আইনজীবী হত্যায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দুজনসহ অংশ নেয় ১৫ জন
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় ধারালো অস্ত্র হাতে সরাসরি অংশ নেয় ১৫ জনের একটি দল। তাদের মধ্যে অন্তত দুইজন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদের সাতজনকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতভর অভিযান চালিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনের রঙ্গন কনভেনশন হলের গলিতে পড়ে থাকা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে বেধড়ক মারধর করছে একদল মানুষ। এদের মধ্যে লাল জামা ও মাথায় হেলমেট পরিধানকারী একজনকে ধারালে অস্ত্র দিয়ে সাইফুলের ঘাড়ে ও পিঠে আঘাত করতে দেখা যায়। নিথর পরে থাকা দেহেও কয়েকজন ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে।
ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করে হত্যার সঙ্গে জড়িত সাতজনের পরিচয় বের করেছে দেশের বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
জড়িত সাতজন হলেন- বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির এলএলবির ৩৬তম ব্যাচের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র শুভ কান্তি দাস, চট্টগ্রামের মেথরপট্টি এলাকার বাসিন্দা সুমন নন্দী, হাজারীগলি এলাকার মৃত মনোরঞ্জন দে’র ছেলে বিকাশ দে (৪০), কোতোয়ালির জলসা মার্কেট এলাকার মৃত সুধীর চক্রবর্তীর ছেলে নারায়ণ চক্রবর্তী (৫০) ও বন্দরের নিমতলা এলাকার মানিক দে’র ছেলে মন্টু দে।
এছাড়া দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাহেরের অনুসারী ও শিপিং কোম্পানি চাকরি করা রাজিব ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম বাকলিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জিয়া উদ্দিন ফাহিম।
এরই মধ্যে তাদের আসামি করে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি ও পোস্টমর্টেম অংশ নেয়া একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের পিঠে ও ঘাড়ে দুটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া ভারী বস্তুর আঘাতে মাথার খুলি ও একটি পা ভেঙে গেছে।
এদিকে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যায় ইসকন সমর্থকদের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে সংগঠনটি নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ করেছে ছাত্র-জনতা।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) নগরের টাইগারপাস, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, আন্দরকিল্লাহসহ বিভিন্ন স্থানে পৃথক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে টাইগারপাসে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বেলা ১১টার দিকে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। দেড় ঘণ্টার বিক্ষোভে প্রায় ৫ হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নেয়। বিক্ষোভ থেকে ইসকন নিষিদ্ধে দাবি জানায় ছাত্র-জনতা।
বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ইসকনরা জঙ্গি, যারা গত ১৬ বছর ধরে ছিল স্বৈরাচারদের সঙ্গী। আওয়ামী লীগের সহায়তায় ইসকন ১৬ বছর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে জঙ্গি সংগঠনে রূপ নিয়েছে। স্বৈরাচারের সঙ্গী হয়ে ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি করছে ইসকন।’
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা এ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, নতুন বাংলাদেশ এসেছে, সে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে চিম্ময়-খুনি হাসিনারা উসকানি দেয়। আমরা স্পষ্ট করে সব প্রেতাত্মাদের বলে দিতে চাই, খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়া করেছি, জঙ্গি ইসকনকেও দেশছাড়া করা হবে।’
এদিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকারীদের গ্রেফতারদের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। নগরের মুরাদপুর থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি নগরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ছাত্রশিবির নেতারা ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন অ্যাখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জানায়।
বুধবার জোহরের নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মুসুল্লিরা। এছাড়া নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা।
চট্টগ্রামে মসজিদ ভাঙচুর, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে লোহাগড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়। লোহাগড়ার সংগ্রামী মুসলিম জনতার ব্যানারে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত উগ্রবাদী ইসকন সদস্যদের গ্রেফতার, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)