ঘরে বসে মোমো তৈরি করে দৈনিক ৩ হাজার টাকা আয় শিমুর
মিঠুন সরকারঃ অনলাইন ব্যবসায় সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। ঘরে বসে শিখছেন, বিক্রিও করছেন ঘরে বসেই। সময় অসময় নেই ব্যবসা চালাতে পারছেন সমান তালে। দিন দিন সফলতার ভিন্ন ভিন্ন গল্প রচনা করছেন ইন্টারনেটের কল্যাণে।
পড়াশোনায় বেশি এগোতে না পারলেও ব্যবসার প্রসার করে ফেলেছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। ঘরে বসেই অনলাইনে নির্ভরশীল হয়ে বিনা খরচে মাসে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করছেন যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার আফিল রোড এলাকার নাজমুল হোসেন নাদিম ও শরিফা বেগম দম্পতির কন্যা সুমাইয়া আক্তার শিমু (২০)। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে । তবুও দমে যাননি এই নারী উদ্যোক্তা।
পরিসংখ্যান যা বলছেঃ
নারীরা ম‚লত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা। তাদের ব্যবসায়িক পণ্যের মধ্যে রয়েছে—শাড়ি-পোশাক, রূপসজ্জা, গৃহসজ্জা, বিভিন্ন পদের তৈরি খাবার, অফিসের জন্য দুপুরের খাবার, মিষ্টান্ন পণ্য, বেকারি পণ্য, চকলেটসহ যাবতীয় পণ্যসামগ্রী।
শিমুর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পঃ
শিমু বলেন, “আমার খুব ইচ্ছা ছিলো আমি নিজে কিছু করবো কিন্তু কি করবো সেটা জানতাম না হঠাৎ অনলাইনে আমি হাতে বানানো গহনার ছবি দেখি এবং আমার খুব ইচ্ছে হলো কেনার। আমি ২৫০ টাকা দিয়ে গহনা অর্ডার করে আনি এবং ওই গহনা টা আনার পর আমি সব খুলে আবার অন্য একটি ডিজাইন তৈরি করি। ওটাই ছিলো আমার কাজের অনুপ্রেরণা। ”
পারিবারিক সহযোগিতা যেমন ছিলোঃ
শিমু জানান, “পরিবার থেকে হাজারো বাধা এবং পরিবার আমাকে অনেক রকম কথা বলেছে এবং অনেক রকম ভয় দেখিয়েছে। শুধু আমার স্বামীর জন্য আমি আজ সফল হতে পেরেছি। তার শুধু একটাই কথা ছিল তুমি সামনে এগিয়ে যাও আমি তোমার পাশে আছি থাকবো । তুমি কারো কথায় কান দিও না ।তুমি তোমার মত চলো দেখবে সফলতা একদিন তোমাকে খুঁজে নেবে সেই কথাগুলো আমাকে আজ এখানে দাঁড় করিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ আমার স্বামীর কাছে সে ছাড়া আমি এই জাগায় আসতে পারতাম না কারণ কাজ জানলেই হয় না কোন কিছু করতে চাইলে পুঁজি লাগে ।”
যেসব পণ্য নিয়ে কাজ করছেনঃ
শিমু জানান, “বর্তমানে তিনি হোম মেড খাবার মোমো ।হলুদ গহনা সেট এবং শাড়ি থ্রি পিস নিয়ে কাজ করছেন। ”
শিখেছেন যেভাবেঃ
শিমু জানান, “করোনার সময় হঠাত করে আমার বিয়ে হয়ে যায়। পরিবারের চাপে কোথাও নতুন কিছু করার জন্য শিখতে যাওয়ার সুযোগ ছিলো না। তাই মোবাইলে ইন্টারনেট কিনে ইউটিউবের সাহায্যে আমি মোমো বানানোর কাজ শুরু করি এবং বিভিন্ন গহনার কাজও শুরু করি। ”
বিক্রি হয় যেভাবেঃ
শিমু জানান, ” ঝিকরগাছায় একমাত্র আমি ই মোমো তৈরি ও বিক্রি করি, যেটা ঝিকরগাছা কোথাও পাওয়া যায় না ।আমি এখন প্রতিনিয়ত মোমো সেল করে যাচ্ছি ৬০ পিস ৭০ পিস। প্রতিনিয়ত অর্ডার আসে এবং শুক্রবার আরো অর্ডার বেশি আসে । এমনও দিন হয়েছে আমি প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মোমো সেল করেছি এবং সেল করে যাচ্ছি । ফেসবুকে পেজ খোলা শিখি ইউটিউব দেখে। মাত্র ১৮ দিনের মাথায় আমি আমার পেজে প্রায় ৩ হাজার টাকার একটি গহনা অর্ডার পাই আলহামদুলিল্লাহ সেখান থেকে আমার পথ চলা শুরু এখন। ”
তিনি বলেন” এখন আমার কাছ থেকে ঝিকরগাছা বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট মোমো ফ্রোজেন ভাবে নিচ্ছে। এখন আমার মোমো, গহনা , শাড়ি থ্রি পিস নিয়েই বিজনেস চলছে এবং অফলাইনে আমার বাসায় প্রায় ২০ হাজার টাকার মত থ্রি পিস অন পিস শাড়ি কসমেটিক আইটেম জিনিস রাখা থাকে যা অফলাইনে ও প্রতিনিয়ত সেল করি।
প্রথম বিনিয়োগ যেভাবে আসলোঃ
শিমু জানান, পরিবার থেকে মাত্র ৮০০ টাকা নিয়ে কিছু গহনা বানানোর জিনিস আনি এবং সেগুলো দিয়ে আমি গহনা তৈরি করি ইউটিউব দেখে ।
বর্তমান আয় যেমনঃ
শিমু জানান, ” তিনি বর্তমানে অনলাইন এবং অফলাইন মিলিয়ে মাসে প্রাায় ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ হাজার টাকা আয় করছেন। ”
বর্তমান পুঁজি যেমনঃ
শিমু জানান, “বর্তমানে তার কাছে সব সময় ৩০-৪০ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রোডাক্ট স্টকে থাকে। ধীরে ধীরে এটি আরও বাড়বে বলে তিনি আশাবাদি।”
একটি পরিবারে স্বামী এবং স্ত্রীর অবদান অপরিসীম। যদি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্বামী ও স্ত্রীর সমান অংশগ্রহণ থাকে তাহলে পরিবারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হবে। বাংলাদেশের বিশাল নারী জনগোষ্ঠিকে যদি অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অর্ন্তভ‚ক্ত করা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বর্তমান অর্জনের চেয়ে বেশি হবে বলে ধারণা করা যায়
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)