মিষ্টি মরিচ ক্যাপসিকাম চাষে স্বপ্নের সফলতায় মণিরামপুরের কৃষক খলিল
বিদেশী সবজি খ্যাত মিষ্টি মরিচ টবের পরিবর্তে জমির বেডে চাষ করে মণিরামপুর পৌর এলাকার সফল কৃষক খলিলুর রহমান এখন সফলতার স্বপ্ন পূরণের আশায় বেশ উৎসাহ ও উদ্দিপনা নিয়ে জমির পরিচর্যার কাজ বেশ উৎফুল্লতার সাথে সময় পার করছেন।
চারা রোপনের দেড় মাসের মাথায় প্রতিটি গাছে কঁড়ি ও ফল আসায় তিনি ক্যাপসিকাম চাষে একজন সফল চাষী হিসেবে এলাকায় বেশ সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন। নতুন নতুন ফসল আবাদে মণিরামপুরের কৃষক খলিল বেশ সিদ্ধ হস্ত। তিনি মণিরামপুরের এক আত্মপ্রত্যয়ী ও সফল চাষী হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।
মণিরামপুর পৌর শহরের তাহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক খলিলুর রহমান তার নিজ গ্রাম তাহেরপুরের মাঠে এবার নিজস্ব ৪২ শতাংশ জমিতে বিদেশী মিষ্টি মরিচ খ্যাত ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন।
সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, কৃষক খলিল তার জমিতে আবাদকৃত বিদেশী জাতের ক্যাপসিকামের ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন। এ সময় তার সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মাস দুই আগে তিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ইউনাইটেড সিড কোম্পানির কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্যাপসিকামের বীজ সংগ্রহ করে পূর্ব থেকে তৈরিকৃত বীজতলায় বীজ রোপন করে চারা উৎপাদন করে সেই চারা তিনি সরাসরি তার নিজস্ব ৪২ শতক জমিতে চাষ করেছেন। মাত্র দেড়মাস আগে রোপনকৃত ক্যাপসিকাম এখন গাছে পাতায় ক্ষেত ভরে গেছে। প্রায়ই গাছে ফুল-ফল আসতে শুরু করেছে। তাই তিনি এই বিদেশি মিষ্টি মরিচ খ্যাত ক্যাপসিকামের আগাম চাষ করে ভাল ফলন আশা করছেন এবং তা উচ্চমূল্যে বিক্রি করে বেশ লাভবান হবেন বলে স্বপ্ন দেখছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ক্যাপসিকাম তথা মিষ্টি মরিচ আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় একটি সবজি বিশেষ। যা ওই দেশে হাজার হাজার বছর ধরে চাষ করা হয়ে থাকে। এটি Solanaceae (সোলানেসী) পরিবারের Capcicum (ক্যাপসিকাম) গণ। দেখতে ফল গোলাকার ও ত্বক বেশ পুরু হয়। সবুজ, লাল ও হলুদ রংয়ের এই ফল সালাত ও সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। এর পুষ্টি গুণ বেশ ও সুস্বাদু। আমাদের দেশে গত কয়েক দশক কাল ধরে ফুলের টবে সৌখিন মানুষেরা এটি চাষ করে বেশ সফলতা পেয়ে আসছে। এর মূল্যমান বেশ বেশী। প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু ক্যাপসিকাম বিভিন্ন অভিজাত রেষ্টুরেন্টে সালাত হিসেবে এবং সবজি হিসেবে এটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এটির বাজার দর বেশ চড়া। তাইতো এর চাষ সম্প্রসারণ হয়ে এখন আমাদের দেশে বেশ বিস্তার লাভ করেছে।
এই মিষ্টি মরিচ ক্যাপসিকামের চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষক খলিলুর রহমান আরও জানান, গত বছর তিনি স্বল্প পরিসরে চারা সংগ্রহ করে তার জমিতে এটির চাষ করে প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করে বেশ লাভজনক একটি ফসল হিসেবে ধারণা থেইে তিনি এবার বীজ সংগ্রহ করে গত নভেম্বরের প্রথম দিকে চারা উৎপাদনের লক্ষ্যে বীজ বপন করেন। প্রতি শতক জমির জন্য তিনি ১ গ্রাম করে বীজ বপন করেন। তাতে তার ৫০ গ্রাম বীজ সংগ্রহ করতে হয়। তিনি ১৫ হাজার টাকার বীজ থেকে উৎপাদিত চারা দিয়ে ৪২ শতক জমিতে দুই ফুট দুরত্বে বেড প্রস্তুত করেন। অতঃপর বেডের মধ্যে এক/দেড় ফুট অন্তর অন্তর চারা লাগিয়েছেন। প্রতিটি বেড পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন।
পলিথিন দিয়ে বেড ঢেকে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, নভেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত শীত বেশি থাকে। এই সময়ে মাটিতে তাপমাত্রা ধরে রাখতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি জানান, ক্যাপসিকাম চাষের জন্য আমাদের দেশের মাটি ও জলবায়ু বেশ উপযোগী। তবে এই ফসল অধিক খরা ও অধিক বৃষ্টি সহ্য করতে পারে না। তাই উঁচু বেলে দোআঁশ ও মাটিতে রস ধরে রাখতে পারে এমন জমি এই ফসল চাষের জন্য উপযুক্ত বলে তিনি জানান।
সরাসরি জমিতে এই মিষ্টি মরিচ ক্যাপসিকাম চাষ করে কেমন লাভবান হবেন জানতে চাইলে তিনি জানান, গাছে পাতায় যেমন দেখা যাচ্ছে তাতে ৪২ শতক জমি থেকে ক্যাপসিকাম বিক্রি করে তিনি খরচ বাদ দিয়ে ৪/৫ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুমার সরকার বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত মিষ্টি মরিচ খ্যাত ক্যাপসিকাম এটি ভারতীয় জাতের। আমাদের দেশে এটি শীতকালে চাষের জন্য উপযোগী। এর বাজারমূল্য বেশ ভাল। লাভবান একটি চাষ। লাভের সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় অধিক লাভের আশায় কৃষকরা এই সবজি’র চাষের দিকে ঝুঁকছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)