বেনাপোল চেকপোস্টে কাস্টমসের খামখেয়ালীপনা: কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার


ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী চলাচল প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাস্টমসের নানা খামখেয়ালীপনা ও হয়রানি। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় ভেঙে পড়েছে।
এক সময় প্রতিদিন এই পথে ১০–১২ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করতেন। সে অনুযায়ী গড়ে এক কোটি টাকা রাজস্ব আসত। কিন্তু গত বছর থেকে ভারত পর্যটক ভিসা বন্ধ এবং মেডিকেল ও বিজনেস ভিসা শিথিল করায় যাত্রী সংখ্যা কমেছে। তার ওপর কাস্টমসের অতিরিক্ত ঝামেলা ও অযৌক্তিক ডিএম (Detained Material) প্রক্রিয়ার কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ী যাত্রীদের বড় অংশও বাংলাদেশে আসা বন্ধ করেছেন। এতে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, স্ক্যানিংয়ের পরও কাস্টমস কর্মকর্তারা ব্যাগ খুলে পণ্য পরীক্ষা, ওজন করা এবং অযথা জটিলতা তৈরি করেন। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন যাত্রী একটি শাড়ি বা সামান্য ফল রেখে কাস্টমসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ জানান, তাদের পাসপোর্টও আটকে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশি যাত্রী অনিমা ঘোষ বলেন, আমি শুধু একটি শাড়ি আর ৫ কেজি ফল এনেছিলাম। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু এখনো ফেরত পাইনি।
এক ভারতীয় যাত্রী জানান, মাত্র ৭০০ রুপির (বাংলাদেশি প্রায় ১ হাজার টাকা) একটি শাড়ি ডিএম করে পাঁচ হাজার টাকার বেশি জরিমানা, ভ্যাট ও টেবিল খরচ দাবি করেছে কাস্টমস।
আরেক ভারতীয় যাত্রী ওয়াসিম রাজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে আসার মতো অবস্থা নেই। কাস্টমসের হয়রানি চরমে উঠেছে। এর চেয়ে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী চলাচল বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাস্টমস অতিরিক্ত পণ্য পেলে স্পট ট্যাক্স নিলে যাত্রী হয়রানি কমবে, আবার সরকারের রাজস্বও বাড়বে। কিন্তু বর্তমানে ডিএম করা পণ্য যাত্রীরা আর ছাড়িয়ে নিতে পারেন না। এতে অনেক পণ্য পচে যায় বা পরে অর্ধেক দামে নিলামে বিক্রি হয়। এর ফলে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ব্যবসায়ী সমিতির স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, কাস্টমস যদি স্পট ট্যাক্স গ্রহণ করে, তবে রাজস্ব বাড়বে। কিন্তু ডিএম করে রাখায় পণ্য নষ্ট হয়, আবার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অল্প দামে নিলামে বিক্রি হয়। এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় অর্ধেকে নেমেছে। সেপ্টেম্বর মাসে তা আরও কমবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস সুপার নাজমুল সিরাজী বলেন, একটি শাড়ি ডিএম করার কোনো নিয়ম নেই। যদি কেউ করে থাকে, তবে তা ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে জায়গা সংকটে কাস্টমস হাউসের গেস্ট রুম, অফিসকক্ষ ও বারান্দায় যাত্রীদের আটকানো পণ্য স্তূপ করে রাখায় দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

যশোরের বেনাপোলে মোটরসাইকেল-ট্রাক সংঘর্ষে যুবক নিহত, আহত ১
মোঃ ওসমান গনি, বেনাপোল (যশোর) যশোরের বেনাপোলে মোটরসাইকেল ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন

শার্শা সীমান্তে ভারতে অনুপ্রবেশকালে নারী-পুরুষ আটক
যশোরের শার্শা উপজেলায় অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা চালানোর সময় দুই নারীবিস্তারিত পড়ুন

শার্শায় বিএনপি নেতা হাসান জহিরের গণসংযোগ ও মোটরসাইকেল র্যালি
শার্শা (যশোর) প্রতিনিধি: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্রবিস্তারিত পড়ুন