কুমারীত্ব পরীক্ষা’ মানে আরেকবার ধর্ষণ
পাকিস্তানে ধর্ষণের শিকার বেশিরভাগ নারীই সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের কাছে যায় না। কারণ ধর্ষণের শিকার নারীদের কুমারীত্ব পরীক্ষার প্রচলন রয়েছে দেশটিতে। যদিও সম্প্রতি লাহোরের পাঞ্জাব প্রদেশের আদালত এটি বাতিল করেছেন। তবে পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশে এখনো এটি চালু রয়েছে।
পাকিস্তানে ধর্ষণের শিকার নারীদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়। ধর্ষণের ঘটনার তদন্তও সেভাবে হয় না। বরং পুলিশ তদন্তের অংশ হিসেবে কুমারীত্ব পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।
এ পরীক্ষায় অবিবাহিত কোনো নারী যদি যৌনভাবে সক্রিয় বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ফৌজদারি মামলায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে দাঁড়ায়। ওই নারীকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়।
কুমারীত্ব পরীক্ষায় ধর্ষণের শিকার নারী সামাজিকভাবে হেয় হওয়ায় পাকিস্তানে ধর্ষণের ঘটনায় শাস্তির হার খুব কম। মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, এই হার ০.৩ শতাংশ।
পাকিস্তানে বাবার এক আত্মীয়ের কাছে ১৪ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরীর বাবা-মা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ফলে পুলিশ তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তার ‘কুমারীত্ব পরীক্ষা’ করা হয়।
১৪ বছরের ওই কিশোরী সাজিয়া (ছদ্মনাম) এএফপিকে জানায়, ‘পরীক্ষা খুব কষ্টের ছিল। আমি জানতাম না কেন এমন পরীক্ষা করা হচ্ছে। মনে হচ্ছিল সে সময় যদি মা পাশে থাকত।’
ধর্ষণের শিকার সাজিয়া জানায়, ‘আমাকে বলা হয়নি কেন আমার শারীরিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। শুধু বলা হয়েছিল, পুলিশের কাজে সাহায্যের জন্য চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হবে।’
তবে সব জটিল পরিস্থিতির কারণে সামাজিক চাপে পড়ে মামলাটি তুলে নিতে বাধ্য হন সাজিয়ার বাবা-মা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ব্রাজিল, জিম্বাবুয়েসহ বিশ্বের কমপক্ষে ২০টি দেশে কুমারীত্ব পরীক্ষা চালু আছে। এ ধরনের পরীক্ষা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এই পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু পাকিস্তানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের অভিযোগ করতে আসা কিশোরী ও নারীদের এ ধরনের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করে।
যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে কাজ করেন মানবাধিকারকর্মী সিদরা হুমায়ূন। তিনি এএফপিকে জানান, ‘আমি মনে করি কুমারীত্ব পরীক্ষা মানে আরেকবার ধর্ষণ। ধর্ষণের শিকার বেশিরভাগ নারী এ ধরনের পরীক্ষা নিয়ে তাদের আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন।
আদালতের নথি বলছে, টু ফিঙ্গার টেস্টের মাধ্যমে কুমারীত্ব পরীক্ষায় ধর্ষণের শিকার নারীরা যৌনভাবে সক্রিয় প্রমাণ হলে তাদের সামাজিকভাবে হেয় করা হয়। এ রকম অনেক ঘটনা রয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)