ফতেমার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান পুলিশ সুপার।
প্রসঙ্গতঃ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাওয়ালখালি গ্রামের সোহাগ হোসেনের বাড়ির বারান্দায় মশারির ভিতরে ঘুমন্ত অবস্থায় ১৫দিন বয়সী শিশু চুরি হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ তদন্তে মাঠে নামে। শিশুটির পিতা সোহাগ হোসেন ও মাতা ফতেমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মোটিভ। পুলিশ শুক্রবার মধ্যরাতে সেফটি ট্যাঙ্ক থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। এঘটনায় পুলিশ শিশুটির মা-বাবা দুজনকেই আটক করেছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
