শিশুর কণ্ঠে বিশ্বকবি: “রবীন্দ্রনাথ আকাশে থাকেন, তবুও আমাদের গানের ভেতর বসেন”


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: চুরাশিতম প্রয়াণ দিবসে সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি যেন পরিণত হয়েছিল এক নিবিড় শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণের মন্দিরে। বুধবার সকাল ১০টায় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, সাতক্ষীরা শাখার আয়োজনে শত শত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর ও প্রবীণের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী আয়োজন।
প্রথমেই প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর শিশু-কিশোর বিভাগের শিক্ষার্থীদের গান, নৃত্য ও আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয়ে ওঠে মিলনায়তন। তাদের কণ্ঠে ও পদক্ষেপে ধ্বনিত হয় রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন ও সৃষ্টির অমোঘ আবেদন।
এরপর শুরু হয় ‘স্মরণ শোভাযাত্রা’। পরে শত কণ্ঠের সমবেত গান “তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম” যেন শোকাবহ অথচ গৌরবময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। স্পষ্ট হয়, বাঙালির হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক চিরন্তন আপনজন।
‘‘রবীন্দ্রনাথ আকাশে থাকেন, তবুও আমাদের গানের ভেতর এসে বসেন” বলল শিশু অন্বেষা মজুমদার। প্রয়াণ দিবসে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কণ্ঠে উচ্চারণ: “রবীন্দ্রনাথের অবস্থান বাংলার পুরো আকাশের সমান”
আলোচনা পর্ব:
আলোচক অধ্যাপক শুভ্র আহমেদ বলেন, “রবীন্দ্রনাথ বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। তিনি বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় পথপ্রদর্শকের ভূমিকা রেখেছেন। কবিতা, গান, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক—সবখানেই তিনি অনন্য। বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবদান ১৯১৩ সালের নোবেল পুরস্কারে স্বীকৃত।”
সংস্কৃতিজন মোস্তফা নুরুজ্জামান স্মরণ করিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথের সমাজ সংস্কারক রূপের কথা। “শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা, সমবায় ব্যাংকের ধারণা, গ্রামীণ উন্নয়ন সবই তাঁর দৃষ্টি ও মানবকল্যাণ ভাবনার ফসল। আজকের অস্থির বিশ্বে তাঁর সাহিত্য ও দর্শন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।”
জেলা কালচারাল অফিসার ফাইজা হোসেন অন্বেষা বলেন, “শিশুদের মনে মানবিকতা ও নৈতিকতার বীজ বপনের জন্য রবীন্দ্রনাথ পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষা ভাবনা আজও অনুকরণীয়।”
শিল্প-সংস্কৃতির রঙে রাঙানো আয়োজন:
অনুষ্ঠানে গান, কবিতা ও নৃত্যে অংশ নেন বৃষ্টি গাইন, মন্দিরা সরকার, রথি মণ্ডল, মিতু মণ্ডল, দিশা পোদ্দার, সাগর মজুমদার, রুপালি দে, পুষ্পিতা চক্রবর্তী অর্পা, শ্রেয়সী মুখার্জী, সবুজ তরফদারসহ আরও অনেকে। শিশু-কিশোর বিভাগের পরিবেশনায় উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল অন্বেষা মজুমদার, পায়েল ঘোষ, অর্ঘ্য ঘোষ, অত্রি দাস, আগমনী বর্মন, অর্থি গায়েনসহ অসংখ্য ক্ষুদে শিল্পীর।
জীবন আলেখ্য পাঠ করেন সাবরিনা ইয়াসমিন প্রমা, তীর্যক কুমার মণ্ডল, সমৃদ্ধ হোড় ও বৃষ্টি।
সমাপনী বার্তা:
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, সাতক্ষীরা শাখার আহ্বায়ক শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন, “রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে বাঙালির সব আবেগ ও অনুভূতি স্থান পেয়েছে। তাঁর সাহিত্য আমাদের অশান্তি ও বিভেদের পৃথিবীতে শান্তি, সৌন্দর্য ও মানবতার পথ দেখায়।”
সূচনাপর্বে প্রদ্বীপ প্রজ্জ¦লন করেন সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না, অধ্যাপক শেখ হেদায়েতুল ইসলাম, প্রতাপ কুমার সরদার, আতিকুর রহমান জাকু, নয়ন ভট্টাচার্য্য, তুষার মিত্রসহ আরও অনেকে।
দিনব্যাপী এই আয়োজনের প্রতিটি মুহূর্তে ফুটে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা যা বাংলার আকাশের মতোই বিস্তৃত ও চিরন্তণ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

সাতক্ষীরায় স্কুল শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির র্যালি
শাহ জাহান আলী মিটন : সাতক্ষীরা জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলাবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধন
হাফিজুল ইসলাম : “অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি” এই প্রতিপাদ্যেবিস্তারিত পড়ুন