মনিরামপুরে কলেজ শিক্ষার্থী সাবিনার আত্মহত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধন
মনিরামপুর প্রতিনিধি : যশোরের মনিরামপুরে কলেজে নির্বাচনী পরীক্ষার কক্ষ থেকে বাড়ি ফিরে আত্মহত্যার শিকার ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের অকাল মৃত্যুতে ফুঁসে উঠেছেন তার স্বজন, সহপাঠী ও এলাকাবাসী। সাবিনার মত্যুর পিছনে দায়ী দুই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে রোববার সকালে গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের সামনে প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। এসময় উত্তেজিত হয়ে কয়েকজন কলেজের সভাকক্ষের জানালা দরজা ভাংচুর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে সাবিনার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া সাবিনার এক সহপাঠী বলেন- শনিবারের পরীক্ষার কক্ষে আমরা শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। সাবিনার কাছে নকল পাওয়ার পর কক্ষে দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ইসরাইল হোসেন ও তাসলিমা খাতুন খাতা কেড়ে নিয়ে ওর সাথে খুব দুর্ব্যবহার করেন। সাবিনা শিক্ষকদের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায়। সে খাতা ফিরে পাওয়ার জন্য শিক্ষকদের কাছে খুব অনুরোধ করে। কিন্তু খাতা না দিয়ে শিক্ষকরা তাকে বহিস্কার করে কক্ষ থেকে তাড়িয়ে দেন।
সাবিনার এই সহপাঠী দাবি করেন- শিক্ষকদের আচরণে সাবিনা লজ্জিত হয়ে বাড়ি ফিরে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করার পর কলেজের শিক্ষকদের জানানো হয়। তারা কেউ পরিবারকে সমবেদনা জানাতে সেখানে যাননি। এমনকি যে শিক্ষক তাসলিমা খাতুন খাতা কেড়ে নিয়েছিলেন তার বাড়ি সাবিনার গ্রামে। তিনিও আমাদের বান্ধবীকে দেখতে একবার বাড়িতে যাননি। আমরা সাবিনার মৃত্যুর পিছনে দায়ী শিক্ষকদের শাস্তি চাই।
সাবিনার বাবা আব্দুল জলিল প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে বলেন- শিক্ষকরা খাতা কেড়ে নিয়ে আমার মেয়েকে দেড় দুই ঘন্টা আটকে রেখেছেন। মেয়েকে হয়রানি করেছেন। তাকে কানে ধরে উঠবস করিয়েছেন। এজন্য লজ্জায় আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
আব্দুল জলিল আরও বলেন- আমি তো মেয়েকে কলেজে পড়তে দিয়েছি। সে আত্মহত্যা করল কেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
আত্মহত্যার শিকার সাবিনার ভাই রাকিব হোসেন বলেন- আমার এখনো কোন মামলা করিনি। বোনের দাফন শেষে পরিবারের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থার দিকে আগাব।
কলেজের শিক্ষক তাসলিমা খাতুন বলেন- সাবিনা সম্পর্কে আমার মামাতো বোন। আত্মহত্যার কথা শুনে আমি তাকে দেখতে যাচ্ছিলাম। পথে অনেকে আমাকে বলেছেন, সেখানে পরিস্থিতি গরম। মেয়েটির পরিবার আমার সাথে দুর্ব্যবহার করতে পারেন। সেই ভয়ে আমি ফিরে এসেছি।
তাসলিমা খাতুন বলেন- নকল ধরা পড়ার পর শিক্ষক ইসরাইল খাতা নিয়ে রেখে দেন। মেয়েটি একবারের জন্য খাতা চায়নি। পরে সে নিজে বেরিয়ে গেছে। আমরা তাকে কিছু বলেনি। এখন যা শুনছি তাতে আমার নিজের আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন- ঘটনা জানার পর আমি শিক্ষক ও কমিটিকে নিয়ে জরুরি সভা করেছি। আমরা কক্ষের সিসি টিভির ফুটেজ দেখেছি। আমার শিক্ষকরা নির্দোষ।
মানববন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন- আমি একটা প্রশিক্ষণে আছি। পরে কথা বলবো।
নেহালপুর ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক আব্দুল হান্নান বলেন- কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে প্রতিবাদের নামে কলেজের সভাকক্ষে ভাংচুর চালিয়েছে। পরে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।
মনিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পলাশ কুমার বলেন- এই ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের মানবিক শাখার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। শনিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের মাধ্যমে ওই কলেজে নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)