ফিচার, একটা যুগে তারুণ্য
মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি স্থাপনের মিলনস্থল হলো সামাজিক সংগঠন। আর এরূপ একটি সামাজিক সংগঠনের নাম হলো “তারুণ্য”। নিজ ব্যক্তিত্ত্বের বিকাশ, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও কর্মদক্ষতার সুযোগ তৈরীতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে এ সংগঠনটি। মূলত তারুণ্য একটি স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক ও জনকল্যাণমূলক সংগঠন। সংগঠনটি “অবারিত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত তারুণ্য” স্লোগানকে বুকে ধারণ করে ২০০৯ সালের ২৯ শে জুলাই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পদযাত্রা শুরু করে। তৎকালীন ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ ও বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের বেশকিছু মেধাবী শিক্ষার্থীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে “তারুণ্য” সংগঠন।
ক্যাম্পাসের পরিবেশ নির্মল রাখতে পরিচ্ছন্নতা ও বৃক্ষরোপন অভিযান, অসহায়-দুস্থদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, রক্তদান, শীতবস্ত্র বিতরণ,নিরক্ষর পথশিশুদের অক্ষরজ্ঞান প্রদানসহ বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক দিবস পালনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সংগঠনটি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। একইসাথে সদস্যদের পারস্পরিক সামর্থ্যকে সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মানে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগানো, দেশের যুবসমাজকে স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব সমপন্ন করে গড়ে তোলা, সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় অংশগ্রহণ ও অসহায়-অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগসহ নানাবিধ শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের “তারুণ্য” নামক এ সংগঠনটি। এছাড়াও তারুণ্যের সদস্যসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত দক্ষতা অর্জনের জন্য ক্যাম্পাসে নিয়মিত কুইজ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ক্যারিয়ার বিষয়ক ট্রেনিং পরিচালনা করে থাকে। প্রতিবছর সংগঠনটি ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায়, সদস্যসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব গুণাবলি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তিনদিন ব্যাপি একটি কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। শিক্ষার্থীরা যাতে সাহিত্য চর্চা থেকে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য “তারুণ্য লাইব্রেরী” নামে আরেকটি হেল্প সেন্টার চালু রেখেছে। যেখানে দেশী বিদেশী সহস্রাধিক বইয়ের সমারোহ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যেকোন শিক্ষাবর্ষের ছেলে মেয়েরা এ সংগঠনের সদস্য হতে পারেন। ইতিমধ্যে ইবির এ জনকল্যানমূলক সংগঠনকে অনুকরণ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে একই নামে আরেকটি সংগঠন চালু করেছে। ফলশ্রুতিতে এখন ইবি ও যবিপ্রবির মধ্যে একটা ভালোবাসার মেলবন্ধন তৈরী হয়েছে।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলার কাছে অতি সুপরিচিত নাম হলো “তারুণ্য”। আপনজন যখন রক্তের অভাবে হাসাপাতালের কেবিনে অসহ্য যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছে তখনই একটিমাত্র ফোন কলের অপেক্ষায় থাকে তারুণ্য। ফোন করলেই সুনির্দিষ্ট স্থানে বিনামূল্যে রক্ত পৌঁছে দিবে। তারুণ্য বছরে পাঁচ শতাধিকের বেশি অসুস্থ মানুষকে রক্ত দিয়ে থাকে ও বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও বন্যার কবলে নিমজ্জিত উত্তর অঞ্চলের মানুষের মাঝেও নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করে । পাশাপাশি প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাতে শীতবস্ত্র বিতরণের আয়োজন করে । শিশুদের মেধা বিকাশের পথেও রেখেছে অসামান্য অবদান। প্রতিবছর ২১ শে ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবসে শিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও তাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ শিশুদের কোমল মনে সুনিবিড় আসন গ্রহণ করেছে তারুণ্য ।
হাঁটিহাঁটি পা পা করে সংগঠনটি ১২ বছরে পদার্পণ করলো। এতটা সময় অতিক্রমের পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অসামান্য অবদান ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলী নিয়ে গঠিত তারুণ্যের উপদেষ্টা পরিষদ। সংগঠনটির কার্যপরিচালনার নিমিত্তে যে ব্যয় হয়ে থাকে সেটা তারুণ্যের সদস্যদের মধ্যে থেকে প্রতিমাসে নির্ধারিত চাঁদা সংগ্রহের মাধ্যমে উপার্জিত হয়ে থাকে। প্রতিবছর জুন মাসে তারুণ্যের বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে গণতান্ত্রিক পন্থায় নেতৃত্ব নির্বাচনে রোল মডেল এ সংগঠনটি। আজ এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তারুণ্যের প্রধান উপদেষ্টা আইন অনুষদের সাবেক ডিন ও আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.শাহজাহান মন্ডল বলেন,” মানুষের যে পাঁচটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে সেগুলো পূরণ ও সহায়সম্বলহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তারুণ্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি তারুণ্যের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি”।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)