কি সাজা হতে পারে ইভ্যালির সিইও ও চেয়ারম্যানের?
আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে আরিফ বাকের নামে এক ভুক্তভোগী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাসেল দম্পতির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০, ৫০৬ ও ৪০৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আরিফ বাকের ও তার কয়েকজন বন্ধু চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। সব পণ্যের জন্য নির্ধারিত টাকাও পরিশোধ করেন তারা। তবে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করার কথা থাকলেও দিনের পর দিন পার হয়ে গেলেও পণ্য বুঝিয়ে দেয়নি ইভ্যালি। পরবর্তী সময়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে পণ্য চাইতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ভুক্তভোগীকে পণ্য বুঝিয়ে না দিয়ে বরং ভয়ভীতি দেখান।
এ বিষয়ে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কে এম সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, ইভ্যালির সিইও মো. রাসেলের বিরুদ্ধে যে ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সে ধারায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর কারাদণ্ড। দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় বলা আছে, প্রতারণা করে সম্পত্তি বা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। এ অপরাধে একজন ব্যক্তির সাত বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
এ ছাড়া ৪০৬ ধারায় ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অপরাধে সর্বোচ্চ তিন বছর জেল, অর্থ জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আর ৫০৬ ধারায় ভিক্টিমকে ‘হত্যা বা আঘাত করার ভয়ভীতি’ দেখানোর অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর নির্ধারণ করা আছে।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার ইভ্যালির চেয়ারম্যান মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত। এরপর এদিন রাতে হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় মোহাম্মদ রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া হয় মিডফোর্ড হাসপাতালে। তবে শারীরিক গুরুতর কোন সমস্যা না থাকায় আবারও তাকে থানায় নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ডিউটি অফিসার এএসআই অলিন্দ্র তালুকদার জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে তাকে ঢাকা মেডিকেল পরে সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। এসিডিটির চাপ ছাড়া তার শরীরে তেমন কোনো সমস্যা পাননি চিকিৎসকরা। তাই রাতেই তাকে আবারও থানায় নিয়ে আসা হয়। তবে এখন তিনি ভালো আছেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা সিইও রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
২০১৬ সালে প্রথমে অনলাইনে ডায়াপার বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু করেন রাসেল। ২০১৭ সালে এই ব্যবসা করতে গিয়ে বড় একটি অনলাইন প্লাটফর্মের কথা চিন্তা করেন তিনি। সেই চিন্তা থেকেই প্রতিষ্ঠা করেন দেশীয় ই-কমার্স কোম্পানি ‘ইভ্যালি’। প্রায় ১৭ লাখ নিয়মিত ক্রেতা, ২০ হাজারের বেশি বিক্রেতা নিয়ে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে স্বল্প সময়ে প্রথম সারিতে উঠে আসে ‘ইভ্যালি’। বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর ক্যাশব্যাকের আকর্ষণ দিয়ে ক্রেতা বাড়ানোর কৌশল নিয়ে সফল হলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন গ্রাহক ভোগান্তির শীর্ষে অবস্থান করছে।
মোহাম্মদ রাসেল রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ২০১১ সালে ঢাকা ব্যাংকে চাকরি নেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করেন রাসেল। ৬ বছর পর ঢাকা ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)