ঘরের অভাবে ১১ বছর ধরে গোয়াল ঘরে বিধবা পারভিনা!
পারভিনা খাতুনের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান মারা গেছেন ১১ বছর আগে। স্বামী মারা যাওয়ার পর আর শ্বশুর বাড়ি ঠাই হয়নি পারভিনা খাতুন ও তার অবুঝ দুই শিশুর। এই ১১ বছর ধরে ছোট দুই ছেলে তুষার ও ইমরানকে নিয়ে তিনি বসবাস করছেন বাবার বাড়িতে। তবে বাবার ঘরের স্বল্পতার কারণে তার জায়গা হয়েছে গোয়াল ঘরে। একপাশে গরু ও অন্য পাশে একটি খাট দিয়ে ১১ বছর যাবৎ তিনি ওই গোয়াল ঘরে বসবাস করছেন।
সোমবার সকালে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে পারভিনা খাতুনের বাবা মৃত আফজাল সরদারের বাড়ি যেয়ে ওই করুণ দৃশ্য দেখা যায়।
এ সময় পারভিনা খাতুন বলেন, জায়গা জমি বিক্রি করে ১১ বছর আগে আমার স্বামী তালার জয়নগর ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান বিদেশে পাড়ি জমান। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পর দূর্ঘটনায় মারা যায় আমার স্বামী। এরপর আমার জায়গা হয়নি শ্বশুর বাড়ীতে। স্বামী মারা যাওয়ার পর আমাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। সেই হতে ছেলেদের নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকি। আমার বড় ছেলে তুষার(১৬) সংসারের অভাব ঘুচাতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজ করে মুদি দোকানে। আর ছোট ছেলে ইমরান(১৩) স্থানীয় একটি স্কুলে লেখাপড়া করছে।
পারভিনা খাতুন আরও বলেন, আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে কোন রকম মাঠে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এক পাশে গরু আর এক পাশে আমি থাকি। আমার কপাল এতোটাই খারাপ যে একটি বিধবা ভাতার কার্ডও জোটেনি আমার কপালে। বাবার বাড়িতে থাকার কোন ঘর না থাকায় ১১ বছর ধরে আমি গোয়াল ঘরে বসবাস করছি।
অনেকে এসেছেন, দেখেছেন আমার দূরাবস্থা। অনেকে কথাও দিয়েছিলেন। তবে বাস্তবে কেউ এখনও আমার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ঘর দেওয়ার কথা বল্লেও এখন কেও কথা রাখেননি।
পারভিনা খাতুনের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের নিজেদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের বোনের জন্য ঘর করার জায়গা থাকলেও আমরা তাকে ঘর করে দিতে পারিনি। সরকার অনেককে ঘর দিচ্ছে। আমার বোনও একটি সরকারী ঘর পাওয়ার যোগ্য। সে যেন সরকারি ভাবে একটি থাকার ঘর পায় সেজন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।
ধানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আমার সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
তালা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওবায়দুল হক বলেন, ইউএনও মহোদয় বরাবর আবেদন করলে আমরা পরবর্তীতে তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)