দুই সুপার ওভারের নজিরবিহীন এক ম্যাচে পাঞ্জাবের জয়


২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা মনে আছে? রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে টাই ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের। অতঃপর সুপার ওভারেও হলো না সুরাহা। শেষতক বাউন্ডারির হিসেব কষে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো ইংল্যান্ডকে।
আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব আর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মধ্যকার ম্যাচটি যেন ছাড়িয়ে গেল বিশ্বকাপের সেই উত্তেজনাকেও। মূল ম্যাচে টাই হলো। অতঃপর সুপার ওভার, তাতেও সুরাহা হলো না। এবার কি তবে বাউন্ডারির হিসেব? না, নতুন নিয়ম অনুযায়ী বিজয়ী দল বের করতে সুপার ওভার হলো আরও একটি।
নজিরবিহীন এক ঘটনার সাক্ষী হলো দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর দুই সুপার ওভারের দ্বিতীয়টি জিতে শেষ হাসি হেসেছে লোকেশ রাহুলের কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ৬ উইকেটে তুলেছিল ১৭৬ রান। কুইন্টন ডি কক ৪৩ বলে ৫৩, হার্দিক পান্ডিয়া ৩০ বলে করেন ৩৪ রান।
তবে মুম্বাইকে লড়াকু পুঁজি এনে দেয়ার পেছনে বড় অবদান ছিল শেষের দিকের দুই ব্যাটসম্যান কাইরন পোলার্ড আর নাথান কল্টার-নাইলের। পোলার্ড মাত্র ১২ বলে ১ চার আর ৪ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। ১২ বলে ৪ বাউন্ডারিতে তার সঙ্গে ২৪ রানে ছিলেন কল্টার নাইল।
জবাবে লোকেশ রাহুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয়ের পথেই ছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। ৫১ বলে ৭ চার আর ৩ ছক্কায় ৭৭ রান করা রাহুল ইনিংসের আড়াই ওভার বাকি থাকতে জাসপ্রিত বুমরাহর শিকার হন। এছাড়া ক্রিস গেইল ২১ বলে ১ চার আর ২ ছক্কায় ২৪ এবং নিকোলাস পুরান ১২ বলে ২টি করে চার ছক্কায় ২৪ রান করেন।
রাহুল যখন আউট হন, ১৫ বলে পাঞ্জাবের দরকার ছিল ২৪ রান, হাতে ৫ উইকেট। শেষ ওভারে ৯ করতে হতো পাঞ্জাবকে। উইকেটে ছিলেন দীপক হুদা (১৩ বলে ২১) আর ক্রিস জর্ডান (৫ বলে ৭)। জয়টা তখনও নাগালে মনে হচ্ছিল।
কিন্তু ট্রেন্ট বোল্টের করা শেষ ওভারে প্রথম বলে হুদা নেন সিঙ্গেলস। দ্বিতীয় বলে জর্ডান বাউন্ডারি হাঁকালেও পরের তিন বলে মাত্র ২ রান নিতে পারেন এই যুগল। শেষ বলে দরকার ছিল ২, তাড়াহুড়ো করে এক রান নিতে পারলেও দ্বিতীয় রানের সময় রানআউট হয়ে যান জর্ডান। ফলে টাই হয় ম্যাচ, গড়ায় সুপার ওভারে।
প্রথম সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাটিং পাঞ্জাবের। মুম্বাইয়ের হয়ে বোলিংয়ে আসেন জাসপ্রিত বুমরাহ। নিকোলাস পুরানকে নিয়ে ওপেনিংয়ে নামেন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। কিন্তু ওভারের দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে যান পুরান। শেষ পর্যন্ত ওই ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৫ রান করতে পারে পাঞ্জাব।
পাঞ্জাবের হয়ে বোলিংয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ শামি। ব্যাটিংয়ে নামেন মুম্বাইয়ের দুই হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক আর অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিন্তু তারা দুজন শামির ওই ওভারে ৫ রানের বেশি তুলতে পারেননি, শেষ বলে আউট হন ডি কক। ফলে সুপার ওভারও টাই হয়।
নজিরবিহীন ইতিহাস গড়ে দ্বিতীয় সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচ। এবার মুম্বাইয়ের আগে ব্যাটিং, নামেন কাইরন পোলার্ড আর হার্দিক পান্ডিয়া। ক্রিস জর্ডানের করা ওই ওভারে পোলার্ড একটি বাউন্ডারিসহ ৭ রান নিলে ১১ রান তুলতে পারে মুম্বাই। ওভারের চতুর্থ বলে রানআউট হয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া, কিন্তু সূর্যকুমার যাদব স্ট্রাইকই পাননি।
দ্বিতীয় সুপার ওভারে ১২ রান দরকার হয় পাঞ্জাবের। এবার আর ভুল করেনি লোকেশ রাহুলের দল। ক্যারিবীয় হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলকে ওপেনিংয়ে পাঠায় তারা, সঙ্গে ছিলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল।
ট্রেন্ট বোল্টের করা ওভারে প্রথম বলটিই ছিল ফুলটস। গেইল লং অনের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকান। পরের বলে নেন এক রান। তৃতীয় বলে স্ট্রাইক পান আগারওয়াল। আর সেখানে দাঁড়িয়ে টানা দুই বাউন্ডারিতে ম্যাচের সব উত্তেজনা পানি করে দেন ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান।
নজিরবিহীন এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে শেষ হাসি হাসে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। এতে ৯ ম্যাচে তৃতীয় জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকার ছয় নম্বরে উঠে এসেছে রাহুলের দল। সমান ম্যাচে ৬ জয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আগের মতোই আছে দুইয়ে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
