তালা প্রেসক্লাবের জায়গা উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র! জনমনে ক্ষোভ
ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে তালা প্রেসক্লাবের নির্মিত অডিটোরিয়াম ও পত্রিকা অফিসের জায়গা উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের পায়তারা করছে একটি চক্র। সংশ্লিষ্ট জায়গাটি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের নামে রের্কড থাকলেও দখল সুত্র দেখানো হয়েছে তালা প্রেসক্লাবের নামে। ১৯৮৩ সালে প্রেসক্লাবটি নির্মিত হবার পর থেকে অদ্যবধি এলাকার সাধারণ ও অবহেলিত মানুষের পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এখানকার সংবাদকর্মীরা।
সম্প্রতি তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের মৃত নছিম উদ্দীন শেখের ছেলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্মকর্তা শেখ আমিনুল ইসলাম ও তার ভাই একাধিক অভিযোগে আলোচিত শেখ আব্দুল আজিজ (মুহুরী) মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে তথ্য গোপন করে ভুল বুঝিয়ে প্রেসক্লাবের দখলীয় সম্পত্তি উল্লেখ না করে কতিপয় ভুয়া ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে একটি মিথ্যা আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসের সার্ভেয়ার ইমদাদুল ইসলাম তারেক উক্ত স্থানটি পরিদর্শন করেন এবং তিনিও তালা প্রেসক্লাবের দখলীয় জায়গা উল্লেখ না করে উৎকোচের বিনিময়ে একটি তঞ্চকি ও দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করেন। সার্ভেয়ারের উক্ত প্রতিবেদনের ফলে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মোঃ আক্তার হোসেন স্বাক্ষরিত উচ্ছেদের একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তালার সুধী সমাজসহ সর্বস্তরের জণগনের মাঝে ক্ষেভের সঞ্চার হয়েছে।
এ ব্যাপারে তালা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা সাংবাদিক এম এ হাকিম জানান, তালার কর্তব্যরত সাংবাদিকদের বসার জায়গা না থাকায় তৎকালিন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আবেদন করলে তিনি তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জায়গাটি প্রদানের জন্য মৌখিক নির্দেশ দেন। তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাসার জোয়ার্দ্দারের সহায়তায় ১৯৮৩ সালে ০১নং খতিয়ানে ১৩০ দাগের ০.৩৮৭ একর জমিতে প্রেসক্লাবের ক্লাবের ভবনটি নির্মাণ করা হয়। তালা প্রেসক্লাবে সর্বপ্রথম ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ তালায় আগমনে প্রেসক্লাবে নগদ ১০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। এরপর একে একে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখ্ত, সাবেক পাটমন্ত্রী আসম হান্নান শাহ্, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ কামাল বখ্ত ছাকি, ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান এবং বর্তমান সংসদ অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহসহ অনেক এমপি-মন্ত্রীর পদচারণা রয়েছে। তাদের অনেকের সরকারি অনুদানও রয়েছে প্রেসক্লাবে রয়েছে। এছাড়াও বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণের পক্ষ থেকেও প্রেসক্লাবে অনুদান প্রদান করা হয়েছে। কতিপয় ব্যক্তি তাদের নিজ স্বার্থের জন্য প্রেসক্লাবের জায়গা উচ্ছেদের পায়তারা করছে।
তালা প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি প্রভাষক প্রণব ঘোষ বাবলু বলেন, বর্তমান ভবনে সংকীর্ণ জায়গায় থাকায় প্রেসক্লাবের দখলীয় জায়গায় একটি অডিটোরিয়াম ও পত্রিকার অফিসসহ দুইটি দোকানঘর রয়েছে। যেটি তালা-মহান্দী সড়কের দক্ষিণপাশে হাসপাতাল রোডে অবস্থিত। এখানে জনসাধারণের চলাচলের কোন বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি হয়নি, কোন দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু সম্প্রতি বিএডিসি কর্মকর্তা তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের শেখ আমিনুল ইসলাম ও তার ভাই শেখ আব্দুল আজিজ (মুহুরী) মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে তথ্য গোপন করে ভুল বুঝিয়ে প্রেসক্লাবের দখলীয় সম্পত্তি উল্লেখ না করে কতিপয় ভুয়া ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে একটি মিথ্যা আবেদন করেন। প্রেসক্লাবের জায়গাটি উচ্ছেদ করে নিজ স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি সরেজমিন তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তালা উপজেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৮৩ সালে স্থাপিত প্রেসক্লাবটি অত্র এলাকার মানুষের হৃদপিন্ড হিসেবে কাজ করে। এটি উচ্ছেদের পায়তারা করছে একটি দুবর্ৃত্ত চক্র। তিনি উক্ত চক্রের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন ডেপুটি কমান্ডার মোঃ আলাউদ্দীন জোয়ার্দ্দার বলেন, প্রেসক্লাব তালাবাসীর একমাত্র আশ্রয়স্থল। এর জায়গা উচ্ছেদের ষডযন্ত্র দুঃখজনক। এ সময় উক্ত দুর্বৃত্তচক্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের কাছে দাবী করেন তিনি।
সার্ভেয়ার ইমদাদুল ইসলাম তারেক জানান, আবেদনকারি মন্ত্রী পরিষদ সচিব বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিতে এই তদন্ত করা হয়েছে। যেটুকু পাওয়া গেছে সেটুকু লেখা হয়েছে।
তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন সরেজমিন তদন্ত করেছি তখন ঐ জায়গাটি যে তালা প্রেসক্লাবের দখলে সেটি তিনি বুঝতে পারেননি। এখন তার আর কিছু করার নেই। এ সময় আবেদনকারীর চাপের মুখে তড়িঘড়ি করে উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্থ করেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)