সাতক্ষীরা জেলায় বিএনপির সম্মেলন ও কমিটি গঠন স্থগিত
সাতক্ষীরা জেলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কমিটি গঠন কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলের জেলা আহবায়ক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী তার ফেসবুক পেজে দলের সকল পর্যায়ের দয়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে নির্দেশক্রমে এ অনুরোধ জানিয়েছেন।
এড. সৈয়দ ইফতেখার আলীর ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেছেন- “অদ্য ইংরেজি ২-২-২০২৫ তারিখে, বিএনপি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির অধীনস্ত সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সকল পর্যায়ে বিএনপি’র সদস্য ফরম বিতরণ ও কমিটি গঠন কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ ক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সব ধরনের সম্মেলন ও কমিটি গঠন স্থগিত থাকবে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জেলার শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
তিনি বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীর চারটি সংসদীয় আসনে সদস্য সংগ্রহ করে সম্মেলনের কথা ছিল। তবে কেউ কেউ সাংগঠনিক টিমের নির্দেশনা অমান্য করে কমিটি দিয়ে দলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এ কারণে সাংগঠনিক টিম জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে সবার কথা শুনে সব ধরনের সম্মেলন ও কমিটি গঠন স্থগিত হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রহমতুল্লাহ পলাশ, আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল হাসান, সদস্য সচিব আব্দুল আলিম, যুগ্ম আহ্বায়ক মৃণাল কান্তি রায়, আয়নুল ইসলাম নান্টা প্রমুখ।
জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা বিএনপির অন্তর্গত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা বিএনপির সম্মেলন সফল করতে চারটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। একই সঙ্গে সব সম্মেলন শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে সাংগঠনিক টিম।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুল হাসান, সাতক্ষীরা-২ এর জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মৃণাল কান্তি, সাতক্ষীরা-৩ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ও সাতক্ষীরা-৪ নির্বাচনী এলাকার জন্য জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল আলীমকে প্রধান করে চারটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি টিমে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে দুই-তিন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি উপজেলা-পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবরা পদাধিকারবলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সাংগঠনিক টিমের সদস্য মনোনীত হবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু স্বাক্ষরিত গত ১৬ জানুয়ারি এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে, সাংগঠনিক টিমের এসব সিদ্ধান্তের পর সম্প্রতি সাতক্ষীরায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিএনপি। সম্প্রতি শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলায় সম্মেলন ও কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ তারিকুল হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ জানুয়ারির মধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ চূড়ান্ত করতে হবে। ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সব ওয়ার্ড (ইউনিয়ন ও পৌরসভার অন্তর্গত) সম্মেলন শেষ করতে হবে। ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করতে হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব উপজেলা ও পৌরসভার সম্মেলন শেষ করতে হবে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে একটি পক্ষ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েই উপজেলা কমিটি গঠন করে। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যে কারণে বিভিন্ন ইউনিটে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাসুম বিল্লাহ শাহীন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতিক্রমে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ করা যাচ্ছে। আশা করছি, ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা কমিটিতে স্থান পাবেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশে অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলীকে আহ্বায়ক এবং আব্দুল আলিমকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির ওপর নির্দেশনা ছিল- তিন মাসের মধ্যে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)